নির্বাচনী নথিভুক্তিকরণ আধিকারিকেরা (ইলেক্টোরাল রেজিস্ট্রেশন অফিসার বা ইআরও) আদৌ কোনও ভোটারের নাগরিকত্ব যাচাই করতে পারেন না। তাঁদের সে ক্ষমতা নেই। কারও নাগরিকত্ব নিয়ে সন্দেহ হলে তাঁরা কেবল সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানাতে পারেন এবং নাগরিকত্ব যাচাইয়ের আবেদন জানিয়ে রাখতে পারেন মাত্র। তা করতে গেলেও যথোপযুক্ত কারণ দেখানো বাধ্যতামূলক। বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) সংক্রান্ত একটি মামলায় এমনটাই জানালেন আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ। বক্তব্যের সপক্ষে যুক্তিও দিয়েছেন তিনি।
এসআইআর প্রক্রিয়ার বিরোধিতাকারী এক মামলাকারীর পক্ষে সওয়াল করছেন প্রশান্ত। বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সূর্য কান্ত এবং বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চে এই সংক্রান্ত চূড়ান্ত সওয়ালের চতুর্থ দিন ছিল। মামলাকারীর দাবি, এসআইআর প্রক্রিয়ায় অনেক পদ্ধতিগত খামতি এবং স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে। প্রশান্ত বলেন, ‘‘নাগরিকত্ব যাচাই করা ইআরও-দের কাজ নয়, এটা খুব পরিষ্কার। যদি কারও নাগরিকত্ব সন্দেহজনক বলে মনে হয়, তবে ইআরও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে বিষয়টি পাঠাতে পারেন। কেন সন্দেহজনক মনে হয়েছে, সেই কারণও দেখাতে হবে ইআরও-কে। তার পর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।’’
আরও পড়ুন:
নাগরিকত্ব যাচাইয়ের বৈধ কর্তৃপক্ষ কারা? প্রশান্ত জানিয়েছেন, কোনও আদালত, ফরেনার্স ট্রাইবুনাল কিংবা নাগরিকত্ব আইনের অধীনে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এই ক্ষমতা রয়েছে। এর বাইরে যদি কোনও ভোটার মানসিক ভাবে অসুস্থও হন, তবু তাঁর নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দিতে পারে না নির্বাচন কমিশন। এসআইআর প্রক্রিয়ায় এই নিয়ম মানা হচ্ছে না বলে দাবি করেছেন আইনজীবী। টেনেছেন বিহারের এসআইআর প্রসঙ্গও। সেখানে এসআইআর-এর ফলে প্রাথমিক ভাবে ৬৫ লক্ষ ভোটারের নাম বাদ দেওয়া হয়েছিল। পরে আরও ২১ লক্ষ ভোটারের নাম নতুন করে তালিকায় যোগ হয়। প্রশান্তের দাবি, বহু ভোটারের নাম কমিশন বাদ দিয়ে দিয়েছিল। পরে তাঁদের ফর্ম-৬ পূরণের মাধ্যমে নতুন করে আবেদন করতে বলা হয়েছে। যাঁদের নাম কখনও তালিকায় ছিল না, তাঁরাই এই ফর্ম পূরণ করেন। ফলে এ ক্ষেত্রে মিথ্যাচার হয়েছে।
অসমের এনআরসি প্রসঙ্গও টেনেছেন প্রশান্ত। বলেছেন, ‘‘ভারতের মতো গরিব দেশে শুধু মাত্র নথিপত্র দেখাতে না-পারার জন্য ২৫ শতাংশ মানুষের নাম বাদ চলে যাবে।’’ এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বয়ান এবং প্রতিবেশীদের বক্তব্যও যাচাই করা উচিত বলে মনে করেন তিনি। সওয়ালের শেষে প্রশান্ত জানিয়েছেন, নাগরিকত্ব যাচাইয়ের সবচেয়ে উপযুক্ত পদ্ধতি হতে পারত সামাজিক নিরীক্ষা। গ্রামে কিংবা শহরে ওয়ার্ডভিত্তিক খোলাখুলি আলোচনাসভা বসালেই এই তথ্য অনেক স্পষ্ট ভাবে পাওয়া যেত, মত আইনজীবীর। আগামী ৯ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্টে আবার এই মামলার শুনানি রয়েছে।