E-Paper

তথ্য ‘অস্বাভাবিক’, কমিশনের বিশেষ নজরে আট এলাকা

বহু বুথে একজনও অনুপস্থিত, ঠিকানাবদল, মৃত এবং ডুপ্লিকেট (কমিশনের ভাষায় এএসডিডি) ভোটারকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। চাপ দেওয়ায় রাতারাতি এই তথ্যের সম্পূর্ণ বদল ঘটেছে। আবার অনেক বুথে একজনও ভোটার নেই, যাঁর নিজের বা পারিবারিক সম্পর্কের মিল রয়েছে ২০০২ সালের এসআইআর-তালিকায়।

চন্দ্রপ্রভ ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৭:৪১

—প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।

বিহারের পরেই যে এ রাজ্যে এসআইআর হবে, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ ছিল না। ঘটনাচক্রে, বিহার-এসআইআর ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই এ রাজ্যের নতুন ভোটারের আবেদন এক লাফে বেড়েছিল প্রায় সাড়ে চার গুণ। তার মধ্যে সীমান্তবর্তী-সহ বেশ কয়েকটি এলাকায় এমন বৃদ্ধি ছিল প্রায় একই হারে। এ রাজ্যে এসআইআরের প্রথম পর্ব শেষ হওয়ার আগেই বিস্ময়কর কিছু তথ্যের কারণে ওঠা গরমিলের অভিযোগ এখন অন্তত আটটি এলাকাকে আলাদা করে কমিশনের আতসকাচের তলায় এনে দিয়েছে। দেখা হচ্ছে ভোটার-বৃদ্ধির আগের সেই তথ্যও। কমিশন সূত্রের খবর, এখন তাদের বিশেষ নজরে রয়েছে উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, কোচবিহার, মালদহ, মুর্শিদাবাদ, উত্তর দিনাজপুর। এর সঙ্গে রয়েছে আসানসোল এবং হাওড়া-হুগলির একাংশও।

কেন নজর?

বহু বুথে একজনও অনুপস্থিত, ঠিকানাবদল, মৃত এবং ডুপ্লিকেট (কমিশনের ভাষায় এএসডিডি) ভোটারকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। চাপ দেওয়ায় রাতারাতি এই তথ্যের সম্পূর্ণ বদল ঘটেছে। আবার অনেক বুথে একজনও ভোটার নেই, যাঁর নিজের বা পারিবারিক সম্পর্কের মিল রয়েছে ২০০২ সালের এসআইআর-তালিকায়। দু’টি বিষয়ই স্বাভাবিক নয় বলে দাবি কমিশনের। ফলে বিহার এসআইআরের পরেই আবেদনের হিড়িকের সঙ্গে এই ঘটনাগুলির কোনও সম্পর্কে রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কমিশন সূত্রের খবর, এই জায়গাগুলির পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে রোল-পর্যবেক্ষকদের।

গত জুন মাসে বিহারে এসআইআর ঘোষণা হয়েছিল। কমিশনের তথ্য বলছে, ১ জুন থেকে ৭ অগস্টের মধ্যে গোটা রাজ্যে নতুন ভোটার-আবেদন জমা পড়েছিল প্রায় ১০.০৪ লক্ষ। শুধু আটটি সীমান্তবর্তী জেলা মিলিয়ে সেই সংখ্যা ছিল অর্ধেক, প্রায় ৫.৮৩ লক্ষ। অথচ তার আগের প্রায় তিন মাসে (১ মার্চ থেকে ৩১ মে) গোটা রাজ্যে আবেদনের সংখ্যা ছিল ২.৩৩ লক্ষ এবং সীমান্তবর্তী জেলাগুলিতে তা ১.২৯ লক্ষ। ওই দুই সময়ে উত্তর ২৪ পরগনায় আবেদনের সংখ্যা প্রায় ২৮ হাজার থেকে বেড়ে হয় ১.৩৭ লক্ষ। দক্ষিণ ২৪ পরগনায় প্রায় ২২ হাজার থেকে আবেদন-সংখ্যা বেড়ে হয় ৯৫ হাজার। ১১ হাজার থেকে ৪৫ হাজারে পৌঁছয় কোচবিহারের আবেদন। ১৫ হাজার থেকে বেড়ে ৫৭ হাজার হয় উত্তর দিনাজপুরে। মালদহে ১৬ হাজার থেকে বেড়ে ৬৪ হাজার এবং মুর্শিদাবাদে তা সাড়ে ১৬ হাজার থেকে বেড়ে হয় ৯৪ হাজার।

আবার গত সোমবার জেলা প্রশাসনগুলি দাবি করেছিল, ২২০৮টি বুথে একজনও এসডিডি-ভোটার নেই। তার মধ্যে দক্ষিণ ২৪ পরগনাতেই ছিল এমন ৭৬০টি বুথ। মুর্শিদাবাদে তা ২২৬, মালদহে ২১৬, হাওড়া-হুগলিতে যথাক্রমে ৯৪ এবং ৫৪। আবার প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার বুথে এএসডিডি-ভোটারের সংখ্যা ১ থেকে ১০ জনের মধ্যে। রোল-পর্যবেক্ষকদের মাধ্যমে কমিশন যখন অনুসন্ধান শুরু করে, তখন ৩ ডিসেম্বর ২২০৮টি বুথ কমে দাঁড়ায় ২৯-এ। বৃহস্পতিবার তা আরও কমে হয় ৭। দেখা যায়, শীর্ষে থাকা দক্ষিণ ২৪ পরগনায় এমন বুথের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে মাত্র একটিতে। সমান্তরালে দুই ২৪ পরগনা, মালদহ, উত্তর দিনাজপুরে যে এলাকাগুলিতে একজনও অথবা বেশিরভাগ ভোটারের তথ্য ২০০২ সালের এসআইআর-তালিকায় পাওয়া যায়নি, সেগুলি খতিয়ে দেখা শুরু করেছেন পর্যবেক্ষকেরা।

প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবারই মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের কার্যালয় লিখিত ভাবে বিএলও-দের জানিয়েছে, ১১ ডিসেম্বরের মধ্যে সব ত্রুটি সংশোধন করতে হবে। ইচ্ছাকৃত কোনও ভুল দেখা গেলে ডেপুটেশনে থাকা বিএলও-দের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশন আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে। আবার এএসডিডি-ভোটারদের জন্য কমিশনের নির্দিষ্ট শংসাপত্রে বিএলও-দের পাশাপাশি বিএলও সুপারভাইজ়ার এবং রাজনৈতিক দলগুলির বুথ লেভল এজেন্টদেরও সই করতে হবে। অর্থাৎ, তাতে এঁরা সকলেই আইনত দায়বদ্ধ থাকবেন।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Special Intensive Revision Election Commission of India West Bengal government

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy