Advertisement
E-Paper

১৯৮৭ সালের ১ জুলাইয়ের পরে জন্মানো কাউকে বাড়তি নথি দিতে হবে না! মমতার দাবিই কি মেনে নিল নির্বাচন কমিশন?

দিনকয়েক আগেই বিহারে ভোটার তালিকার বিশেষ বা নিবিড় সমীক্ষার (স্পেশাল ইন্টেনসিভ রিভিশন) প্রসঙ্গ টেনে সুর চড়িয়েছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই আবহে সোমবার নতুন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে সেই নিয়মবিধিতে বদল আনল কমিশন।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩০ জুন ২০২৫ ১৭:৩৩
Elexction Commission says crores of electors of Bihar mentioned in 2003 electoral roles do not need to submit any document

গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

দিনকয়েক আগেই বিহারে ভোটার তালিকার বিশেষ বা নিবিড় সমীক্ষার (স্পেশাল ইন্টেনসিভ রিভিশন) প্রসঙ্গ টেনে সুর চড়িয়েছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রশ্ন তুলেছিলেন প্রক্রিয়ার নানা নিমকানুন নিয়েও। তার কয়েক দিনের মধ্যেই বিশেষ বা নিবিড় সমীক্ষা নিয়ে নতুন বিজ্ঞপ্তি জারি করল নির্বাচন কমিশন।

বিহারে আসন্ন নির্বাচনের আগে ভোটার তালিকার সার্বিক সংশোধনের কথা জানিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। সে জন্য একগুচ্ছ নির্দেশিকাও জারি করা হয়। সোমবার ফের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে সেই নিয়মবিধিতে বিস্তর বদল এনেছে কমিশন। নতুন বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে,

১) বিহারের ২০০৩ সালের ভোটার তালিকা নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে আপলোড করা হয়েছে। সেখানে নথিভুক্ত ৪.৯৬ কোটি ভোটারের জন্য নতুন করে আর কোনও নথি জমা দেওয়ার প্রয়োজন নেই।

২) এই ৪.৯৬ কোটি ভোটারের স্বীকৃতির জন্য বাবা কিংবা মায়ের সঙ্গে সম্পর্কিত কোনও নথিও জমা দেওয়ার প্রয়োজন নেই।

৩) কোনও ভোটারের নাম যদি ২০০৩ সালের বিহারের ভোটার তালিকায় না-ও থাকে, সে ক্ষেত্রে তিনি নিজের বাবা কিংবা মায়ের অন্য কোনও নথির পরিবর্তে ২০০৩ সালের ভোটার তালিকাটি ব্যবহার করতে পারবেন। অর্থাৎ, মা কিংবা বাবার জন্য আলাদা করে কোনও নথি দেখানোর প্রয়োজন নেই।

৪) অর্থাৎ, এখন মোট ভোটারদের প্রায় ৬০ শতাংশকে কোনও নথি জমা দিতে হবে না। শুধু ২০০৩ সালের ভোটার তালিকা থেকে বিবরণ যাচাই করে আবেদন বা গণনা ফর্ম জমা দিতে হবে।

প্রসঙ্গত, সামনেই বিহারে বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে জাল ভোটার রুখতে সম্প্রতি ভোটার তালিকায় পরিমার্জনের কাজে হাত দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। কমিশন জানায়, ওই রাজ্যে ২০০৩ সালে ভোটার তালিকার যে বিশেষ সংশোধন হয়েছিল, সেই সময় ভোটার সংখ্যা ছিল ৪.৯৬ কোটি। আর বিহারে এই মুহূর্তে ৭,৮৯,৬৯,৮৪৪ জন ভোটার রয়েছেন। এঁদের প্রত্যেকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে একটি এনুমারেশন ফর্ম (ইএফ) দেওয়া হচ্ছে। কমিশন জানায়, যাঁদের নাম পুরনো তালিকায় রয়েছে তাঁদের শুধু ইএফ ফর্মটি পূরণ করে জমা দিলেই হবে। আলাদা করে অতিরিক্ত নথি দেওয়ার কোনও প্রয়োজন নেই। কিন্তু যাঁরা নতুন, তাঁদের ‘ডিক্লারেশন ফর্ম’-এর সঙ্গে নাগরিকত্বের প্রমাণস্বরূপ বাড়তি নথি জমা দিতে হবে।

কমিশনের তরফে জানানো হয়, যে সব ভোটার ১৯৮৭ সালের ১ জুলাইয়ের আগে জন্মগ্রহণ করেছেন তাঁদের জন্মতারিখ অথবা জন্মস্থানের সপক্ষে তালিকায় উল্লিখিত ১১টি নথির মধ্যে যে কোনও একটি জমা দিতে হবে। ১৯৮৭ সালের ১ জুলাই থেকে ২০০৪ সালের ২ ডিসেম্বরের মধ্যে যাঁদের জন্ম, তাঁদের জন্মতারিখ অথবা জন্মস্থানের প্রমাণস্বরূপ একটি নথি এবং তাঁদের বাবা কিংবা মায়ের জন্মতারিখ অথবা জন্মস্থানের প্রমাণ রয়েছে এমন একটি নথি জমা দিতে হবে। যে সব ভোটার ২ ডিসেম্বর ২০০৪ তারিখের পরে জন্মগ্রহণ করেছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে নিজের জন্মতারিখ ও জন্মস্থানের প্রমাণ হিসাবে যে কোনও একটি নথি এবং বাবা-মায়ের জন্মতারিখ ও জন্মস্থান প্রমাণের নথি জমা দিতে হবে। যদি কারও বাবা কিংবা মা ভারতীয় না হন, সে ক্ষেত্রে তাঁর পাসপোর্ট ও সন্তান জন্মের সময়কার ভিসার কপি জমা দিতে হবে।

এর পরেই কমিশনের পদক্ষেপ নিয়ে আপত্তি তোলেন মমতা। দাবি করেন, বিহার বাহানা, কমিশনের আসল নিশানা বাংলা। কমিশনের নিয়মকে ভিত্তিহীন বলেও দাবি করে বাংলার শাসকদল। তৃণমূলের অভিযোগ, কী ভাবে সকলের পক্ষে বাবা-মায়ের জন্মতারিখের শংসাপত্র দেওয়া সম্ভব? কারণ আজ থেকে কয়েক দশক আগেও বাড়িতেই প্রসব হত, সে ক্ষেত্রে জন্মের শংসাপত্র পাওয়ার কোনও প্রশ্নই ছিল না। এ ছাড়া সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিযায়ী শ্রমিকেরা অনেকেই ভিন্‌রাজ্যে স্থানান্তর করেছেন। মমতা অভিযোগ তোলেন, কেন্দ্র আসলে বাংলা এবং পরিযায়ী শ্রমিকদের নিশানা করতে চাইছে। সে কারণেই এমন নিয়ম। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে কথা না-বলে নির্বাচন কমিশন কখনওই এটা করতে পারে না। আমাদের গণতান্ত্রিক দেশ। এখানে যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থা রয়েছে। এখানে রাজনৈতিক দল বা নির্বাচিত সরকার কখনওই ক্রীতদাস নয়।’’ নাম না-করে কমিশনকে ‘বিজেপির প্রচারক’ বলেও কটাক্ষ করেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। তিনি আরও বলেন, ‘‘তরুণ প্রজন্ম যাতে ভোট দিতে না পারে, সেই কারণেই কি এই নিয়ম? গরিবেরা কী ভাবে বাবা-মায়ের শংসাপত্র পাবেন? এটা কি এনআরসি? এ ভাবেই দেশে এনআরসি চালু করার চেষ্টা হচ্ছে কি?’’ ঘটনাচক্রে, এর দিনকয়েকের মাথায় পুরনো নির্দেশিকা প্রত্যাহার করে নতুন নির্দেশিকা প্রকাশ করল কমিশন।

নির্বাচন কমিশনের নতুন বিজ্ঞপ্তি প্রসঙ্গে তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই এ নিয়ে প্রথম আওয়াজ তুলেছিলেন। অবশেষে তাঁর চাপে কমিশনকে নির্দেশিকা প্রত্যাহার করে নতুন নির্দেশিকা জারি করতে হল। মানুষের মৌলিক অধিকার সুরক্ষিত রাখতে বারংবার মমতাদিই বেড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধার কাজটা করে চলেছেন। ওঁর আন্দোলনের জন্য সারা দেশ সচিত্র ভোটার পরিচয়পত্র পেয়েছে। সেই ধারা আজও অব্যাহত।’’ যদিও তৃণমূলের রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও ব্রায়েনের গলায় শোনা গিয়েছে ভিন্ন সুর। ডেরেক বলেন, “আমরা নির্বাচন কমিশনের আগের বিজ্ঞপ্তিটি দেখেছিলাম। সোমবার প্রকাশ হওয়া বিজ্ঞপ্তিটিও দেখেছি। দুটি বিজ্ঞপ্তি দেখার পর আমাদের মনে হয় দু’টি বিজ্ঞপ্তির মধ্যে খুব একটা ফারাক নেই। বিষয়টি যে লক্ষ্য নিয়ে নির্বাচন কমিশন করেছিল, সেই লক্ষ্যে তারা এখনও অবিচল রয়েছে। মুখে বিহারের কথা বলা হলেও, আসলে নির্বাচন কমিশনকে দিয়ে বিজেপি বাংলা দখলের জন‍্য এই কাজ করাচ্ছে।”

মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশনের দফতরে অভিযোগ জানাতে যাচ্ছেন তৃণমূলের প্রতিনিধিরা। ওই প্রতিনিধিদলে থাকবেন, সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, সাংসদ প্রকাশ চিক বরাইক। এ ছাড়া থাকবেন রাজ্যের তিন মন্ত্রী— ফিরহাদ হাকিম, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য এবং অরূপ বিশ্বাস। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নির্বাচন কমিশন যে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে তার বিরোধিতা করে নির্বাচন কমিশনকে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করবেন তৃণমূলের প্রতিনিধিরা।

EC Election Commission
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy