দুর্দশা: সেই রেল ইঞ্জিন। অযত্নে পড়ে আছে চিনিকলে। নিজস্ব চিত্র
ইংরেজরা রেল এনেছে দেশে। তবে ভারতীয় রেলের পিছনে অবদান রয়েছে দেশীয় রাজাদেরও। যেমন, দেশের রেল ইতিহাসের সঙ্গে বিশেষ ভাবে জড়িয়ে রয়েছে দ্বারভাঙা রাজের নাম। সেই ইতিহাসকে স্বীকৃতি দিয়ে তা মানুষের কাছে তুলে ধরতে এ বার উদ্যোগী হল রেল। ইংরেজ শাসনের সময়ে ‘তিরহুত স্টেট রেল কোম্পানি’ তৈরি করে ট্রেন চালিয়েছিলেন দ্বারভাঙার রাজারা। শুধু ট্রেন চালানো নয় তৈরি করেন একাধিক স্টেশনও। সেই ইতিহাসকে ধরে রাখতে তখনকার একটি রেল ইঞ্জিনকে সংরক্ষণ করতে চাইছে পূর্ব-মধ্য রেল।
সমস্তীপুরের ডিভিশনাল রেলওয়ে ম্যানেজার রবীন্দ্র জৈন চিঠি লিখে মন্ত্রকের কাছে এর জন্য প্রয়োজনীয় অনুমতি চেয়েছেন। অনুমতি মিললেই কাজ শুরু হবে। সূত্রের খবর, দ্বারভাঙা রাজের সকরি চিনিকলের ভিতরে ১৪৫ বছরের পুরনো একটি রেল ইঞ্জিন রয়েছে। দ্বারভাঙার রাজাদের স্মৃতিবাহী সেই ইঞ্জিনটিকেই সংরক্ষণের চেষ্টা
শুরু হয়েছে।
রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৮৭৩ সালে ‘তিরহুত স্টেট রেল কোম্পানি’ শুরু করেন মহারাজা লক্ষ্ণেশ্বর সিংহ। দ্বারভাঙা রাজের উল্লেখযোগ্য ১৪টি কোম্পানির অন্যতম ছিল এটি। বছর খানেক পরে উত্তর বিহারে আকাল পড়ে খরার জেরে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় বারাউনির সময়াধার-বাজিতপুর থেকে দ্বারভাঙা পর্যন্ত রেল লাইন পাতেন রাজারা। ১৮৭৫ সালের ১ নভেম্বর সেই লাইনে ট্রেন চলাচল শুরু হয়।
মহারাজা লক্ষ্মেশ্বর সিংহ তিনটি স্টেশনও তৈরি করেছিলেন। দ্বারভাঙা স্টেশনটি তৈরি হয়েছিল সাধারণ মানুষের জন্য। এ ছাড়া লহেরিয়াসরায় ইংরেজদের জন্য এবং রাজ পরিবারের জন্য নরগৌনায় তৈরি করা হয় টার্মিনাল স্টেশন। নরগৌনা স্টেশনে থাকত রাজার সেলুন কার। সেখানেই রাজ পরিবারের সদস্যেরা ওঠানামা করতেন। মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধী ১৯২২, ১৯২৯, ১৯৩৪ সালে মোট পাঁচ বার ওই ট্রেনে চেপেই দ্বারভাঙায় এসেছিলেন। রাজেন্দ্র প্রসাদ-সহ কংগ্রেস নেতারাও আসতেন ওই ট্রেনেই। শুধু ট্রেন চালানোই নয়, সাধারণের জন্য ট্রেনের টাইম টেবিল ছাপিয়েছিলেন দ্বারভাঙার রাজা।
ভারতীয় রেল পরে তিরহুত স্টেট রেল কোম্পানিকে অধিগ্রহণ করে। দ্বারভাঙার রাজার অবদান ভুলতে থাকে গোটা এলাকা। গত কয়েক বছর ধরে ফের দ্বারভাঙা রাজের অবদান তুলে ধরতে সক্রিয় হয়েছে রেল মন্ত্রক। ডিআরএম রবীন্দ্র জৈন দ্বারভাঙা স্টেশনে বেশ কয়েকটি পুরনো তৈলচিত্র সংগ্রহ করে লাগিয়েছেন। এ বার রাজাদের তৈরি সেই দ্বারভাঙা স্টেশনেই তাঁদের আমলের ইঞ্জিনটিকে সংরক্ষণ করতে চাইছেন তিনি। রবীন্দ্রবাবু বলেন, ‘‘চিঠি লিখে অনুমতি চাওয়া হয়েছে। অনুমতি মিললেই এর কাজ শুরু হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy