ভারতের উপর ৫০ শতাংশ শুল্ক চাপানোর যৌক্তিকতা নিয়ে এ বার প্রশ্ন উঠল আমেরিকাতেও। ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক-সিদ্ধান্তকে সরাসরি ‘ভারত-মার্কিন সম্পর্কে অন্তর্ঘাত’ বলে দাবি করল আমেরিকার অধুনা বিরোধী দল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি। বুধবার ভারতীয় পণ্যে ট্রাম্প প্রশাসনের ৫০ শতাংশ শুল্ক চাপানোর বিষয়টি আমেরিকার বিদেশ বিষয়ক কমিটিতে আলোচনার জন্য ওঠে। ওই কমিটিতে ট্রাম্পের দল রিপাবলিকান পার্টির পাশাপাশি রয়েছেন বারাক ওবামা, জো বাইডেনদের দল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সদস্যেরাও। তাঁরা ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। পরে এই বিষয়ে একটি বিবৃতি দেন ডেমোক্র্যাটরা।
সমাজমাধ্যমে পোস্ট করা ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “চিন এবং অন্য অনেক দেশ রাশিয়া থেকে আরও বেশি (ভারতের তুলনায়) তেল কেনে। অথচ সেই দেশগুলির উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ না-করে ট্রাম্প শুধু ভারতের উপর শুল্ক আরোপ করেছেন। এর ফলে যেমন আমেরিকাবাসী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, তেমনই ভারত-মার্কিন সম্পর্কে অন্তর্ঘাত করা হচ্ছে।” একই সঙ্গে ডেমোক্র্যাটদের দাবি, ট্রাম্প প্রশাসনের এই আচরণে স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে যে, ইউক্রেনে যুদ্ধ থামানোর জন্য রাশিয়াকে চাপ দিতে হোয়াইট হাউস ব্যর্থ হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় চিনের ‘আগ্রাসন’ রুখতে ভারতের সঙ্গে দীর্ঘ দিন ধরেই আমেরিকার কৌশলগত বোঝাপড়া রয়েছে। ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় বেজিঙের ‘প্রভাব’ যথাসম্ভব কম রাখতে একযোগে কাজ করে ভারত, আমেরিকা, জাপান এবং অষ্ট্রেলিয়ার চতুর্দেশীয় অক্ষ ‘কোয়াড’। কিন্তু ট্রাম্পের শুল্কযুদ্ধ নয়াদিল্লি-ওয়াশিংটন এই বৃহত্তর কৌশলগত অংশীদারিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন অনেকে। সে ক্ষেত্রে বাণিজ্য-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমেরিকার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী চিনকে শুল্কে ছাড় দিয়ে, কৌশলগত ‘মিত্র’ ভারতকে কেন নিশানা করা হচ্ছে, সেই প্রশ্ন উঠছিলই। এ বার আরও স্পষ্ট করে সেই প্রশ্নই তুললেন বিরোধী ডেমোক্র্যাটরা।
প্রসঙ্গত, ভারত-আমেরিকা বাণিজ্যচুক্তি নিয়ে আলোচনার মধ্যেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গত ৩০ জুলাই ভারতের উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপানোর কথা ঘোষণা করেছিলেন। একই সঙ্গে রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের বাণিজ্যিক সম্পর্কের কারণে অতিরিক্ত ও অনির্দিষ্ট একটি ‘জরিমানা’ (পেনাল্টি)-র কথাও জানিয়েছিলেন তিনি। তার পরে গত ৬ অগস্ট ট্রাম্প ভারতীয় পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্কের উপর আরও ২৫ শতাংশ জরিমানা (অর্থাৎ মোট ৫০ শতাংশ) আরোপ করার কথা ঘোষণা করেন। যা ব্রাজিল ছাড়া অন্য সমস্ত দেশের উপর আরোপিত মার্কিন শুল্কের মধ্যে সর্বোচ্চ। বুধবার থেকে সেই শাস্তিমূলক শুল্ক কার্যকর হয়েছে। এর প্রভাব ভারতের অর্থনীতির উপর কতটা পড়তে চলেছে, তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।