Advertisement
E-Paper

রাশিয়ার কাছ থেকে আর তেল কিনবে না ভারত, আশ্বস্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী! দাবি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের

বুধবার হোয়াইট হাউসে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে ট্রাম্প বলেন, “উনি (মোদী) আমায় আজ আশ্বাস দিয়েছেন যে, রাশিয়া থেকে তাঁরা আর তেল কিনবেন না। আমরা চাই চিনও একই পথে হাঁটুক।”

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০২৫ ০৮:০৭
(বাঁ দিকে) নরেন্দ্র মোদী এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প (ডান দিকে)।

(বাঁ দিকে) নরেন্দ্র মোদী এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।

রাশিয়ার তেল কেনা বন্ধ করে দেবে ভারত! বুধবার নাকি এই মর্মে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে আশ্বস্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এমনটা দাবি করেছেন ট্রাম্পই। ভারতের তরফে এখনও অবশ্য এই বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে কিছু জানানো হয়নি। ট্রাম্পের দাবির সত্যাসত্য নিয়েও এখনও কিছু জানায়নি নয়াদিল্লি। প্রসঙ্গত, রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের আবহে মস্কো থেকে তেল কেনা অব্যাহত রাখার জন্য ভারতীয় পণ্যের উপর জরিমানা বাবদ অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ (মোট ৫০ শতাংশ) শুল্ক চাপিয়েছেন ট্রাম্প। এই আবহে ট্রাম্পের এই দাবি ঘিরে শোরগোল পড়ে গিয়েছে।

বুধবার হোয়াইট হাউসে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে ট্রাম্প বলেন, “উনি (মোদী) আমায় আজ আশ্বাস দিয়েছেন যে, রাশিয়া থেকে তাঁরা আর তেল কিনবেন না। আমরা চাই চিনও একই পথে হাঁটুক।” রাশিয়া থেকে তেল কেনার জন্য তিনি যে ভারতের উপর অসন্তুষ্ট ছিলেন, তা-ও জানিয়েছেন ট্রাম্প।” ভারত আমেরিকার নির্ভরযোগ্য সঙ্গী কি না, ট্রাম্পের কাছে তা জানতে চাওয়া হয়েছিল। জবাবে ট্রাম্প বলেন, “উনি (মোদী) আমার বন্ধু। আমাদের মধ্যে দারুণ সম্পর্ক রয়েছে।”

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরেই ভ্লাদিমির পুতিনের দেশকে ‘ভাতে মারার’ কৌশল নিয়েছিল আমেরিকা এবং পশ্চিমের অন্য দেশগুলি। তার পরেই রাশিয়ার তেল আমদানির উপর বিধিনিষেধ জারি হয়। তেল বিক্রির পরিমাণ অব্যাহত রাখতে বিশেষ ছাড় দেওয়ার কথা জানায় মস্কোও। এই পরিস্থিতিতে রাশিয়ার কাছ থেকে সস্তায় অশোধিত তেল কেনার পরিমাণ বৃদ্ধি করতে থাকে ভারত। গত কয়েক বছরে ০.২ শতাংশ থেকে ভারতে রুশ তেল আমদানির পরিমাণ বেড়ে হয়েছে ৩৫ শতাংশ। বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম তেল আমদানিকারক দেশ ভারত। রাশিয়ার তেলের অন্যতম বড় ক্রেতা এখন তারাই (আমদানি করা রুশ তেলের পরিমাণের নিরিখে চিনের পরেই ভারত)। আমেরিকা অবশ্য মনে করে, তেল বিক্রির টাকা ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে কাজে লাগাচ্ছে রাশিয়া। তাই যে কোনও উপায়ে এই তেল বিক্রি রুখতে সচেষ্ট ওয়াশিংটন। ট্রাম্প যেমন এ ক্ষেত্রে অস্ত্র করেছেন তার শুল্কনীতিকে।

এহ বাহ্য যে, সোভিয়েত আমল থেকেই মস্কোর সঙ্গে নয়াদিল্লির সম্পর্ক যথেষ্ট মজবুত। ঠান্ডা যুদ্ধের আমলেও দ্বিমেরুকৃত বিশ্বে বহু ঘটনায় ভারতের পাশে দাঁড়িয়েছে তারা। সোভিয়েট ভেঙে যাওয়ার পরেও, এমনকি পুতিনের আমলেও রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক অটুটই থেকেছে। তেল আমদানি নিয়ে মার্কিন চাপের মুখে এর আগে ভারত বহু বার জানিয়েছে, জাতীয় স্বার্থের কথা মাথায় রেখেই সিদ্ধান্ত নেবে তারা। ট্রাম্প ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করার পরেও রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনা অব্যাহত রেখে গিয়েছে নয়াদিল্লি। ট্রাম্প রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করতেও উদ্যোগী হয়েছিলেন। এই লক্ষ্যে অগস্টে আমেরিকার আলাস্কায় পুতিনের সঙ্গে বৈঠকও করেছিলেন। নরমে-গরমে রাশিয়ার উপর চাপ বৃদ্ধি করলেও ইউক্রেনে যুদ্ধ থামেনি। যুদ্ধ না-থামাতে পারার ‘হতাশা’ থেকেই ট্রাম্প রাশিয়ার তেল বিক্রিতে কোপ ফেলতে চাইছেন কি না, তা নিয়ে আগেই প্রশ্ন উঠেছিল।

রাশিয়া থেকে তেল আমদানি বৃদ্ধির আগে ভারত এই ব্যাপারে মূলত পশ্চিম এশিয়ার উপর নির্ভরশীল ছিল। ট্রাম্পের দাবি যদি সত্য হয়, তা হলে ভারতকে তখন তেলের চাহিদা মেটাতে আগের মতোই পশ্চিম এশিয়ায় ফিরে যেতে হবে। ইরাক, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি ছাড়াও ভারত তেল কিনতে পারে আমেরিকার কাছ থেকে। নতুন দেশ হিসাবে তালিকায় ব্রাজ়িলকে যোগ করা যেতে পারে। তবে প্রতি ক্ষেত্রেই বর্তমানের চেয়ে অনেক বেশি খরচ করতে হবে। ‘ইকোনমিক টাইম্‌স’-এর রিপোর্ট বলছে, এ ক্ষেত্রে প্রতি ব্যারেলে চার থেকে পাঁচ ডলার (৩৩৬-৪৩৬ টাকা) বেশি খরচ হতে পারে। কারণ রাশিয়ার মতো ছাড় এই দেশগুলি দেবে না। তা ছাড়া, পুতিনের সঙ্গেও মোদীর সম্পর্ক যথেষ্ট মসৃণ। ট্রাম্পের চাপের কাছে ‘নতিস্বীকার’ করে নয়াদিল্লি আদৌ পুতিন এবং বিপদের সঙ্গী রাশিয়াকে চটাতে চাইবে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।

ভারত এবং আমেরিকার মধ্যে শুল্কজট না-কাটায় বাণিজ্যচুক্তি নিয়ে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা কার্যত থমকে গিয়েছে। বাণিজ্যজট কাটাতে বৃহস্পতিবার আমেরিকার সঙ্গে ফের এক দফা আলোচনায় বসতে চলেছে ভারত। তার আগে বাণিজ্যসচিব রাজেশ আগরওয়ালের কথায় ইঙ্গিত মেলে যে, আমেরিকা থেকে তেল কেনা আরও বৃদ্ধি করতে পারে ভারত। ঘটনাচক্রে, বুধবারই ট্রাম্প ওই দাবি করেন। তাই রাশিয়া থেকে তেল আমদানি বন্ধ করে নয়াদিল্লি আমেরিকা থেকে তা আমদানি করার পরিকল্পনা করছে কি না, তা নিয়ে কৌতূহল তৈরি হয়েছে।

Russian Oil Narendra Modi Donald Trump
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy