Advertisement
E-Paper

ফ্রিজের গায়ে সুইসাইড নোট, ‘দায়ী ভারত সরকার’

ফ্রিজের দরজায় সেই নোটে লেখা ছিল, ‘‘আমি ছেড়ে চলে যাচ্ছি। আমার মৃত্যুর জন্য দায়ী সরকার।’’

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০২ মে ২০১৯ ১৯:১২
ফ্রিজের গায়ে নিজের লেখা এই নোট রেখে যান বিশ্বজিৎ মজুমদার। নিজস্ব চিত্র।

ফ্রিজের গায়ে নিজের লেখা এই নোট রেখে যান বিশ্বজিৎ মজুমদার। নিজস্ব চিত্র।

নিজের মৃত্যুর জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকেই দায়ী করলেন অসমের আত্মঘাতী বাঙালি ইঞ্জিনিয়ার বিশ্বজিৎ মজুমদার। নগাঁও-এর হিন্দুস্তান পেপার কর্পোরেশনের হস্টেলে দশ ফুট বাই আট ফুটের ছোট্ট ঘরে মিলল তাঁর রেখে যাওয়া শেষ নোট। ফ্রিজের দরজায় সেই নোটে লেখা ছিল, ‘‘আমি ছেড়ে চলে যাচ্ছি। আমার মৃত্যুর জন্য দায়ী কেন্দ্রীয় সরকার।’’ তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে তাঁর মৃত্যুর দু’দিন পরই সরকারের তরফে তাঁর কোম্পানি হিন্দুস্তান পেপার কর্পোরেশন লিকুইডেশনে চলে যাওয়ার কথা জানিয়ে দেওয়া হল।

অসমের নগাঁওতে হিন্দুস্তান পেপার কর্পোরেশনের হস্টেলে দশ ফুট বাই আট ফুটের ছোট্ট ঘরে থাকতেন কারখানার ইউটিলিটি অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন ম্যানেজার বিশ্বজিৎ মজুমদার। শনিবার থেকে তাঁকে অফিসে যেতে দেখেননি সহকর্মীরা। রবিবার থেকে কলকাতায় থাকা স্ত্রী এবং দিল্লি ও কেরলে পাঠরত দুই মেয়ের ফোনও ধরছিলেন না। শেষ পর্যন্ত মঙ্গলবার বিকেলে হস্টেলের রুম থেকেই উদ্ধার করা হয় তাঁর ঝুলন্ত মৃতদেহ।

গত ২৬-২৭ মাস ধরে বেতন পাচ্ছিলেন নাএইচপিসির নগাঁও ও কাছাড় কলের কর্মীরা। এই নিয়ে নগাঁওয়ে তিন জন আত্মঘাতী হলেন। বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু হয়েছে আরও ৩১ জনের। কাছাড় ও নগাঁওয়ের দুই কারখানা মিলিয়ে আত্মহত্যা এবং বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৫। শেষ পর্যন্ত বুধবারই এই কারখানা লিকুইডেশনে যাওয়ার কথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে সরকারের তরফে। এর ফলে পরিস্থিতি ভাল হওয়ার ন্যূনতম আশাটুকুও আর থাকল না।

নগাঁওতে বাবার রুমে রেখে যাওয়া আত্মঘাতী নোটের সামনে বিশ্বনাথ মজুমদারের দুই মেয়ে। ছবি: ফেসবুক থেকে সংগৃহীত।

পৈত্রিক বাড়ি কালনায় হলেও মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার বিশ্বজিৎবাবু সপরিবারে কলকাতার বেলগাছিয়ায় থাকতেন। স্ত্রী শিক্ষিকা। যমজ মেয়ে। এক কন্যা দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে নৃতত্ত্বে এমফিল ও অন্য জন কেরলে জিনতত্ত্বে গবেষণা করছেন। আগে কাছাড়ের পাঁচগ্রাম কাগজকলে নিযুক্ত বিশ্বজিৎবাবু ২০১১ থেকে নগাঁওয়ের জাগি রোড কারখানায় যোগ দেন। অফিসার আবাসে একাই থাকতেন। ভাল গাইয়ে বিশ্বজিৎবাবু সহকর্মীদের মধ্যে জনপ্রিয় ছিলেন। মেয়েদের উচ্চশিক্ষায় কার্পণ্য করতে চাননি তিনি। কিন্তু ২০১৭ সালের মার্চ থেকে কারখানা ও বেতন বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকে সঞ্চয় ভেঙে চলতে হচ্ছিল তাঁকে। তবু তীব্র অর্থসঙ্কটের আঁচ পরিবারে পড়তে দেননি।

আরও পড়ুন: দক্ষিণবঙ্গের ১৫ জেলায় তাণ্ডব চালাতে পারে ফণী, সতর্ক করল হাওয়া অফিস

এক সহকর্মী জানান, দিন কয়েক আগে শেষ বিমার সঞ্চয়ও ভেঙে ফেলে আক্ষেপ করেছিলেন, আর কোনও সঞ্চয় থাকল না। পুলিশের সন্দেহ, সেই হতাশা থেকেই চরম সিদ্ধান্ত নেন ৫৫ বছরের বিশ্বজিৎবাবু। স্ত্রী মণিদীপা মজুমদার, শ্যালক ভাস্কর মৈত্র ও মেয়েরা খবর পেয়ে গতকাল সকালেই মরিগাঁওয়ের হাসপাতালে যান। গুয়াহাটিতেই তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।বিশ্বজিৎবাবুর শ্যালক ভাস্কর মৈত্র আনন্দবাজারকে বলেন, ‘‘কারখানা বেতন দিচ্ছিল না। এ দিকে দুই মেয়ের পড়াশোনার খরচ চালাতে অসুবিধে হচ্ছিল জামাইবাবুর। সেই কারণেই হয়তো চরম সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন উনি।’’ নগাঁও পেপার মিল ইউনিয়নের নেতা হেমন্ত কাকতি জানান, গত বছর রাধিকা মজুমদার ও প্রভা ডেকা নামে দুই কর্মী আত্মহত্যা করেছেন। তিন হাজার কর্মীর অনেকেই ঋণের দায়ে জর্জরিত। পরিবার অর্ধাহারে আছে। অসুস্থ হলেও চিকিৎসা-বিমার টাকা মিলছে না। সব সঞ্চয় শেষ। ছেলেমেয়ের লেখাপড়া বন্ধ হওয়ার পথে। ২০১৫ থেকে প্রভিডেন্ট ফান্ডের কিস্তি জমা পড়েনি।

আরও পড়ুন: রাজনৈতিক মূল্য চোকাতে হবে, তাই মাসুদ নিয়ে আনন্দ নেই বিরোধীদের: জেটলি

Suicide Assam Engineer
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy