ভারত এবং রাশিয়াকে চিনের অন্ধকারে হারিয়ে ফেলেছেন বলে শুক্রবারই সমাজমাধ্যমে পোস্ট করেছিলেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিন দেশকে একসঙ্গে উন্নত ভবিষ্যতের জন্য শুভেচ্ছাও জানিয়েছিলেন। কিন্তু কয়েক ঘণ্টার মধ্যে মত বদলে গেল তাঁর। ভারতকে হারাননি বলে জানিয়ে দিলেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে তাঁর সুসম্পর্কের উল্লেখও করলেন। সেই সঙ্গে বার্তা দিলেন ভারতের পণ্যে আরোপিত মার্কিন শুল্ক নিয়ে।
হোয়াইট হাউসে একটি সাংবাদিক বৈঠকে ভারত-চিন-রাশিয়া পোস্ট নিয়ে ট্রাম্পকে প্রশ্ন করা হয়েছিল। ভারতের সংবাদ সংস্থা তাঁকে জিজ্ঞাসা করেছিল, চিনের কাছে ভারতকে হারিয়ে ফেলার জন্য তিনি কাকে দায়ী করেন? সংবাদ সংস্থা এএনআইয়ের এই প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘‘আমার মনে হয় না হারিয়ে ফেলেছি। ভারত এত তেল রাশিয়ার কাছ থেকে কিনছে, এতে আমি খুব হতাশ। সেটা ওদের জানিয়েছি। ভারতের উপর আমরা খুব বড় একটা শুল্ক আরোপ করেছি— ৫০ শতাংশ। এটা খুবই চড়া শুল্ক। মোদীর সঙ্গে আমার সম্পর্ক খুব ভাল, আপনারা তো সেটা জানেন। মাস দুয়েক আগেই উনি এখানে এসেছিলেন। এমনকি, আমরা রোজ় গার্ডেনে গিয়ে সাংবাদিক বৈঠকও করেছিলাম।’’
ভারতের সঙ্গে এই মুহূর্তে সম্পর্ক মেরামত করতে প্রস্তুত? ট্রাম্প বলেন, ‘‘আমি সব সময়েই প্রস্তুত। সব সময় আমি মোদীর বন্ধু থাকব। উনি খুব ভাল প্রধানমন্ত্রী। বন্ধুত্ব সব সময় থাকবে, শুধু এই মুহূর্তে উনি যা করছেন, সেটা আমার ভাল লাগছে না। তবে ভারত এবং আমেরিকার মধ্যে বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে। ভয় পাওয়ার কিছু নেই।’’ ভারত-সহ এখনও যে সমস্ত দেশের সঙ্গে আমেরিকার বাণিজ্য নিয়ে সমঝোতা হয়নি, তাদের সঙ্গে ভাল ভাবেই কথাবার্তা চলছে বলে দাবি করেছেন ট্রাম্প। সম্প্রতি গুগ্লকে জরিমানা করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। ট্রাম্প তা নিয়ে কিছুটা অসন্তোষ প্রকাশ করেন।
আরও পড়ুন:
সম্প্রতি এসসিও সম্মেলনে যোগ দিতে চিনে গিয়েছিলেন মোদী। সেখানে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গেও তাঁর সাক্ষাৎ হয়। আলাদা করে জিনপিং এবং পুতিনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। শুরু থেকেই তিন রাষ্ট্রপ্রধানের এই ঘনিষ্ঠতাকে কটাক্ষ করে আসছিলেন ট্রাম্প। শুক্রবার তিনি এই তিন জনের এসসিও সম্মেলনের একটি ছবি পোস্ট করেন। তাতে লেখেন শুধু দু’টি লাইন, ‘‘মনে হচ্ছে, আমরা ভারত আর রাশিয়াকে গভীরতম, অন্ধকারতম চিনের কাছে হারিয়ে ফেলেছি। ওদের ভবিষ্যৎ দীর্ঘ ও সমৃদ্ধ হোক, এই কামনা করি।’’
ট্রাম্পের এই বক্তব্য নিয়ে শুক্রবার কোনও মন্তব্য করতে চাননি ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল। তিনি কেবল জানিয়ে দেন, আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্যিক বিষয়গুলি নিয়ে ভারত যোগাযোগ রেখে চলেছে। শুক্রবারই ট্রাম্পের পোস্টের আগে আমেরিকার বাণিজ্য ও উৎপাদন বিষয়ক সিনিয়র কাউন্সেলর পিটার নাভারো ভারতের সঙ্গে সমস্যাগুলির ‘ইতিবাচক’ সমাধানের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, ‘‘ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধকে ভারত অর্থ দিয়ে সাহায্য করে চলেছে, এর জন্য আমাদের প্রেসিডেন্ট হতাশ। কিন্তু আশা করা যায়, এটা গণতান্ত্রিক সমস্যা এবং আগামী দিনে আমরা ইতিবাচক সমাধান পাব।’’
ভারতের পণ্যে ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের পর থেকেই আমেরিকার সঙ্গে সম্পর্কে শৈত্য বেড়ে গিয়েছিল। ধাক্কা খেয়েছে দুই দেশের বাণিজ্যও। ট্রাম্পের এই পোস্টের পর তাই জল্পনা শুরু হয়, ভারত এবং আমেরিকার সম্পর্ক বুঝি এমন পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে, যেখান থেকে আর মেরামত সম্ভব নয়। কিন্তু কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই উল্টো কথা বললেন ট্রাম্প। ভারত সম্পর্কে নিজের অবস্থান বদলে বলে ফেললেন, ভারতকে হারিয়েছেন বলে মনেই করেন না! তবে একই সঙ্গে ভারতের চড়া শুল্ক, রাশিয়ার কাছ থেকে তেল আমদানি নিয়েও হতাশা ব্যক্ত করেছেন তিনি। এ বিষয়ে ভারতের অবস্থানও প্রথম থেকে স্পষ্ট, আন্তর্জাতিক বাজারদর এবং জাতীয় স্বার্থের কথা মাথায় রেখে নয়াদিল্লি বাণিজ্য নীতি স্থির করে থাকে এবং আগামী দিনেও তা করবে।