বাংলাদেশ থেকে মেয়েদের ভাল চাকরির টোপ দিয়ে পাচার করা হত ভারতে। পাচারের জন্য এজেন্টদের মাথাপিছু দেওয়া হত ৪০০০-৫০০০ টাকা। হায়দরাবাদে দেহব্যবসা সংক্রান্ত এক মামলার তদন্তে এমনটাই জানাল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার দাবি, এই কাজে পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকার কিছু দালালকে ব্যবহার করতেন হায়দরাবাদের এই চক্রের মাথারা। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সমাজমাধ্যমে ইডি জানায়, এই মামলার তদন্তে ১ লক্ষ ৯০ হাজার টাকার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। পরে এই মামলা সংক্রান্ত একটি বিবৃতিও প্রকাশ করে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।
হায়দরাবাদ এবং সংলগ্ন এলাকায় হানা দিয়ে মানবপাচার চক্রের সন্ধান পায় পুলিশ। অভিযোগ সেখানে দেহব্যবসা চলত। বিবৃতিতে ইডি জানিয়েছে, হায়দরাবাদে ওই চক্রটি মূলত বাংলাদেশিরাই চালাতেন বলে পুলিশি তদন্তে উঠে আসে। এই নিয়ে তেলঙ্গানা পুলিশ প্রথমে দু’টি পৃথক এফআইআর রুজু করে তদন্ত শুরু করে। সেই সূত্র ধরে আর্থিক তছরুপের মামলায় তদন্ত শুরু করে ইডিও। পরে জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ)-ও এই মামলার তদন্তে নামে।
ইডি বিবৃতিতে জানিয়েছে, এনআইএ মামলার তদন্ত শুরুর পরে অনেকেই গ্রেফতার হন এবং ধৃতদের মধ্যে বেশির ভাগই বাংলাদেশি। ভুয়ো নথিতে তাঁরা ভারতে বাস করছিলেন বলে অভিযোগ। বেশ কয়েক জন গ্রেফতার হওয়ার পরেও বাংলাদেশ থেকে মেয়েদের ভারতে পাচার করার এই চক্রটি সক্রিয় ছিল বলে বিবৃতিতে দাবি ইডির। ইডি জানিয়েছে, পাচারের জন্য মূলত পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত ব্যবহার করত এই চক্র। জামাকাপড়় সেলাইয়ের দোকান, বিউটি পার্লার, ইস্পাত কারখানা, পরিচারিকার কাজ-সহ বিভিন্ন জায়গায় বেশি বেতনে চাকরির টোপ দিয়ে বাংলাদেশি মেয়েদের নিয়ে আসা হত হায়দরাবাদে। তার পরে জোর করে দেহব্যবসায় নামতে বাধ্য করা হত বলে অভিযোগ। এই মামলায় একটি এফআইআরে ইতিমধ্যে এনআইএ বিশেষ আদালত ছয় দোষীর যাবজ্জীবন সাজা ঘোষণা করেছে।
আরও পড়ুন:
ইডির তদন্তে উঠে আসে, এই চক্রের সঙ্গে বেশ কিছু এজেন্টও জড়িত ছিলেন। আর্থিক লেনদেনের জন্য তাঁরা বিভিন্ন ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্ট এবং ‘অনলাইন ওয়ালেট’ ব্যবহার করতেন। বাংলাদেশি মেয়েদের পাচারের জন্য ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে সক্রিয় এই দালালদের মাথাপিছু ৪-৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হত। ওই টাকা পাচারের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন জনের মধ্যে ভাগ করে নেওয়া হত বলে দাবি ইডির। বিবৃতিতে তদন্তকারী সংস্থা জানিয়েছে, কখনও কখনও নগদেও লেনদেন করা হত। টাকা লেনদেনের ক্ষেত্রে তদন্তকারীদের বা ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের সন্দেহ এড়াতে, ছোট ছোট অঙ্কে টাকা ভাগ করে তা পাঠানো হত । টাকা পাঠানো হত বাংলাদেশেও। তদন্তে ইডির দাবি, কখনও কখনও বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের মোবাইল ব্যঙ্কিং পরিষেবা ‘বিকাশ’ (বি-ক্যাশ)-ও ব্যবহার করত এই চক্র।