E-Paper

ভোটার তালিকায় কার নাম কেন বাদ, জানাবে না কমিশন

সুপ্রিম কোর্টকে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, খসড়া ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়া ভোটারদের আলাদা তালিকা তৈরি করা বা প্রকাশ করা কিংবা তাঁদের নাম কেন বাদ পড়েছে, সেই কারণ দর্শানোর কোনও আইনি বাধ্যবাধকতা নেই।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০২৫ ০৮:৪৮
জাতীয় নির্বাচন কমিশন।

জাতীয় নির্বাচন কমিশন। —ফাইল চিত্র।

বিহারে ভোটার তালিকা সংশোধনে নাম বাদ পড়েছে প্রায় ৬৫ লক্ষ ভোটারের। সেই বাদ পড়া ব্যক্তিদের নামের আলাদা তালিকা বানিয়ে, তা প্রকাশ করার প্রশ্নে কোনও বাধ্যবাধকতা নেই বলে জানিয়ে দিল নির্বাচন কমিশন। পাশাপাশি কমিশন এ-ও জানিয়েছে, কী কারণে ওই নাম বাদ পড়েছে, তা-ও আলাদা ভাবে জানাতে বাধ্য নয় তারা। এ দিকে আজ ফের কমিশনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বলেন, একটি ত্রুটিমুক্ত ভোটার তালিকা হল স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ ভোটের ভিত্তি। আগামিকাল স্বচ্ছ ভোটার তালিকা নিয়ে নিজেদের বক্তব্য জানাতে নির্বাচন কমিশনের সময় চেয়েছেন ইন্ডিয়া মঞ্চের নেতারা। ঠিক হয়েছে, লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী এবং অন্য দলের দু’কক্ষের নেতারা সংসদ থেকে পায়ে হেঁটে কমিশনে যাবেন। বৈঠকের জন্য সময় চাওয়া হয়েছে মুখ্য নির্বাচন কমিশনারদের কাছেও।

বিহারে ভোটারদের নাম বাদ পড়া নিয়ে মামলা হয়েছে সুপ্রিম কোর্টে। ওই মামলার গত ৬ অগস্টের শুনানিতে অন্যতম মামলাকারী, অ্যাসোসিয়েশন অব ডেমোক্র্যাটিক রিফর্মস (এডিআর)-এর পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, যে পদ্ধতিতে ওই সব নাম বাদ দেওয়া হয়েছে, তাতে স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে। কী কারণে ওই ব্যক্তিদের নাম বাদ পড়েছে, তা-ও স্পষ্ট করা হয়নি। অভিযোগ ওঠে, বুথ পর্যায়ের আধিকারিক বা বিএলও-রা নথি ভাল ভাবে যাচাই করার আগেই ওই ব্যক্তিদের নাম বাদ দেওয়া হয়। বাদ পড়াদের নামের তালিকা নেই কেন, তা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। তার পরেই বিষয়টি নিয়ে কমিশনের কাছে ব্যাখ্যা চায় সুপ্রিম কোর্ট।

গত কাল সুপ্রিম কোর্টকে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, খসড়া ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়া ভোটারদের আলাদা তালিকা তৈরি করা বা প্রকাশ করা কিংবা তাঁদের নাম কেন বাদ পড়েছে, সেই কারণ দর্শানোর কোনও আইনি বাধ্যবাধকতা নেই। উপনির্বাচন কমিশনার সঞ্জয় কুমার জানিয়েছেন, ১৯৫০ সালের জনপ্রতিনিধিত্ব আইন এবং ১৯৬০ সালের ভোটার নিবন্ধন বিধি অনুসারে, খসড়া ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত নন, এমন ব্যক্তিদের আলাদা কোনও তালিকা প্রস্তুত বা কোনও কারণে খসড়া ভোটার তালিকায় কোনও নাম অন্তর্ভুক্ত না হওয়ার কারণ প্রকাশ করার প্রয়োজন নেই। পাশাপাশি, কমিশন এ-ও জানিয়েছে, তালিকা সংশোধনের সময়ে যাতে ভুলবশত যোগ্য কোনও ভোটারের নাম বাদ না পড়ে, সে জন্য কঠোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আগামী ১২ অগস্ট ওই মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে।

ভোট চুরি প্রসঙ্গে গত ক’দিনের মতো আজও ফের সরব হয়েছেন রাহুল গান্ধী। আজ নিজের এক্স হ্যান্ডলে রাহুল লেখেন, “ভোট চুরির মতো ঘটনা হল, এক ব্যক্তির একটি ভোটের অধিকার— এই ধারণার উপরে আঘাত। একটি ত্রুটিমুক্ত ভোটার তালিকা হল স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ ভোটের ভিত্তি। নির্বাচন কমিশনের কাছে আমাদের দাবি হল, স্বচ্ছতা এবং ডিজিটাল ভোটার তালিকা প্রকাশ করা, যাতে সাধারণ মানুষ তা মিলিয়ে দেখতে পারেন।”

এর মধ্যে অভিযোগ, বিহারের যে ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে: একই বাড়িতে, একই ঠিকানায় ২৩০ জনের নাম রয়েছে! আবার প্রায় ৩ লক্ষ ভোটারের বাড়ির নম্বর শুধু ০ বা ০০ কিংবা ০০০! এমন নম্বরের বাড়ি বিহারের কোথায় রয়েছে, সে প্রশ্ন তুলে খোঁচা দিয়েছেন বিরোধীরা। অভিযোগ, বহু দিন আগে মারা গিয়েছেন, এমন ভোটারদের নামও রয়েছে প্রচুর। জামুই জেলার চৌডিহা পঞ্চায়েতের একটি বুথে দেখা গিয়েছে, একটি বাড়িতে ২৩০ জন ভোটারের বাস! আবার বিশেষ পরিমার্জনের সময়ে ভোটার তালিকা থেকে বিহারের ভোটারদের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার প্রমাণও পেশ করেছে সিপিআই (এমএল)। এক বিবৃতিতে তারা জানিয়েছে, বাহাদুরপুর কেন্দ্রের বন্ধ বস্তি গ্রামে ৫৯ জন ভোটারের নাম নির্বাচন কমিশনের খসড়া তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল। সিপিআই (এমএল)-এর প্রতিনিধিরা জানতে পেরেছেন, তাঁদের মধ্যে ২০ জন ভোটার ওই গ্রামেই বাস করেন। এ নিয়ে দ্বারভাঙ্গার জেলাশাসকের কাছে অভিযোগ করেছেন রাজনৈতিক কর্মী ও বুথ স্তরের সহায়ক অমিত পাসোয়ান।

রাহুল গত বৃহস্পতিবার থেকে কর্নাটকের ভোট চুরি নিয়ে সরব হওয়ায় নড়েচড়ে বসেছে সে রাজ্যের নির্বাচন কমিশন। ওই রাজ্যের ভোটার তালিকায় অস্বচ্ছতা, একই ব্যক্তির দু’বার ভোট দেওয়ার মতো যে অভিযোগগুলি করেছেন, রাহুলের কাছে তার উপযুক্ত প্রমাণ চেয়েছে কর্নাটক নির্বাচন কমিশন। আজ কমিশনের পক্ষ থেকে রাহুলকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, অভিযোগগুলির পক্ষে রাহুলের কাছে যে প্রমাণ রয়েছে, তা কমিশনের কাছে সরবরাহ করা হোক। যাতে কমিশন বিস্তারিত ভাবে তদন্ত করে দেখতে পারে। তার পরেই কংগ্রেস জানায়, বেঙ্গালুরু সেন্ট্রাল লোকসভা কেন্দ্রে ২০২৩-এর বিধানসভা থেকে ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটের মধ্যে ৫২ হাজার ভোটারের নাম রহস্যজনক ভাবে যোগ করা হয়েছিল। ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে ওই কেন্দ্রে পরাজিত প্রার্থী মনসুর খানের বক্তব্য, “কোনও মদ প্রস্তুতকারক কেন্দ্রে কখনও ৬৮ জন থাকতে পারেন? এটা ভুল নয়, এটা গণহারে ভুয়ো ভোটার নথিবদ্ধকরণের প্রমাণ।” যদিও নির্বাচন কমিশন আজ ফের ভোটার তালিকা নিয়ে রাহুলের দাবি মিথ্যে বলে দাবি করেছে।

কর্নাটকের মতোই মহারাষ্ট্র এবং হরিয়ানার নির্বাচন কমিশনও রাহুল গান্ধীর তোলা অভিযোগের যথাযথ প্রমাণ চেয়ে তাঁকে চিঠি দিয়েছে। মহারাষ্ট্র নির্বাচনে বিস্তর কারচুপির অভিযোগের প্রেক্ষিতে কমিশন দশ দিনের মধ্যে তাঁকে স্বাক্ষরিত হলফনামা দিয়ে প্রমাণ জমা দিতে বলেছে।

রাহুলের ভোট চুরির মন্তব্যে অস্বস্তির মুখে নির্বাচন কমিশনের মতো সরব হয়েছে বিজেপিও। বিজেপির আইটি শাখার নেতা অমিত মালবীয় বলেন, “রাহুল যদি সঠিক হন, তা হলে হলফনামা দিয়ে অভিযোগ জানান। অন্যথায় ধরে নেওয়া হবে এ হল তাঁর রাজনৈতিক নাটক।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Election Commission of India Voter List Controversy Supreme Court of India Special Intensive Revision

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy