তিন মাস আগে ত্রিপুরায় বিধানসভা ভোটের দিন ভূরি ভূরি অভিযোগ এসেছিল ভোটযন্ত্র (ইভিএম) খারাপ হওয়ার। মাঝে কর্নাটকের বিধানসভা নির্বাচন ছিল ব্যতিক্রম। কিন্তু সোমবার দেশের চারটি লোকসভা ও ১০টি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে ফের বিতর্কের মুখে ইভিএম।
উত্তরপ্রদেশের কৈরানা লোকসভা হোক বা ওই রাজ্যেরই নুরপুর বিধানসভা, মহারাষ্ট্রের পালঘর বা বাংলার মহেশতলা— নানা জায়গা থেকেই এ দিন ইভিএমে ত্রুটির অভিযোগ এসেছে। কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনে দরবার করতে গিয়েছে কংগ্রেস, আরএলডি, সমাজবাদী পার্টির মতো বিরোধী দলগুলি। একই অভিযোগ জানিয়েছে বিজেপিও। লোকসভা ভোটের বছরখানেক আগে এমন বিতর্ক সামনে আসায় অস্বস্তির মুখে কমিশনই।
যোগী আদিত্যনাথের উত্তরপ্রদেশে ফুলপুর ও গোরক্ষপুরে অখিলেশ যাদব-মায়াবতী জোটের কাছে বিজেপির হারের পরে সে রাজ্যে কৈরানা ও নুরপুরে উপনির্বাচনের দিকে নজর রয়েছে সব মহলেরই। ভোটের দিনে ওই কেন্দ্র থেকেই প্রায় দু’শোটি ইভিএম খারাপ হওয়ার অভিযোগ জমা পড়েছে। মহারাষ্ট্রের পালঘরেও ইভিএমে ত্রুটির অভিযোগ এসেছে। কেন্দ্রে জোট-শরিক হলেও এ ক্ষেত্রে শিবসেনার অভিযোগের নিশানা বিজেপির দিকেই। বিরোধী এনসিপি-র নেতা প্রফুল্ল পটেলের দাবি, পালঘরে ২৫% ইভিএম খারাপ হয়ে পড়ে। মহেশতলায় কিছু বুথে ইভিএম বিভ্রাটের জন্য চার ঘণ্টা ভোট বন্ধ থেকেছে এবং অন্তত ৩৬টি জায়গায় ভিভিপ্যাটে গোলমাল হয়েছে বলে সরব হয়েছে তৃণমূলও। বিহারের জোকিহাট বিধানসভা উপনির্বাচনে অবশ্য বিশেষ কোনও অভিযোগ ওঠেনি।
বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নানা কেন্দ্র থেকে ইভিএমে ত্রুটির অভিযোগই আসতে থাকায় কমিশনের তরফে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়, অত্যধিক গরমে যন্ত্র বিগড়েছে। যা শুনে পটেল মন্তব্যে করেছেন, ‘‘গরমে ইভিএম খারাপ? আমি স্তম্ভিত!’’ মহেশতলা থেকে ইভিএম নিয়ে অভিযোগ আসায় ইলেকট্রনিকস কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া লিমিটেডের (ইসিআইএল) ইঞ্জিনিয়ারদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় কমিশনের তরফে। বাংলার মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক আরিজ আফতাব যন্ত্রের ত্রুটির কারণ নিয়ে সরকারি ভাবে মুখ না খুললেও কমিশন সূত্রের খবর, গরমে ভিভিপ্যাটে সমস্যা হয়েছে বলেই প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ভিভিপ্যাটের ‘পেপার ট্রেল’ খারাপ হয়েছে।
এই প্রেক্ষিতে সব রাজনৈতিক দলেরই প্রশ্ন, এ দেশে প্রবল গরমে ভোট হওয়াই দস্তুর। লোকসভা নির্বাচনও হবে গরমেই। তখন তা হলে কী হবে? কত আর বিকল্প যন্ত্র পাঠিয়ে সমস্যা সামাল দেবে কমমিশন? এই প্রশ্নের কোনও সদুত্তর এই মুহূর্তে অন্তত কমিশন কর্তাদের কাছে নেই।
এর আগে একাধিক বার কমিশনের কর্তারা জানিয়েছেন, ইভিএমে কারচুপি সম্ভব নয়। কিন্তু এ দিন যন্ত্রে গোলমালের খবর আসতেই ফের সেই ‘কারচুপি তত্ত্ব’ সামনে এসেছে। সমাজবাদী পার্টির মুখপাত্র রাজেন্দ্র চৌধুরীর অভিযোগ, ‘‘কৈরানা ও নুরপুরের বিভিন্ন বুথের অন্তত দু’শো ইভিএম কারচুপির কারণে খারাপ হয়েছে। আগের উপনির্বাচনে পরাজয়ের বদলা নিতেই কারচুপির খেলায় নেমেছে বিজেপি।’’ ওই কেন্দ্রে জোটের প্রার্থী দেওয়া অজিত সিংহের দল আরএলডি-র মুখপাত্র অনিল দুবের অভিযোগ, ‘‘বিজেপি যেখানে দুর্বল, সেখানেই ইভিএমে কারচুপি বা খারাপ করে দেওয়া হয়েছে।’’ ইভিএম খারাপ হলেও দলীয় ভোটারদের বুথ না ছাড়ার আর্জি জানান সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ। বিরোধীদের পাশাপাশি ভূপেন্দ্র যাদবের নেতৃত্বে বিজেপির প্রতিনিধিদলও কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছে। উত্তরপ্রদেশের মন্ত্রী শ্রীকান্ত শর্মার পাল্টা কটাক্ষ, ‘‘হার নিশ্চিত বুঝেই বাহানা তুলতে শুরু করেছে বিরোধীরা।’’ কমিশন জানিয়েছে, ইভিএম-ত্রুটির চূড়ান্ত রিপোর্ট দেখে প্রয়োজনে কিছু বুথে ফের নির্বাচন করানো হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy