Advertisement
E-Paper

‘জানি ক্যানসার হয়েছে, ৬ মাস বাঁচব, বাবা-মাকে বলবেন না প্লিজ’! খুদের কাতর আর্জি ডাক্তারকে

চিকিৎসককে অনুরোধ করে দম্পতি বলেন, “ডাক্তারবাবু, আমার ছেলে মনু। বাইরে অপেক্ষা করছে। ওর ক্যানসার হয়েছে। কিন্তু আমরা ওকে জানাইনি। দয়া করে আপনি ওকে এ বিষয়ে কিছু বলবেন না।”

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০২৩ ১৩:১৩
মনুকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি রাখতে পারেননি চিকিৎসক। গোটা বিষয়টি তার বাবা-মাকে জানিয়েছিলেন। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

মনুকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি রাখতে পারেননি চিকিৎসক। গোটা বিষয়টি তার বাবা-মাকে জানিয়েছিলেন। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

হাসপাতালে ঢোকার মুখে এক দম্পতিকে দেখে দাঁড়িয়ে যান চিকিৎসক। আট মাস আগে তাঁর কাছেই এসেছিলেন ওই দম্পতি। সঙ্গে তাঁদের ৬ বছরের ছেলে। তারই চিকিৎসার জন্য এসেছিলেন তাঁরা। দম্পতির মুখ চেনা চেনা ঠেকতেই, চিকিৎসকের প্রশ্ন, “মনু কেমন আছে?” পরের উত্তরের জন্য একেবারেই প্রস্তুত ছিলেন না চিকিৎসক সুধীর কুমার। দম্পতি বলেন, “আজ এক মাস হল ও আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছে।” মন ভারাক্রান্ত হয়ে গিয়েছিল চিকিৎসকের। কী বলবেন, ভাষা খুঁজে পাচ্ছিলেন না। চুপ করে হাসপাতালের ভিতরে ঢুকে যান। অশ্রুসজল চোখে হাসপাতাল ছাড়েন দম্পতিও।

মনু, ওই দম্পতির একমাত্র সন্তান। ক্যানসারে ভুগছিল। আট মাস আগে হায়দরাবাদের একটি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ছেলেকে নিয়ে এসেছিলেন দম্পতি। মনুর চিকিৎসার ভার পড়ে চিকিৎসক সুধীর কুমারের উপর। দম্পতি চিকিৎসককে অনুরোধ করে বলেন, “ডাক্তারবাবু, আমার ছেলে মনু। বাইরে অপেক্ষা করছে। ওর ক্যানসার হয়েছে। কিন্তু আমরা ওকে জানাইনি। দয়া করে আপনি ওকে এ বিষয়ে কিছু বলবেন না।” চিকিৎসক তাঁদের আশ্বস্ত করেন যে, তিনি এ বিষয়ে কিছুই জানাবেন না।

চিকিৎসকের নজর পড়ে মনুর দিকে। শীর্ণকায় একটি ছেলে হুইলচেয়ারে বসে। মুখে স্মিত হাসি। চোখেমুখে আত্মবিশ্বাসের ছাপ। চিকিৎসক ওকে ঘরের ভিতরে নিয়ে যান। মনুর শারীরিক পরীক্ষা শেষে তার বাবা-মাকে বাইরে দাঁড়াতে বলেন। বাবা-মা ঘর ছাড়তেই মনু আচমকা চিকিৎসকের কাছে একটি আর্জি জানায়। সে বলে, “ডাক্তারবাবু আমার কী হয়েছে, সব জানি। ইন্টারনেট ঘেঁটে আমার রোগ সম্পর্কে জানতে পেরেছি। এটাও জানতে পেরেছি, আমার আয়ু আর ৬ মাস। কিন্তু এ কথা মা-বাবাকে আমি জানাইনি। আপনিও জানাবেন না, প্লিজ।” ছোট্ট ছেলেটির মুখে এমন আর্জি শুনে চিকিৎসক থমকে গিয়েছিলেন।

কিন্তু চিকিৎসক মনুকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি রাখতে পারেননি। গোটা বিষয়টি তার বাবা-মাকে জানিয়েছিলেন। তাঁর কথায়, “ওর বাবা-মাকে এটা জানানো প্রয়োজন ছিল। যেটুকু সময় হাতে আছে, মনুকে তাঁরা ওই সময়টুকু দিক।” তাঁদের ছেলে গোটা বিষয়টি জানে এবং কত দিন তাঁর আয়ু সেটাও জানে, মনুর বাবা-মা এ কথা চিকিৎসকের মুখ থেকে শোনার পর কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন।

তার পর কেটে গিয়েছে আট মাস। ৯ মাসের মাথায় মনুর বাবা-মা আবার এসে হাজির হাসপাতালে। চিকিৎসক সুধীর কুমারের সঙ্গে দেখা করতে। তবে এ বার আর মনু ছিল না তাঁদের সঙ্গে। হাসপাতালে চিকিৎসকের ঘরের সামনে দাঁড়িয়েছিলেন মনুর বাবা-মা। ঘরে ঢোকার মুখে দম্পতিকে দেখে চিকিৎসকের চেনা চেনা ঠেকেছিল। তাঁদের পাশে একনজর মনুকে খোঁজেন চিকিৎসক।

দেখতে না পেয়ে জিজ্ঞাসা করেন, “আপনারা মনুর বাবা-মা না? মনু কোথায়?” তখন তাঁরা বলেন, “ডাক্তারবাবু, আপনার কাছে আসার পর মনুর সঙ্গে আমরা বেশ ভাল সময় কাটিয়েছি। ও ডিজ়নিল্যান্ড দেখতে চেয়েছিল। চাকরিতে সাময়িক ছুটি নিয়ে ওকে নিয়ে সেখানে যাই। কিন্তু গত মাসেই ও আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছে। আজ আপনাকে কৃতজ্ঞতা জানাতে এসেছি। মনুকে গত আট মাস আমাদের মাঝে বাঁচিয়ে রাখার জন্য।”

চিকিৎসক এ বারও কিছু বলতে পারলেন না। শুধু দম্পতির মুখের দিকে একঝলক তাকিয়ে নিঃশব্দে ঘরে ঢুকে যান। চিকিৎসক নিজেই এই গোটা ঘটনার কথা টুইটারে জানিয়েছেন।

Cancer hyderabad child
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy