E-Paper

জঙ্গলমানবের নামাঙ্কিত পুরস্কার ‘জলমানব’কে

জঙ্গলমানবের নামাঙ্কিত পুরস্কার প্রথমবার পাচ্ছেন জলমানব! তাও আবার খোদ জঙ্গলমানবের হাত থেকেই! এমনই অভিনব দৃশ্যের সাক্ষী থাকল যোরহাটের টিওকে থাকা জ্যোতিপ্রতাপ জ্ঞানমার্গ বিদ্যালয়।

রাজীবাক্ষ রক্ষিত

শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০২৫ ১৬:৪৩
Environmentalist M Karunakar Reddy Awarded with Jadav Payeng International Award

আন্তর্জাতিক সংরক্ষণ পুরস্কার নিচ্ছেন দক্ষিণ ভারতের ‘জলমানব’ এম করুণাকর রেড্ডি। —নিজস্ব চিত্র।

জঙ্গলমানবের নামাঙ্কিত পুরস্কার প্রথমবার পাচ্ছেন জলমানব! তাও আবার খোদ জঙ্গলমানবের হাত থেকেই! এমনই অভিনব দৃশ্যের সাক্ষী থাকল যোরহাটের টিওকে থাকা জ্যোতিপ্রতাপ জ্ঞানমার্গ বিদ্যালয়।

ভারতের ‘জঙ্গলমানব’ হিসেবে পরিচিত, পদ্মশ্রীপ্রাপ্ত যাদব পায়েংয়ের বন্ধ্যা বালুচরকে ৫৫০ হেক্টর বিস্তৃত ‘মিনি কাজিরাঙা’ বানিয়ে ফেলেছেন। সেই মোলাই কাঠনিবাড়িই বিশ্বের একমাত্র মানবসৃষ্ট বন যেখানে নিজে থেকে আশ্রয় নেওয়া বাঘ, গন্ডার এবং হাতি রয়েছে। তাঁর নামাঙ্কিত আন্তর্জাতিক সংরক্ষণ পুরস্কার পাওয়া দক্ষিণ ভারতের ‘জলমানব’ এম করুণাকর রেড্ডি দুর্যোগ মোকাবিলা ও ত্রাণ ব্যবস্থাপনায় অবদানের জন্য ভারতের ‘ক্রাইসিস ম্যান’ হিসেবেও পরিচিত। পুরস্কারটি চালু করেছে যোরহাটের জ্যোতি-প্রতাপ এডুকেশন ট্রাস্ট। অর্থমূল্য ২ লক্ষ টাকা। যাদব পায়েং নিজে ও পাঁচ সদস্যের নির্বাচন কমিটি জল সংরক্ষণে অসামান্য অবদানের জন্য রেড্ডির নাম বেছে নিয়েছে।

কিন্তু কেন অখ্যাত টিওকের অচেনা স্কুলে এই পুরস্কারের আয়োজন?

অভয়পুরিয়া গ্রামের কৃষক-সন্তান প্রতাপ শইকিয়া অভাবে লেখাপড়া না করে ১৪ বছরেই কালিয়াপানির রাস্তায় পানের দোকান দেন। তিলে তিলে জমানো টাকা দিয়ে সেখান থেকে খাবার হোটেল তৈরি করে ফেলেন। দুর্দান্ত ব্যবসায়িক বুদ্ধি আর ভাগ্যকে হাতিয়ার করে রেশম ও আগর ব্যবসায় সাফল্য আসে। তারপর ধাপে ধাপে চা বাগান, চা কারখানা, বেশ কিছু বাজারের ইজারা, ভেড়ি, ইটভাটার মালিকানা, পেট্রল পাম্প সবই হয়েছে। ২০২১ সালে ৬.২ বিঘা জমি জুড়ে প্রয়াত স্ত্রী জ্যোতির নামে তিনি তৈরি করেন জ্যোতিপ্রতাপ জ্ঞানমার্গ বিদ্যালয়। যেখানে শিক্ষা দেওয়া হয় বিনামূল্যে। দুর্দান্ত পরিকাঠামো, স্মার্ট ও ডিজিটাল ক্লাসরুম, কম্পিউটার ও রোবোটিক্স ল্যাবসহ ওই স্কুল গুয়াহাটির বড় স্কুলের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারে। সঙ্গে, শ্মশান, বৃদ্ধাশ্রম এবং একটি অনাথাশ্রমও তৈরি করেছেন তিনি। প্রতাপ বলেন, “আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে ঠিক করেছিলাম, এখানকার কোনও শিশুর যেন টাকার অভাবে শিক্ষা অসম্পূর্ণ না থাকে।” একই সঙ্গে পরিবেশ সংরক্ষণেও তাঁর অসীম আগ্রহ, তাই স্কুলে ঢুকতেই দেওয়ালে বিরাট করে চারা রোপণকারী যাদব পায়েংয়ের ছবি ও বার্তা।

পায়েং বলেন, “জীবিত অবস্থায় তাঁর নামে এমন পুরস্কার প্রবর্তন করায় তিনি গর্বিত এবং এতে তাঁর দায়িত্ব আরও বেড়ে গেল।”

রেড্ডির কথায়, “যাদব পায়েং গোটা দেশ ও বিশ্বের কাছে এক অনুপ্রেরণা।” ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে জল সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার জন্য কাজ করা রেড্ডি জানান, হায়দ্রাবাদে তিনি যে জেলার বাসিন্দা সেখানে বৃষ্টি কম। তাই বহু মানুষ জেলা ছেড়ে চলে যাচ্ছিলেন। তাঁদের জল সংরক্ষণ ও জলের জন্য হাঁটার মতো বহু পদক্ষেপের মাধ্যমে মানুষের সচেতনতা বেড়েছে। এখন কম দামে ও স্থানীয় সামগ্রীতে তৈরি বৃষ্টির জল সংরক্ষণের ২০ হাজার পরিকাঠামো গড়ে উঠেছে জেলায়। কৃষকরা সেই জলই ব্যবহার করছেন। এ পি জে আবদুল কালামের সম্মানে তাঁরা দেশে ১৯.৫ কোটি চারা লাগিয়েছেন। এ বার পায়েংয়ের সম্মানে ৫ বছরে ১ কোটি চারা পোঁতা হবে। এই অভিযানে হেল্পলাইনে হোয়াটসঅ্যাপ করে যে কেউ সামিল হতে পারেন।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Jadav Payeng Environmentalist

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy