প্রচার-মঞ্চে উন্নয়নের কথা বললেও, তলায় তলায় সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের প্রচার চলছিলই। বিহার ভোটের একেবারে শেষ লগ্নে গোমাংস-রাজনীতিকে একেবারে খুল্লমখুল্লা হাতিয়ার করল বিজেপি। পরিস্থিতি এতটাই টানটান যে, শেষ পর্বের ভোট শুরুর ১২ ঘণ্টা আগে বিজেপির বিরুদ্ধে এফআইআর করতে বাধ্য হল জাতীয় নির্বাচন কমিশন। প্রশ্ন উঠছে, মুসলিম অধ্যুষিত কোশী, মিথিলাঞ্চল ও সীমাঞ্চলে শেষ দফায় কি সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের পথেই হাঁটতে ‘মরিয়া’ বিজেপি!
আজ প্রায় সমস্ত সংবাদপত্রে দলের তরফে ‘গোমাংস-বিতর্ক’-কে উস্কে দিয়ে এক বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে। সকালেই ওই বি়জ্ঞাপন নিয়ে নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন জনতা-কংগ্রেস মহাজোটের নেতারা। মহাজোটের তরফে জেডিইউ সাংসদ পবন বর্মা, আরজেডি নেতা মনোজ ঝা এবং কংগ্রেস নেতা চন্দন যাদব নির্বাচন কমিশনের দফতরে যান। সেখানেই তাঁরা বিজ্ঞাপনটি বন্ধ করে বিজেপির বিরুদ্ধে নির্বাচনী বিধিভঙ্গের মামলা দায়ের করার দাবি জানান।
ভোটের প্রচার শেষ হয়ে যাওয়ার পরে কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন দলের এমন এক বিতর্কিত বিজ্ঞাপন নিয়ে সঙ্কটে জাতীয় নির্বাচন কমিশনও। পরিস্থিতি যাচাই করে আজই এই বিজ্ঞাপনের বিরুদ্ধে একটি এফআইআর দায়ের করেছে কমিশন। একই সঙ্গে সমস্ত সংবাদপত্রে নোটিস পাঠিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, আগামিকাল, ভোটের দিন সকালে প্রকাশিত সংবাদপত্রগুলোতে কী ধরনের বিজ্ঞাপন ছাপা হচ্ছে, তাও কমিশনকে আগাম জানাতে হবে। কমিশন অনুমোদন দিলে তবেই ওই বিজ্ঞাপন ছাপা যাবে।
যদিও বিজেপি নেতারা বিজ্ঞাপনে ‘খারাপ কিছু’ রয়েছে বলে মানতে রাজি নন। তাঁদের বক্তব্য, মহাজোটের কয়েক জন নেতার বক্তব্য তুলে ধরে তার প্রেক্ষিতে মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের মত জানতে চাওয়া হয়েছে ওই বিজ্ঞাপনে। বিজেপি নেতাদের পাল্টা-দাবি, নাম-ঠিকানা ছাড়া লিফলেট ছেপে আরএসএসের নাম দিয়ে প্রচার চালাচ্ছেন মহাজোটের নেতারাই। দু’পক্ষের এই অভিযোগ পাল্টা-অভিযোগ নিয়ে জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে রিপোর্ট চেয়ে পাঠায় কমিশন। পাশাপাশি, তারা নিজেরাও তদন্ত শুরু করেছে। এর পরেই, সন্ধ্যায় নির্বাচন কমিশনের তরফে জানানো হয়েছে, ওই বিজ্ঞাপনের জন্য বিজেপির বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের হয়েছে।
বিজেপির তরফে যে বিজ্ঞাপনটি আজ দেওয়া হয়েছে তাতে গোমাংস নিয়ে মেরুকরণের চেষ্টা হচ্ছে বলেই মনে করছেন রাজ্যের রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। বিজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ‘মুখ্যমন্ত্রীজি আপনার সঙ্গীরা বারবার প্রতিটি ভারতীয়ের পুজ্য গাইয়ের অপমান করছেন। আর আপনি চুপ করে রয়েছেন!’ তারপরে বলা হয়েছে, ‘ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতি বন্ধ করুন আর জবাব দিন, আপনি কি আপনার সঙ্গীদের এই বক্তব্যের সঙ্গে সহমত।’ এরপরেই লালুপ্রসাদ, রঘুবংশপ্রসাদ সিংহ এবং কর্নাটকের কংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়ার সাম্প্রতিক মন্তব্য তুলে দেওয়া হয়েছে। সব শেষে, বিজেপির নির্বাচনী চিহ্ন এবং স্লোগান ‘জবাব নহি তো ভোট নহি’ এবং ‘বদলিয়ে সরকার, বদলিয়ে বিহার’। বিজ্ঞাপনে রয়েছে একটি গরুর গলা জড়িয়ে ধরা এক বৈষ্ণবীর ছবি।
বিজেপি সীমাঞ্চল, কোশী ও মিথিলাঞ্চলের সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকায় এই বিজ্ঞাপন থেকে লাভ তুলতে চাইছে বলে অভিযোগ বিরোধীদের। জেডিইউ নেতা কে সি ত্যাগীর কথায়, ‘‘বিহার নির্বাচন চলার মধ্যেই যদি বিজেপির বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশন ব্যবস্থা না নেয়, তা হলে আমরা রাষ্ট্রপতির কাছে অভিযোগ জানাব।’’ বিজেপির এই বিজ্ঞাপন নিয়ে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবালও টুইট করেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘‘বিহারে এই ধরনের বিজ্ঞাপন কারা দিয়েছেন? বিজেপির ভিতরে থাকা খারাপ চিন্তার লোকেরা, নাকি বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব?’’ দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য, ‘‘বিহারের নির্বাচনে বিজেপির হার খুব জরুরি। ঘৃণা ছড়ানোর রাজনীতি এ দেশে কাজ করবে না। দেশের লোক ভালবাসা এবং শান্তি চায়, ঘৃণা নয়।’’ অরবিন্দের এই টুইট আসার পর তাঁকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার। তবে গোটা বিতর্ক নিয়ে তিনি মুখ খোলেননি।
বিজেপি অবশ্য বিজ্ঞাপনের পক্ষেই যুক্তি সাজিয়েছে। বিধানসভার বিরোধী দলনেতা নন্দকিশোর যাদব, দলের রাজ্য সভাপতি মঙ্গল পাণ্ডে এবং প্রাক্তন উপ-মুখ্যমন্ত্রী সুশীল মোদী বিষয়টি নিয়ে যৌথ সাংবাদিক সম্মেলন পর্যন্ত করেছেন। নন্দকিশোর বলেন, ‘‘বিজ্ঞাপনে খারাপ কিছু নেই।’’ সুশীল মোদীর বক্তব্য, ‘‘বিরোধীরা যা বলেছেন সেই সব বক্তব্যই বিজ্ঞাপনে তুলে ধরা হয়েছে। তার প্রেক্ষিতে মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের বক্তব্য জানতে চাওয়া হয়েছে। এর বেশি কিছু না। এই মুখ্যমন্ত্রীই তো বলেছেন, বিহারে ১৯৫৫ সালের গো-হত্যা নিরোধক আইন রয়েছে।’’ বিজেপি ক্ষমতায় এলে বিহারে গো-হত্যা নিরোধক আইন কঠোর ভাবে প্রয়োগ করা হবে বলে জানান সুশীল মোদী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy