মুখ্যমন্ত্রী বীরভদ্র সিংহ
সঙ্কটমোচন মন্দিরে তখন আয়োজন চলছিল ছোট মেয়ে মীনাক্ষীর বিয়ের। তদারকিতে ব্যস্ত বাবা তথা হিমাচল প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী বীরভদ্র সিংহ। আচমকাই এল সঙ্কটে পড়ার খবরটা। সিবিআই তল্লাশি চালাচ্ছে বাড়িতে! শুধু শিমলার বাড়িতেই নয়, দিল্লির বাড়ি-সহ আরও একাধিক জায়গায়।
খনি বণ্টনে ৪৫ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ তুলে গত কালই বিজেপি শাসিত রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা রাজের বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্তের দাবি তুলেছিল কংগ্রেস। রাত পোহাতেই কংগ্রেস শাসিত রাজ্য হিমাচলের মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে তল্লাশি চালালো সিবিআই! তা-ও আবার মেয়ের বিয়ে চলাকালীনই! স্থানীয় সঙ্কটমোচন মন্দিরে এক প্রকার অনাড়ম্বর ভাবেই ছোট মেয়ের বিয়ের ব্যবস্থা করেছিলেন বীরভদ্র। সেখানেই মুখ্যমন্ত্রী খবর পান তাঁর বিরুদ্ধে আয়ের অতিরিক্ত সম্পত্তির মামলা দায়ের করে শিমলা ও দিল্লির বাড়ি-সহ ১১টি ঠিকানায় তল্লাশি চালাচ্ছে সিবিআই।
বসুন্ধরার ইস্তফা চেয়ে কংগ্রেস গত কাল যতটা সুর চড়িয়েছিল, আজ তার থেকেও গলা তুলে হিমাচলের মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে বীরভদ্রের ইস্তফা দাবি করেছে বিজেপি। যদিও কংগ্রেস হাইকম্যান্ড আজ বুঝিয়ে দিয়েছেন, বীরভদ্রের পাশেই রয়েছেন তাঁরা। সেই বার্তা দিতে দলের তরফে সাংবাদিক বৈঠক করে রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা গুলাম নবি আজাদ বলেন, ‘‘প্রতিহিংসার রাজনীতি করছে মোদী সরকার। এই রাজনীতি একেবারেই নরেন্দ্র মোদী সরকারের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য! দেশে যেন স্বৈরাচারী শাসন শুরু হয়ে গেছে! বড় কথা হল মেয়ের বিয়ের দিনে তল্লাশি চালানোর মতো অমানবিক কাজ অতীতে হয়নি!’’
হিমাচলের মুখ্যমন্ত্রী বীরভদ্র সিংহের বিরুদ্ধে আগেই প্রাথমিক তদন্ত শুরু করেছিল সিবিআই। তার ভিত্তিতেই আজ বীরভদ্র, তাঁর স্ত্রী প্রতিভা সিংহ, ছেলে বিক্রমাদিত্য, মেয়ে অপরাজিতা এবং এলআইসি-র দুই এজেন্টের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন আইনের আওতায় মামলা দায়ের করে সিবিআই। সেই সঙ্গে তল্লাশি অভিযান চালায় বীরভদ্রের ১১টি ঠিকানায়।
চলছে সিবিআই তল্লাশি। পিটিআইয়ের তোলা ছবি।
বীরভদ্রের বিরুদ্ধে মূল অভিযোগ হল, ২০০৯-১০ আর্থিক বছর থেকে শুরু করে পরের দুই আর্থিক বছরে তাঁর আয় আচমকাই বেড়ে যায়। আয়কর রিটার্নে তা প্রতিফলিতও হয়। বীরভদ্র সে সময় কেন্দ্রে ইস্পাত মন্ত্রী। সিবিআই সূত্রের বক্তব্য, বীরভদ্র বরাবরই তাঁর আয়কর রিটার্নে দেখাতেন যে আপেল চাষ থেকে তার নিয়মিত বহু লক্ষ টাকা আয় হয়। কিন্তু সেই আয়ই দুম করে কোটিতে পৌঁছে যায়! কেন্দ্রে ইস্পাত মন্ত্রী থাকাকালীন ৬.১ কোটি টাকা প্রিমিয়াম দিয়ে একটি জীবন বিমাও করেছিলেন বীরভদ্র। দেখা যাচ্ছে, ওই ৬ কোটি টাকা তাঁর আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। কেন্দ্রে ইউপিএ সরকার থাকাকালীনই এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের দৃষ্টি আকর্ষণ করে চিঠি দিয়েছিলেন রাজ্যসভার তৎকালীন বিরোধী দলনেতা অরুণ জেটলি। হিমাচলের বিজেপি নেতা তথা কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জে পি নড্ডা আজ বলেন, ‘‘হিমাচলের কংগ্রেস সরকার হল দুর্নীতির আঁতুরঘর। এটা হওয়ারই ছিল। বীরভদ্রের উচিত এখনই ইস্তফা দেওয়া।’’ অতীতে বীরভদ্র ও তাঁর স্ত্রীর একটি সিডি প্রকাশ করে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছিল বিজেপি। বীরভদ্রের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আদালতেও একটি জনস্বার্থ মামলা ঝুলছে।
তবে কংগ্রেস নেতারা ঘরোয়া আলোচনায় আজ শিমলার ঘটনাকে জুড়তে চান জয়পুরের সঙ্গে। তাঁদের দাবি, বসুন্ধরা রাজের বিরুদ্ধে কংগ্রেস দুর্নীতির অভিযোগ তোলার জন্যই বীরভদ্রের বাড়িতে এই সিবিআই তল্লাশি হল। এটা মোটেই কাকতালীয় নয়। না হলে দুর্নীতির অভিযোগের যে বহর, তাতে মেয়ের বিয়ের দিনই মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে তল্লাশি চালানোর মতো কোনও জরুরি অবস্থা ছিল না। বীরভদ্রের শিমলার বাড়িতে আজ দুপুরে বিবাহ অনুষ্ঠানের জন্য বেছে বেছে স্থানীয় কিছু নেতা ও আমলাকে নিমন্ত্রণ করা হয়েছিল। মধ্যাহ্নভোজের জন্য তাঁরা যখন সেখানে পৌঁছন, তখনও সিবিআইয়ের তল্লাশি চলছে! স্বাভাবিক ভাবেই বিয়ের অনুষ্ঠানের আবহ পণ্ড হয়ে যায়। আজ সেই প্রসঙ্গ তুলে গুলাম নবি বলেন, ‘‘বিজেপি নেতারা মনে করছেন, এই প্রতিহিংসার রাজনীতি দিয়ে বিরোধীদের চুপ করিয়ে দিতে ছাড়বেন। কিন্তু এই রাজনীতি উল্টে কংগ্রেসের জেদ বাড়িয়ে দিচ্ছে। ৪৫ হাজার কোটি টাকা দুর্নীতির জন্য এ বার গদি ছাড়তে হবে বসুন্ধরাকে। কংগ্রেসের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা সাজিয়ে সে দিক থেকে মুখ ঘোরানো যাবে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy