Advertisement
E-Paper

এখনও মেলেনি লিখিত নির্দেশ, শিনা-তদন্তে ‘না’ বলতে পারেন রাকেশ

শিনা মামলার তদন্তভার তাঁর হাতেই থাকবে! অথচ সেই সংক্রান্ত কোনও লিখিত নির্দেশ বুধবার বিকেল পর্যন্ত হাতে পাননি মুম্বইয়ের প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার রাকেশ মারিয়া। তাঁর ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে খবর, এর পর সরকারি ভাবে ওই দায়িত্ব তাঁকে দেওয়া হলেও তিনি তা না-ও গ্রহণ করতে পারেন।

সুনন্দ ঘোষ

শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০৩:৩৩

শিনা মামলার তদন্তভার তাঁর হাতেই থাকবে! অথচ সেই সংক্রান্ত কোনও লিখিত নির্দেশ বুধবার বিকেল পর্যন্ত হাতে পাননি মুম্বইয়ের প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার রাকেশ মারিয়া। তাঁর ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে খবর, এর পর সরকারি ভাবে ওই দায়িত্ব তাঁকে দেওয়া হলে তিনি তা না-ও গ্রহণ করতে পারেন।

নাটকীয় ঘটনায় মোড়া একটি মামলা। নাটকীয় তার তদন্ত। শেষমেশ নাটক হয়ে গেল খোদ তদন্তকারীকে ঘিরেও। শিনা বরা হত্যা মামলার তদন্তের মাঝপথে হঠাৎই মুম্বই পুলিশ কমিশনারের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হল রাকেশ মারিয়াকে। মঙ্গলবার দুপুরে খবরটা ছড়ানোর পর থেকেই শুরু হয়ে যায় তুমুল আলোড়ন। কেন, কী বৃত্তান্ত, নেপথ্যের কোন সমীকরণে রাকেশকে সরতে হল, তাই নিয়ে দেশ জুড়ে জল্পনার ঝড় বইতে থাকে। শিনা মামলার ভবিষ্যৎ কী দাঁড়াবে, সেটাই হয়ে ওঠে প্রধান প্রশ্ন। সন্ধেবেলায় আবার আচমকা বিবৃতি। মহারাষ্ট্র সরকারের স্বরাষ্ট্রসচিব কে পি বক্সী নিজেই ফের জানালেন, রাকেশকে ডিজি হোমগার্ড পদে উন্নীত করা হচ্ছে বটে। কিন্তু শিনা মামলার তদন্তভার তাঁর হাতেই থাকবে!

এমনিতে ৩০ সেপ্টেম্বর কমিশনার হিসেবে মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল রাকেশের। তিনি নিজেই এর আগে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, ৩০শের আগেই মুম্বই পুলিশ হয়তো শিনা মামলার প্রাথমিক চার্জশিট দিতে পারে। তার আগেই তাঁকে সরানো হল কেন? মহারাষ্ট্র সরকারের তরফে বলা হয়, ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে গণেশ উৎসব শুরু হয়ে যাবে। তার মাঝখানে কমিশনার বদল করাটা ঝুঁকির। নতুন যিনি আসবেন, উৎসবের মরসুমে নিরাপত্তার দায়িত্ব বুঝে নিতে তাঁরও কিছুটা সময় লাগবে। তাই মঙ্গলবারেই নতুন কমিশনারের আসনে বসানো হল আহমেদ জাভেদকে। কিন্তু ঘটনা এটাই যে, দুপুরে মারিয়ার আগাম পদোন্নতির খবর শুনে যতটা বিস্মিত হয়েছিলেন মুম্বইয়ের পুলিশ অফিসারেরা, সন্ধেবেলা তার চেয়ে তিন গুণ বেশি বিস্মিত তাঁরা। শহরের কমিশনার থাকবেন একজন ডিজি পদের অফিসার আর ডিজি হোমগার্ড-কে দিয়ে সেই শহরের সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর খুনের ঘটনার তদন্ত করানো হবে— এই হিসেব তাঁরা মেলাতে পারছেন না। মারিয়া নিজে চুপ।

স্বরাষ্ট্রসচিব বক্সী অবশ্য একটা ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তাঁর কথায়, শিনা মামলার তদন্তের কাজ প্রায় ৯০ শতাংশ শেষ করে এনেছিলেন রাকেশ। এই অবস্থায় তাঁকে এই মামলার দায়িত্ব থেকে সরালে অবিচার করা হতো। কিন্তু প্রশ্ন হল, এই কথাটা তা হলে গোড়াতেই বলা হয়নি কেন? একাধিক সূত্রের মতে— দিনভর মারিয়াকে নিয়ে যত আলোচনা চলেছে আর এর পিছনে সরকারের সম্ভাব্য উদ্দেশ্য নিয়ে যত চর্চা হয়েছে, সেই চাপেই সরকারের মতি বদলেছে। নইলে সরকার শিনা মামলা মারিয়ার হাত থেকে নিয়ে নেওয়ারই পক্ষপাতী ছিল বলে সূত্রের দাবি।

কেন? দলীয় সূত্রের খবর— মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিস নিজে তো বটেই, দিল্লিতে বিজেপি হাইকমান্ডও মারিয়াকে সরাতে চাইছিলেন। এর পিছনে একাধিক সম্ভাব্য কারণের কথা বলা হচ্ছে। এমনিতে শরদ পওয়ারের দল এনসিপি-র ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত রাকেশ। এনসিপি-র প্রভাবশালী নেতা, প্রাক্তন বিমানমন্ত্রী প্রফুল্ল পটেল তাঁর কাছের মানুষ বলে মনে করা হয়। সে দিক থেকে বিজেপির ঘরের লোক মারিয়া কোনও দিনই নন। সে ক্ষেত্রে বিজেপি রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পরপরই রাকেশকে সরাতে পারত। তা কিন্তু ঘটেনি।

আর একটি তত্ত্ব বলছে, গত বছর ইন্টারপোলের একটি বৈঠকে যোগ দিতে লন্ডন গিয়ে ললিত মোদীর সঙ্গে দেখা করেছিলেন রাকেশ। এ বছরের জুন মাসে সেই সংক্রান্ত একটি ভিডিও সামনে আসে। সেই বিতর্কের জেরেই ডিজি হোমগার্ডের মতো অপেক্ষাকৃত কম ওজনের পদে রাকেশকে উন্নীত করা হল বলে অনেকের মত। কিন্তু তাতেও প্রশ্ন থাকে, জুন থেকে সেপ্টেম্বর অবধি অপেক্ষা করা হল কেন?

এখানে উঠে আসছে শিনা মামলাতেই রাকেশের ভূমিকা নিয়ে বিতর্কের কথা। সোমবার রাতে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছিলেন রাকেশ। সূত্রের খবর, দেবেন্দ্র তখন রাকেশের কাজের প্রশংসা করেও বলেন যে, শিনা মামলা নিয়ে কমিশনার যতটা মাথা ঘামাচ্ছেন, সমপরিমাণ মনোযোগ অন্যান্য মামলাতেও দেওয়া উচিত। সামগ্রিক ভাবে শিনা মামলায় রাকেশ যে ব্যক্তিগত তৎপরতা দেখাচ্ছেন, নিয়মিত মিডিয়ার মুখোমুখি হচ্ছেন— এ সব দেবেন্দ্র ভাল ভাবে নিচ্ছিলেন না বলে খবর। পেজ-থ্রি বৃত্তে পরিচিত মুখ রাকেশের জনপ্রিয়তার বাড়বাড়ন্ত সরকার ভাল চোখে দেখেনি। এ দিন সকালেই দেবেন্দ্র জাপান চলে যান। যাওয়ার আগে রাকেশকে সরানোর নির্দেশ দিয়ে যান।

পাশাপাশি, দিল্লিতেও দলের শীর্ষ নেতৃত্ব রাকেশকে নিয়ে কিছুটা অসন্তুষ্ট ছিলেন। এ দিন দুপুরে যেমন দলীয় সূত্রে বলা হচ্ছিল, শিনা মামলায় স্বচ্ছ তদন্তের স্বার্থেই রাকেশকে সরানো হল। মুম্বইয়ের প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার, বর্তমানে বিজেপি সাংসদ সত্যপাল সিংহ দাবি করেন, রাকেশ নিজে পিটার মুখোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ। বারবার পিটারকে ডেকে জেরা করাটা নাকি লোক-দেখানো। আদতে তদন্ত কতটা নিরপেক্ষ হচ্ছিল, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। আবার দলের অনেকে এ-ও বলতে থাকেন যে, শিনার খবর যে ভাবে দু’সপ্তাহ ধরে সংবাদমাধ্যমের সিংহভাগ জুড়ে রয়েছে, সেটা শীর্ষ নেতৃত্বের নাপসন্দ। তাতে দলের কাছে গুরুত্বপূর্ণ অন্য খবর কম জায়গা পাচ্ছে। বিজেপি সূত্রেই ঘরোয়া ভাবে জানানো হচ্ছে, রাকেশকে সরানোর এটাও বড় কারণ।

কিন্তু এত কাণ্ডের পর তা হলে মহারাষ্ট্র সরকার আবার অবস্থান বদল করল কেন? শিনা মামলার তদন্তে রাকেশকেই রেখে দেওয়া হল কেন? সূত্রের দাবি, রাজনৈতিক পক্ষপাতের অভিযোগ বন্ধ করতেই এই পদক্ষেপ। রাকেশ এমনিতে বেশ জনপ্রিয়। তার উপরে ২০১২ সালে খুন হয়ে যাওয়া শিনা বরার ঘটনা যে ভাবে সামনে এনেছেন, তার পরে কোন অপরাধে মাঝপথে তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হল, এই প্রশ্ন ঘোরাফেরা করেছে সর্বত্র। ফলে সরকার ভাবতে শুরু করে যে, রাকেশের অপসারণে জনমানসে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতে পারে। আসরে নামেন বিরোধীরাও। এনসিপি-র তরফে নবাব মালিক অভিযোগ করেন, দিল্লির নির্দেশেই সরতে হল রাকেশকে। শিনা তদন্তে যে ভাবে পিটার ও ইন্দ্রাণীর ব্যবসায়িক লেনদেনের বিষয়টি ঢুকে পড়ছিল, তাতে কর্পোরেট স্বার্থে ঘা লাগার উপক্রম হচ্ছিল। সেটা সামাল দিতেই রাকেশকে বলি দিতে চাইল কেন্দ্র, দাবি নবাবের। কংগ্রেসের সঞ্জয় নিরুপমও অভিযোগ করে বলেন, কিছু সরকারি কর্তাব্যক্তি এবং কর্পোরেট কায়েমি স্বার্থ বাঁচাতেই এই পদক্ষেপ।

প্রশাসনের বক্তব্য ছিল, এডিজি থেকে ডিজি পদে উন্নতি হয়েছে রাকেশের। সেই কারণেই বদলি। অথচ যাঁকে কমিশনার করা হল, সেই আহমেদ জাভেদও ডিজি পদেরই অফিসার! বেস্ট বেকারি তদন্ত সামলানো এই অফিসারকে ডিঙিয়েই গত বছর কমিশনার হয়েছিলেন রাকেশ। ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে আহমেদের অবসর নেওয়ার কথা। অথচ রাকেশের চাকরি রয়েছে ২০১৭ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত। নতুন চেয়ারে বসে আহমেদ নিজে এ দিন প্রথমে বলেন, ‘‘শিনা তদন্তে যাতে ফাঁক না থাকে, তা দেখা হবে।’’ তখনও তিনি জানতেন না দ্রুত বদলে যাবে ঘটনার মোড়। সন্ধেয় বক্সীর ঘোষণার পরে আহমেদও জানিয়ে দেন, শিনার তদন্ত-দল একই থাকছে।

বিজেপির অন্দরে অবশ্য কেউ কেউ দাবি করছেন, এগুলো সব কথার কথা। এনসিপি-র সঙ্গে গোপন সমঝোতায় নাকি নাম-কা-ওয়াস্তে রাকেশকে তদন্তের মুখ হিসেবে রেখে দিল। তাতে সাপও মরল, লাঠিও ভাঙল না। শেষ পর্যন্ত রাশ রাকেশের হাতে থাকবে না। তবে সে সব পরের কথা। এ দিনের জন্য শিনা মামলার প্রধান চরিত্র রাকেশই। দিনভর এই ডামাডোলের মধ্যেই এ দিন দুপুরে বান্দ্রা আদালতে হাজির করা হয় সঞ্জীব খন্নাকে। তাঁর ২১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জেল হাজত হয়েছে। আদালতকে জানানো হয়েছে, সঞ্জীবের বাড়ি থেকে খুনের দিন তিন জন যে জুতো ব্যবহার করেছিলেন, সেগুলো আর শিনার কানের দুল বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। সেই কারণেই জরুরি ভিত্তিতে সোমবার সঞ্জীবকে নিয়ে কলকাতা যেতে হয়েছিল। সঞ্জীবের আইনজীবী শ্রেয়াংশ মিঠারির যদিও অভিযোগ, সোমবার সঞ্জীবকে আদালতে পেশ না করায় এখন তাঁর আটক বেআইনি। বিচারক পুলিশকে তার লিখিত বক্তব্য পেশ করতে বলেছেন। কালো টি-শার্ট পরা সঞ্জীবের এ দিন মুখ ঢাকা ছিল না। বিচারক জিজ্ঞাসা করেন, ‘‘আপনার কিছু বলার আছে?’’ সঞ্জীব শুধু বলেন, ‘‘না।’’

rakesh maria rakesh maria drama commissioner of police sheena murder case sheena bora sunando ghosh sheena bora murder investigation mumbai commissioner of police ahmed javed rakesh maria peter mukherjea friendship abpnewsletters
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy