প্রধানমন্ত্রীকে খুনের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ এত অস্পষ্ট! প্রশ্নটা তুলেই দিলেন বিচারপতি ধনঞ্জয় চন্দ্রচূড়।
বুধবারের পরে ফের আজ। হাসি মুখেই বিরুদ্ধ মত জানিয়ে দিলেন বিচারপতি চন্দ্রচূড়। বুধবার আধার মামলায় সংখ্যাগরিষ্ঠের মতের থেকে ভিন্ন মত প্রকাশ করেছিলেন তিনি। আধারকে কাজে লাগিয়ে নাগরিকদের উপর নজরদারি নিয়ে প্রশ্ন তুলে সে দিন আলাদা রায় লিখেছিলেন। আজ ভীমা কোরেগাঁও মামলায় প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্র এবং বিচারপতি এ এম খানউইলকরের বিরুদ্ধে মত জানিয়ে আলাদা রায় লিখলেন। আজ প্রধান বিচারপতির বেঞ্চের রায় পক্ষে থাকলেও পুণে পুলিশ তথা মহারাষ্ট্র সরকার তথা বিজেপির জন্য অস্বস্তির কাঁটা হয়ে উঠেছে বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের মন্তব্য।
বিচারপতি চন্দ্রচূড় আজ তাঁর রায়ে লিখেছেন, বিরুদ্ধ মত গণতন্ত্রের প্রতীক। বিরুদ্ধ মতের কণ্ঠরোধ করার জন্যই ৫ সমাজকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। সঠিক তদন্ত ছাড়া এই নিপীড়ন চলতে দেওয়া হলে, সংবিধানে দেওয়া স্বাধীনতার কোনও অর্থ থাকবে না। তাঁর যুক্তি, ‘‘যাঁরা অপ্রিয় বিষয় নিয়ে সরব হচ্ছেন, তাঁদের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে আদালতকে সতর্ক থাকতে হবে। বিরুদ্ধ মত বলেই বিরোধীদের কণ্ঠরোধ করা যায় না।’’
সমাজকর্মীদের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীকে খুনের ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার অভিযোগ এনেছে পুলিশ। বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের মত, ‘‘প্রধানমন্ত্রীকে খুনের ষড়যন্ত্রের কথা বলা হলে তার অবশ্যই তদন্ত হওয়া উচিত। কিন্তু সেই অভিযোগ অস্পষ্ট ও নথিপত্র ছাড়া আনা যায় না।’’
প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্র এবং বিচারপতি এ এম খানউইলকর নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি খারিজ করতে গিয়ে পশ্চিমবঙ্গে ২০০১-এর ছোট আঙারিয়া প্রসঙ্গ তুলেছেন। ওই ঘটনায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিলেও সুপ্রিম কোর্ট বলেছিল, নিরপেক্ষ তদন্তের নির্দেশ দেওয়ার ক্ষমতা থাকলেও তা সব মামলায় প্রয়োগ ঠিক নয়। বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের মতে, এই মামলাটি সুপ্রিম কোর্টের নজরদারিতে সিট-তদন্তের জন্য একেবারে উপযুক্ত ছিল।
মহারাষ্ট্র পুলিশের সাংবাদিক সম্মেলনের দিকে আঙুল তুলেছেন বিচারপতি চন্দ্রচূড়। তাঁর মত, ওই সাংবাদিক সম্মেলন থেকেই পুলিশের নিরপেক্ষতা নিয়ে সন্দেহ জাগছে। তাঁর অভিযোগ, ‘‘পুলিশের সাংবাদিক সম্মেলন জনমত নিজের দিকে টানার উপায় হয়ে উঠেছে।’’ তাঁর যুক্তি, ‘‘সমাজকর্মী সুধা ভরদ্বাজের লেখা বলে দাবি করা চিঠি টিভিতে দেখানো হচ্ছে। বাছাই করে তদন্তের তথ্য সংবাদমাধ্যমে ফাঁস করছে পুলিশ। এর পরেও মহারাষ্ট্র পুলিশের উপর আস্থা রাখা যায় কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।’’ সমাজকর্মীদের গ্রেফতারির বিরোধিতা করে রোমিলা থাপার, প্রভাত পট্টনায়েকদের মামলাকেও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মানতে রাজি হননি তিনি।
এ দিনের রায়ের পরে প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন প্রবীণ আইনজীবী ইন্দিরা জয়সিংহ। তাঁর যুক্তি, ‘‘বিদায়ী প্রধান বিচারপতি নিজের উত্তরাধিকারেই আঘাত করলেন। ন্যায় অবিভাজনীয়। আপনি লিঙ্গ নির্বিশেষে সুবিচারে বিশ্বাস করেন, কিন্তু নাগরিক স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেন না, তা হতে পারে না।’’