ছবি: পিটিআই।
এয়ার ফোর্স ওয়ান থেকে শুধু নামার অপেক্ষা। তার পরেই বিমানবন্দর থেকে দীর্ঘ বাইশ কিলোমিটার জুড়ে কোথাও গুজরাতের ডাংগি আদিবাসীদের নাচ, কোথাও মাথার উপর একাধিক হাঁড়ির ভারসাম্য-নৃত্য সহযোগে ঢাকের বাদ্যি। ওই রাস্তার প্রতিটি ল্যাম্পপোস্টে মার্কিন ও ভারতীয় জাতীয় পতাকা। কানায় কানায় পূর্ণ এক লাখ দশ হাজারি মোতেরা স্টেডিয়ামে নরেন্দ্র মোদীর বক্তৃতার সঙ্গে গর্জন। এ ভাবেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে স্বাগত জানাল আমদাবাদ।
আর এই আড়ম্বরের নীচে ছায়ার মতো পড়ে রইল, গত কয়েক দিনের প্রবল ভোগান্তি নিয়ে শহরবাসীর ক্ষোভ। এত হেভিওয়েট অনুষ্ঠান এর আগে কখনও দেখেনি এই শহর। দেখেনি শহরের বিভিন্ন প্রাণকেন্দ্র কিছু রাস্তা পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়ার ফলে বাকি রাস্তায় তৈরি হওয়া যানজট এবং কাজকর্ম ও ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষতি। যার জেরে বিজেপিকে প্রতিবার ভোট দেওয়া জনতাকেও ক্লান্ত স্বরে বলতে শোনা যাচ্ছে, ‘‘ভারত-আমেরিকার সম্পর্কে একটা ধাপ তো এগোনো হল ঠিকই। কিন্তু তাতে আমাদের শহরের কী হল? কাজে কামাই দেওয়া বা এক দিনের লোকসান ছাড়া!’
এ ভাবেই হর্ষে-বিষাদে কেটে গেল ‘নমস্তে ট্রাম্প’-এর যজ্ঞ। সকাল থেকেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে দেখা গেল ট্রাম্প দম্পতিকে স্থানীয় নাচ-গান-পোশাক সম্বন্ধে ব্যাখ্যা করতে। রোড শো-র সময়ে অবশ্য কালো কাঁচে ঢাকা কনভয়ে বোঝা যায়নি মার্কিন প্রেসিডেন্টের প্রতিক্রিয়া। কিন্তু তিনি যে ভিড় পছন্দ করেন সেই ইঙ্গিত তিনি নিজেই দিয়েছিলেন একাধিক বার, ভারতে আসার কয়েক দিন আগে থেকেই। মোতেরার মাঠে যে ভাবে প্রশংসা করলেন সম্মিলিত জনতার, তাতেও বোঝা গেল পরিতৃপ্ত ট্রাম্প। মোদীও বোঝেন ভিড়তন্ত্রের স্নায়ু। প্রথমেই মাইক নিয়ে দর্শকদের উদ্দেশে বললেন, ‘‘আমি যখন বলব ইন্দো-ইউএস ফ্রেন্ডশিপ, আপনারা তখন বলবেন লং লিভ!’’ তাঁর নির্দেশ মাফিক বার কয়েক এই মর্মে গর্জে উঠল স্টেডিয়াম। উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর হয়ে উঠল ট্রাম্পের মুখ। তাঁর বক্তৃতাতেও একাধিকবার আমদাবাদের জনতার প্রশংসাও করতে ভুললেন না তিনি।
আরও পড়ুন: সম্ভ্রম জাগায়, তাজ দেখে বললেন ট্রাম্প
গত কয়েক দিন ধরেই মাঠ ভরানোর জন্য ঝাঁপিয়েছিলেন বিজেপি নেতৃত্ব। সমস্ত স্কুল কলেজ সরকারি কর্মচারীকে তো বটেই, যোগাযোগ করা হয়েছিল গুজরাতের সব ক’টি সম্প্রদায়ের সংগঠনের সঙ্গে। উদ্দেশ্য ছিল, বিভিন্ন রাজ্যের সাংস্কৃতিক চর্চার ছবি ফুটে উঠে যেন এক টুকরো ভারত রচিত হয় রোড শো এবং স্টেডিয়ামে। আর তার জেরে নাভিশ্বাস উঠেছে শহরের। নিরাপত্তার কড়াকড়িতে গোটা এলাকা যেন যুদ্ধক্ষেত্র! গুজরাত সরকারের মন্ত্রী, যাঁরা সরকারি লালবাতি নিয়ে ঘুরে বেড়ান, তাঁদের নিজেদের গাড়ি পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়নি স্টেডিয়ামের ধারে-কাছে। নির্দিষ্ট বাসে গাদাগাদি করে তাঁরা পৌঁছন মোতেরায়।
সাবরমতী আশ্রম-সংলগ্ন আশ্রম রোড এই শহরের প্রাণকেন্দ্র। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকার অফিস, বস্ত্রশিল্পের কার্যালয় থেকে শুরু করে আরও অসংখ্য ছোটবড় বাণিজ্য সংস্থার ডেরা এই এলাকাটি। ট্রাম্পের সাবরমতী দর্শনের ফলে আজ সেখানে অঘোষিত বন্ধ। বাণিজ্যপ্রাণ এই জাতি আর সব কিছু সইতে পারে, কিন্তু কাজে ব্যাঘাত কোনও কারণেই তাঁদের অনুমোদন পায় না। তাই এক সপ্তাহ আগেই আন্তর্জাতিক তথা মার্কিন মানচিত্রে নিজের শহরের নাম চলে আসার গর্বে যাঁদের আটখানা হতে দেখেছি, গত দু’তিন দিন ধরে তাঁরাই ব্যাজারমুখে। এক জন ওলা-চালক যেমন বললেন, ‘‘রাস্তার যে অবস্থা আজ পুরোটা দিনই বসে থাকতে হল ঘরে। সরকার আমাদেরই করের টাকায় ১০০ কোটি খরচ করল আজ। একটি বড়লোক দেশের নেতার তাতে গৌরব বাড়ল। কিন্তু আমাদের উপার্জন বন্ধ থাকল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy