Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

গোটাটাই ভগবানের খেলা! আমি কী করব, বলছেন অমৃতসরের সেই সংগঠক

দশমীর রাতে অমৃতসরের ধোবিঘাট এলাকায় রাবণ দহনের আয়োজন করেছিলেন স্থানীয় কংগ্রেস কাউন্সিলরের ছেলে মিঠ্‌ঠু। কিন্তু রেল লাইনে দাঁড়িয়ে রাবণ পোড়ানো দেখতে গিয়ে ট্রেনের ধাক্কায় ছিন্নভিন্ন হয়ে মারা যান ৬১ জন।

গোপন ডেরায় সৌরভ মিঠ্ঠু।

গোপন ডেরায় সৌরভ মিঠ্ঠু।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০১৮ ০২:২৬
Share: Save:

দু’দিন পরেও অমৃতসর ট্রেন দুর্ঘটনার জন্য দায়ী কাউকেই গ্রেফতার করতে পারেনি পঞ্জাব পুলিশ। আর ওই দুর্ঘটনার জন্য যাঁর দিকে অভিযোগের আঙুল উঠেছে, সেই রামলীলা কমিটির আয়োজক সৌরভ মিঠ্‌ঠু অজ্ঞাত স্থান থেকে ভিডিয়ো তুলে পাঠালেন। ভিডিয়োয় হাত জোড় করে কাঁদোকাঁদো মুখে বলেছেন, ‘‘গোটাটাই ভগবানের খেলা। এতে আমার কী করার আছে!’’

দশমীর রাতে অমৃতসরের ধোবিঘাট এলাকায় রাবণ দহনের আয়োজন করেছিলেন স্থানীয় কংগ্রেস কাউন্সিলরের ছেলে মিঠ্‌ঠু। কিন্তু রেল লাইনে দাঁড়িয়ে রাবণ পোড়ানো দেখতে গিয়ে ট্রেনের ধাক্কায় ছিন্নভিন্ন হয়ে মারা যান ৬১ জন। এর পর থেকেই ফেরার গোটা পরিবার। সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গিয়েছে, দুর্ঘটনার পরই মিঠ্‌ঠুর বাড়ির সামনে একটি গাড়ি এসে দাঁড়াল। সেটিতে চেপে পালিয়ে গেল সবাই। ক্ষুব্ধ জনতা কাল ওই বাড়িতে হামলা চালায়।

রেল লাইন দিয়ে অবৈধ ভাবে যাতায়াত ও জমায়েতের কারণে ওই ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি করে শুরুতেই হাত ধুয়ে ফেলেছে রেল মন্ত্রক। পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী অমরেন্দ্র সিংহ অবশ্য ঘটনার পিছনে প্রশাসনিক গাফিলতি ছিল বলে স্বীকার করে নিয়ে ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ের তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু এই বিক্ষোভ অশান্তির মধ্যেই কেন তিনি আজ ইজ়রায়েল চলে গেলেন তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা। পাশাপাশি রামলীলার আয়োজক মিঠ্‌ঠুকে কেন ধরা যাচ্ছে না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন স্থানীয় মানুষেরা।

দুর্ঘটনার পর থেকেই ওই মাঠে অনুষ্ঠানের অনুমতি দেওয়ার পিছনে স্বজনপোষণের অভিযোগ তুলে সরব হয় শিরোমণি অকালি ও বিজেপি। বিরোধীদের দাবি, কাউন্সিলরের পরিবার হওয়ায় অনুমতি ছাড়াই রাবণ পোড়ানোয় আপত্তি জানানো হয়নি। যদিও আজ ভিডিয়ো বার্তায় বিরোধীদের দাবি খারিজ করে মিঠ্‌ঠু বলেছেন, ‘‘আমি সবার কাছ থেকে অনুমতি নিয়েছিলাম। পুরসভা, দমকল, পুলিশ সকলের সঙ্গে কথা বলেছিলাম। রাবণ পোড়ানোর আয়োজন হয়েছিল মাঠে। কিছু লোক লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। হঠাৎ ট্রেন আসে। এটা ভগবানের হাত। আপনারাই বলুন, আমার কী দোষ?’’

ভিডিয়োয় মিঠ্‌ঠুর দাবি, লাইনে দাঁড়ানো জনতাকে বারবার সাবধান করা হয়েছিল। সেটা যদিও মিথ্যা বলে দাবি করেছেন বিরোধী-সহ স্থানীয় মানুষেরা। তাঁরা সামনে এনেছেন সে রাতের একাধিক ভিডিয়ো। সেগুলির একটিতে দেখা গিয়েছে, অনুষ্ঠানের মুখ্য অতিথি নভজ্যোৎ কৌরকে মিঠ্‌ঠু বলছেন, ‘‘ম্যাডাম আপনাকে দেখতে ৫ হাজার লোক রেললাইনে দাঁড়িয়ে রয়েছে। ৫০০ ট্রেন গেলেও জনতা ওখান থেকে সরবে না।’’ বিরোধীদের মতে, এটা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার জন্য প্ররোচনা। স্থানীয়দের এ-ও প্রশ্ন, লাইনের দিকে মুখ করে এলইডি পর্দা লাগানো ছিল। এটাও কি লাইনের উপরে ভিড় করার প্ররোচনা নয়? প্রশ্ন উঠেছে পঞ্জাব পুলিশের ভূমিকা নিয়েও। মিঠ্‌ঠুর একাধিক পোস্টার লাগানো রয়েছে এখনও। তবু কেন এফআইআরে কারও নাম নেই?

লোকসভা নির্বাচনের আগে রাজ্যের কংগ্রেস সরকারকে অস্বস্তিতে ফেলতে তৎপর বিরোধীরা। কোনও বিচারপতিকে দিয়ে তদন্তের দাবি জানাতে কাল রাজ্যপালের কাছে যাচ্ছেন অকালি ও বিজেপি নেতারা।

কাল একটি ভিডিয়ো ছড়িয়েছিল, যে ডেমু ট্রেনের ধাক্কায় এত মানুষ মারা গিয়েছেন সেটির চালক অরবিন্দ কুমার আত্মহত্যা করেছেন। রেল মন্ত্রক জানিয়েছে, এটা সত্য নয়। অরবিন্দ কালই এক চিঠিতে, নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন। এর মধ্যে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন নোটিস পাঠিয়েছে পঞ্জাব সরকার ও রেল বোর্ডের চেয়ারম্যানকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE