অযোগ্য চাকরিপ্রাপকদের নামের তালিকা সাত দিনের মধ্যে প্রকাশ করতে হবে। এসএসসি মামলায় স্কুল সার্ভিস কমিশনকে এমনই নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট। একই সঙ্গে কমিশনের উদ্দেশে বিচারপতি সঞ্জয় কুমার এবং বিচারপতি সতীশচন্দ্র শর্মার বেঞ্চের মন্তব্য, “আপনাদের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় উপর প্রতি মুহূর্তে আদালত নজর রাখছে। প্রয়োজনে আমরা হস্তক্ষেপ করব।” দুই বিচারপতির বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, “দাগি (টেন্টেড) অযোগ্যদের তালিকা প্রকাশ করতে বলেছিল কলকাতা হাই কোর্ট। আমরা সেই নির্দেশে হস্তক্ষেপ করিনি। তার পরেও কেন তালিকা প্রকাশ হল না?”
এসএসসির উদ্দেশ্যে বিচারপতি কুমারের প্রশ্ন, “জনসমক্ষে দাগি অযোগ্যদের তালিকা প্রকাশ করেছেন? কেন প্রকাশ করেননি?” এসএসসির আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় ওই তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে বলে প্রথমে দাবি করেন। পরে ওই সওয়ালের জন্য আদালতের কাছে দুঃখপ্রকাশ করেন তিনি। জানান, দাগিদের নামের তালিকা প্রকাশ্যে আনা হয়নি। তার পরেই তাঁর উদ্দেশ্যে বিচারপতি শর্মার মন্তব্য, “একটু আগেই বললেন প্রকাশ করেছি। এখন অবস্থান বদল করছেন। শীর্ষ আদালতে ভুল বলে দুঃখপ্রকাশ করছেন। আপনাদের আমরা বিশ্বাস করেছিলাম।”
এর পরেই এসএসসির আইনজীবী কল্যাণ জানান, সাত দিন সময় দিলে তারা তালিকা প্রকাশ করে দেবে। এসএসসির এই বক্তব্য আদালত নথিভুক্ত (রেকর্ড) করে। সুপ্রিম কোর্ট জানায়, এসএসসিকে সাত দিন সময় দেওয়া হল তালিকা প্রকাশ করার জন্য। এই সময়ের মধ্যে তালিকা প্রকাশ না-হলে মামলাকারীরা আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারবেন। বিচারপতি কুমারের মন্তব্য, “বার বার বলছি যোগ্য প্রার্থীদের নিয়ে আমরা কিছু বলব না। কিন্তু দাগি অযোগ্য থাকলে আদালত চুপ করে থাকবে না।” গোটা প্রক্রিয়ায় যে দুর্নীতি হয়েছে এবং তা ঢাকা দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে, সেই বিষয়টিও শুনানিতে উল্লেখ করে শীর্ষ আদালত।
আরও পড়ুন:
অন্য দিকে, আদালতের নির্দেশ মেনেই স্কুলে নতুন করে নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করেছে এসএসসি। পরীক্ষার সূচি স্থগিত রাখার জন্য সুপ্রিম কোর্টে আর্জি জানিয়েছিলেন দাগি বলে চিহ্নিত নন, এমন চাকরিহারারা। বৃহস্পতিবার সেই মামলার শুনানিতেই তাঁদের আর্জি খারিজ করে দিয়ে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, ৭ থেকে ১৪ সেপ্টেম্বর সূচি মেনেই পরীক্ষা হবে।
উল্লেখ্য, দুর্নীতির অভিযোগে এসএসসি-র ২০১৬ সালের নিয়োগের সম্পূর্ণ প্যানেল বাতিল করে দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। তাতে চাকরি গিয়েছে ২৫,৭৩৫ জনের। আদালত জানিয়েছিল, সঠিক তথ্য না থাকায় যোগ্য এবং অযোগ্যদের পৃথক করা সম্ভব হয়নি। তাই পুরো প্যানেল বাতিল করতে হয়েছে। নতুন করে নিয়োগপ্রক্রিয়া শুরু করতে বলা হয় কমিশনকে। ‘দাগি’ হিসাবে যাঁদের চিহ্নিত করা গিয়েছে, তাঁদের বেতন ফেরত দিতে হবে বলে জানায় আদালত। এর পর প্রায় এক মাসের মাথায় এসএসসি এবং রাজ্য রায় পুনর্বিবেচনার আর্জি (রিভিউ পিটিশন) জানায় সুপ্রিম কোর্টে। কিন্তু সে সব খারিজ হয়ে গিয়েছে।