কোনও কর্মী চাকরিহারা হলে সঙ্গে সঙ্গেই তাঁর ইপিএফ (কর্মী প্রভিডেন্ট ফান্ড)-এর ৭৫ শতাংশ টাকা তুলে নিতে পারবেন। চাকরি ছাড়ার পরে এক বছর কর্মহীন থাকলে ইপিএফের সব টাকাই তুলে নিতে পারবেন ওই কর্মী। বুধবার এমনটাই জানিয়েছে ইপিএফও।
ইপিএফের নিয়মকানুনে সম্প্রতি কিছু পরিবর্তন এনেছে সংস্থার কেন্দ্রীয় অছি পরিষদ। তাতে কোনও কোনও ক্ষেত্রে টাকা তোলায় অপেক্ষার সময় বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষের সমস্যা হবে বলে অভিযোগ করেছে বিরোধী দলগুলির একাংশ। সমাজমাধ্যমেও কেউ কেউ সমালোচনা করেছেন। এই প্রেক্ষাপটে বুধবার ব্যাখ্যা দিল ইপিএফও।
কেন্দ্রীয় শ্রম এবং নিয়োগ মন্ত্রকের অধীনে রয়েছে ইপিএফও। কেন্দ্রীয় সেই মন্ত্রকই বিবৃতি দিয়ে বলেছে, ‘‘কোনও কর্মী চাকরিহারা হলে সঙ্গে সঙ্গেই ইপিএফের ৭৫ শতাংশ টাকা তুলে নিতে পারবেন। এক বছর কর্মহীন থাকলে, পুরো টাকা তুলে নিতে পারবেন। আগে বার বার টাকা তুললে কিছু কিছু ক্ষেত্রে পেনশন খারিজ হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে ফাইনাল সেটলমেন্ট (চূড়ান্ত রফা)-র সময়ে কর্মীর হাতে খুব কম টাকাই থেকে যায়।’’ মন্ত্রকের তরফে আরও জানানো হয়েছে, নতুন এই নিয়মে কর্মীরই আর্থিক সুরক্ষা নিশ্চিত হবে। তাঁর পরিবারকে সমস্যায় পড়তে হবে না।
আরও পড়ুন:
নতুন নিয়মের ব্যাখ্যায় ইপিএফও জানিয়েছে, ৫৫ বছর বয়সের আগে কোনও সদস্য চাকরি ছেড়ে তহবিল (প্রিম্যাচিওর পিএফ সেটলমেন্ট) তুলতে চাইলে তাঁকে ১২ মাস অপেক্ষা করতে হবে। আগে করতে হত দু’মাস। চাকরির মেয়াদ ১০ বছর পূর্ণ হওয়ার আগে কেউ পেনশন অ্যাকাউন্টের টাকা তুলতে চাইলে তাঁকে আগের দু’মাসের জায়গায় অপেক্ষা করতে হবে ৩৬ মাস। আগে ১৩টি কারণে পেনশন তুলে নেওয়া যেত। এখন তা তিনটি কারণ ছাড়া তুলতে পারবেন না কর্মী।
সেই তিনটি কারণ হল— জরুরি প্রয়োজন (শিক্ষা, অসুস্থতা, বিয়ে), আবাসন, বিশেষ পরিস্থিতি। শিক্ষা এবং অসুস্থতার জন্য ইপিএফের তহবিল তুলতে চাইলে সেই নিয়ম আরও শিথিল করেছে কেন্দ্র। শিক্ষার জন্য আংশিক ভাবে তহবিল তোলা যাবে ১০ বার। বিয়ের জন্য পাঁচ বার আংশিক ভাবে তহবিল তোলা যাবে। আগে বিয়ে এবং শিক্ষা মিলিয়ে মোট তিন বার ইপিএফ থেকে আংশিক ভাবে তহবিল তোলা যেত। অসুস্থতা বা ‘বিশেষ পরিস্থিতিতে’ তিন বার ইপিএফ থেকে টাকা তোলা যাবে। একই অর্থবর্ষে সর্বোচ্চ দু’বার তহবিল তোলা যাবে। মন্ত্রক জানিয়েছে, বিশেষ পরিস্থিতিতে বা জরুরি কারণে বছরে দু’বার তোলা যাবে ইপিএফের টাকা। সে ক্ষেত্রে কোনও প্রশ্নও করা হবে না।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রক বিবৃতিতে আরও জানিয়েছে, পিএফ অ্যাকাউন্টে মোট জমা টাকার ন্যূনতম ২৫% অবসরের আগে পর্যন্ত তোলা যাবে না। তা ছাড়াও শিক্ষা, আবাসন, অসুস্থতা বা বিশেষ ক্ষেত্রে ইপিএফের টাকা তোলার নিয়ম শিথিল করা হয়েছে। আগামী এক থেকে দু’মাসে এই পরিবর্তিত নিয়মগুলি কার্যকর হবে। প্রিম্যাচিওর ফাইনাল সেটলমেন্টের ক্ষেত্রে, আগে কোনও ইপিএফও সদস্য দু’মাস চাকরি ছাড়া থাকলে তিনি নিজের গোটা তহবিল তুলে নিতে পারতেন। সেই সময়সীমা এখন বৃদ্ধি করে ১২ মাস করেছে কেন্দ্রীয় সরকার।
কেন ইপিএফের টাকা তোলার ক্ষেত্রে নিয়মের পরিবর্তন করা হয়েছে, তা-ও জানিয়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রক। ইপিএফও-র পরিসংখ্যান বলছে, ইপিএফের সদস্যদের ৫০ শতাংশের যখন ফাইনাল সেটলমেন্ট (চূড়ান্ত রফা) হয়, তখন দেখা যায়, তাঁদের তহবিলে ২০ হাজার টাকার কম রয়েছে। পেনশনের ৭৫ শতাংশই অবসরের চার বছরের মধ্যে তুলে নেওয়া হয়। ইপিএফের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, চাকরি ছেড়ে ২ মাসের মধ্যে সেই কর্মী ইপিএফের সব টাকা তুলে নেন। দু’মাস পরে অন্য কোনও সংস্থায় কাজে যোগ দেন। সেই ব্যক্তি যখন চাকরি ছাড়েন, তখন দেখা যায়, তাঁর ইপিএফ তহবিলে সামান্য টাকা রয়েছে। এ সব কারণেই নিয়ম বদল করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে, ইপিএফের টাকা তোলার প্রক্রিয়াও সরল করা হয়েছে।