Advertisement
০১ মে ২০২৪
Electoral Bonds

প্রথম থেকে আপত্তি তোলে নির্বাচন কমিশন, সায় ছিল না রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের, তবু চালু হয়েছিল নির্বাচনী বন্ড

অর্থ মন্ত্রকের কর্তারা বলছেন, রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর উর্জিত পটেল শেষ বেলায় বেঁকে বসেছিলেন। তাঁর মত ছিল, কোনও ব্যাঙ্কের বদলে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের নির্বাচনী বন্ড বাজারে ছাড়া উচিত।

Electoral Bonds

—প্রতীকী ছবি।

প্রেমাংশু চৌধুরী
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৭:১৪
Share: Save:

প্রথম থেকেই নির্বাচন কমিশন আপত্তি তুলেছিল। রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কেরও প্রথমে প্রশ্ন ছিল। পরে কিছুটা বোঝানো গেলেও শেষবেলায় রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের তৎকালীন গভর্নর উর্জিত পটেল ফের বেঁকে বসেছিলেন। মোদী সরকার যে খসড়া নির্বাচনী বন্ড প্রকল্প তৈরি করেছিল, উর্জিত পটেলের নেতৃত্বে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক তাতে কোনও মন্তব্য করেনি। সেই খসড়ায় সম্মতিও দেয়নি। এমনকি, কেন্দ্রীয় সরকারেরই আইন মন্ত্রক ওই খসড়ায় বেশ কিছু পরিবর্তন চেয়েছিল। কিন্তু এই সমস্ত আপত্তি অগ্রাহ্য করেই নরেন্দ্র মোদী সরকার ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে নির্বাচনী বন্ড চালু করেছিল।

২০১৭ সালের ১ ফেব্রুয়ারি বাজেট পেশের সময় তদানীন্তন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি নির্বাচনী
বন্ডের কথা ঘোষণা করেন। কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক সূত্র বলছে, বাজেটে ঘোষণার পরে নির্বাচনী বন্ড চালু করা নিয়ে নির্বাচন কমিশন ও রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের সঙ্গে বৈঠক ডাকা হয়েছিল। কমিশন প্রথমেই জানিয়ে দেয়, তারা এই নিয়ে কোনও সিদ্ধান্তের শরিক হবে না। কারণ, তারা নীতিগত ভাবে নির্বাচনী বন্ডের বিরুদ্ধে। রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের বক্তব্য ছিল, নির্বাচনী বন্ড ‘বিয়ারার বন্ড’ হয়ে যেতে পারে। এক রাজনৈতিক দল নির্বাচনী বন্ড পেয়ে অন্য ছোট রাজনৈতিক দলকে তা দিতে পারে।

অর্থ মন্ত্রকের কর্তাদের বক্তব্য, প্রয়াত অরুণ জেটলির বক্তব্য ছিল, নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে ব্যাঙ্কের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলি চাঁদা পাবে। ফলে নগদ টাকার ব্যবহার থাকবে না। এতে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ কমবে। তাঁর যুক্তি ছিল, কালো টাকা রুখতে দু'টি ব্যবস্থা রয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলিকে দেওযা চাঁদায় কর্পোরেট সংস্থাগুলি কর ছাড় পায়। ২০ হাজার টাকার বেশি কেউ নগদে চাঁদা দিলে তা নির্বাচন কমিশনকে জানাতে হয়। কিন্তু তার পরেও রাজনৈতিক দলগুলির সিংহভাগ চাঁদা নগদে আসছে। যে টাকা কে দিচ্ছে, তা জানা যাচ্ছে না। সে কারণে বন্ড চালু করা দরকার। এক জন ব্যক্তি ২০০০ টাকার বেশি নগদে চাঁদা দিতে পারবেন না বলেও জেটলি ঊর্ধ্বসীমা বেঁধে দেন। কিন্তু অর্থ মন্ত্রকের অনেক কর্তারই তখন মনে হয়েছিল, বন্ডের মাধ্যমে বেসরকারি সংস্থা গোপনে চাঁদা দিয়ে সরকারের থেকে সুবিধা আদায় করে নিতে পারে।

অর্থ মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, ২০১৭-র অগস্টে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে নির্বাচনী বন্ড নিয়ে বৈঠক হয়। তত দিনে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের কর্তারা রাজি হয়ে গিয়েছেন। কারণ, তাঁদের দাবি মতো নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্বাচনী বন্ড রাজনৈতিক দলগুলির ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা করতে হবে বলে শর্ত বেঁধে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু নির্বাচন কমিশনকে তখনও পুরো বোঝানো যায়নি। অর্থ মন্ত্রকের তরফে নির্বাচন কমিশনারদের সামনে গোটা বিষয়টি ব্যাখ্যা করা হয়। কিন্তু নির্বাচন কমিশনার ও পি রাওয়াত শেষ পর্যন্ত আপত্তি তুলেছিলেন।

অর্থ মন্ত্রকের কর্তারা বলছেন, রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর উর্জিত পটেল শেষ বেলায় বেঁকে বসেছিলেন। তাঁর মত ছিল, কোনও ব্যাঙ্কের বদলে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের নির্বাচনী বন্ড বাজারে ছাড়া উচিত। কারণ, বন্ড মুদ্রার মতোই। ফলে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কেরই তা বাজারে ছাড়া উচিত। পটেল কাগজে বন্ডের বদলে ডিজিটাল বন্ড চেয়েছিলেন। তাতে অর্থ মন্ত্রক রাজি ছিল না। রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কও অর্থ মন্ত্রকের নির্বাচনী বন্ড প্রকল্পের খসড়ায় সায় দেয়নি।

রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের কেন্দ্রীয় বোর্ড কমিটির বৈঠকে ব্যাঙ্কের আপত্তি নথিভুক্ত করা হয় ঠিকই। তবে অর্থ মন্ত্রক বন্ডের পক্ষে বক্তব্য জানায়। তার ভিত্তিতেই বন্ড চালু করে মোদী সরকার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE