Advertisement
E-Paper

অবসরপ্রাপ্ত সেনাপ্রধানদের চিঠি মোদীকে

সংসদে বিরোধীদের পর এ বার সামরিক বাহিনীর প্রাক্তন প্রধানরা। প্রশ্ন একটাই, ভোটের আগে নরেন্দ্র মোদীর গাল ভরা প্রতিশ্রুতি কবে পূরণ হবে?প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও সেনাবাহিনীর ‘এক পদ এক পেনশন’-এর দাবি না মেটায় বেশ কয়েক মাস ধরেই ক্ষোভ তৈরি হচ্ছিল।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৭ অগস্ট ২০১৫ ১৬:২৬
এএফপি-র তোলা ফাইল চিত্র।

এএফপি-র তোলা ফাইল চিত্র।

সংসদে বিরোধীদের পর এ বার সামরিক বাহিনীর প্রাক্তন প্রধানরা। প্রশ্ন একটাই, ভোটের আগে নরেন্দ্র মোদীর গাল ভরা প্রতিশ্রুতি কবে পূরণ হবে?

প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও সেনাবাহিনীর ‘এক পদ এক পেনশন’-এর দাবি না মেটায় বেশ কয়েক মাস ধরেই ক্ষোভ তৈরি হচ্ছিল। স্বাধীনতা দিবসের আগের দিন নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে যন্তর-মন্তরে ধর্নায় বসা অবসরপ্রাপ্ত ফৌজিদের তুলে দেওয়া এবং তারপরে লাল কেল্লা থেকে প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতাতেও কোনও আশ্বাস না মেলায়, সেই ক্ষোভের আগুন এ বার বেরিয়ে এল।

আজ সেনা, নৌবাহিনী এবং বায়ুসেনার দশ জন অবসরপ্রাপ্ত প্রধান নরেন্দ্র মোদীকে খোলা চিঠি লিখে যন্তর-মন্তরের ঘটনায় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন। তাঁদের যুক্তি, পুলিশ যে ভাবে ধর্নায় বসা অবসরপ্রাপ্ত ফৌজিদের হেনস্থা করেছে, তাতে তিন বাহিনীর জওয়ানদের মনোবল ও স্বাভিমান ক্ষুণ্ণ হয়েছে। একই সঙ্গে ‘এক পদ এক পেনশন’-এর সমাধান করতে না পারার জন্য সরকারের কড়া সমালোচনা করেছেন তাঁরা। পাশাপাশি আজ থেকে যন্তর-মন্তরে দুই অবসরপ্রাপ্ত ফৌজি আমরণ অনশনেও বসেছেন।

এ হেন প্রতিবাদ-বিক্ষোভের মুখে প্রবল চাপের মুখে মোদী সরকার। সূত্রের খবর, কেন্দ্রের তরফ থেকে ফৌজিদের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে যে, প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরেই তাঁদের সঙ্গে দেখা করবেন। তা সত্ত্বেও কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা মানছেন, এই ভাবে দশ জন প্রাক্তন সামরিক বাহিনীর প্রধান আগে কখনও সরকারের বিরুদ্ধে মুখ খোলেননি। সরকারের পক্ষে এই বিষয়টি যথেষ্ট অস্বস্তিকর। বিশেষত মোদী সরকারের মন্ত্রিসভাতেই ভি কে সিংহ ও রাজ্যবর্ধন রাঠৌরের মতো দু-দু’জন অবসরপ্রাপ্ত ফৌজি রয়েছেন। লক্ষ লক্ষ অবসরপ্রাপ্ত ফৌজি ও তাঁদের পরিবার ভোটব্যাঙ্ক হিসেবেও যথেষ্ট বড়। লোকসভা ভোটের আগে হরিয়ানার রেওয়াড়িতে প্রাক্তন ফৌজিদের সামনে মোদী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, ক্ষমতায় আসার ১০০ দিনের মধ্যে ‘এক পদ এক পেনশন’-এর দাবি পূরণ হবে। কিন্তু আশ্বাস আশ্বাসই রয়ে গিয়েছে। ‘এক পদ এক পেনশন’-এর বাস্তবায়ন নিয়ে অরুণ জেটলির অর্থ মন্ত্রকের সঙ্গে মনোহর পর্রীকরের প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের মতভেদ দেখা দিয়েছে। এখন বিষয়টির নিষ্পত্তির জন্য সপ্তম বেতন কমিশনের কাছে পাঠানো হয়েছে।

অবসরপ্রাপ্ত ফৌজিরা এ সব শুনতে নারাজ। আজ থেকে আমরণ অনশনে বসা অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল পুষ্পেন্দ্র সিংহ বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর কথা অনেক দিন ধরে শুনছি। ছ’-সাতবার আমরা সরকারের কাছে গিয়েছি। আর কথা বলে লাভ নেই।’’ একই যুক্তিতে অনড় হাবিলদার মেজর সিংহও। পুরনো সংবাদপত্র খুলে তিনি দেখান, সিয়াচেন থেকে যুদ্ধজাহাজ আইএনএস বিক্রমাদিত্য, যেখানেই মোদী গিয়েছেন, সেখানেই ‘এক পদ এক পেনশন’-এর কথা বলেছেন। প্রাক্তন ফৌজিদের সংগঠনের প্রধান অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল সতবীর সিংহ বলেন, ‘‘আমরা চাই না বয়স্ক মানুষরা অনশনে বসুন। এঁদের বয়স হয়েছে। কিন্তু এই অপমান মেনে নিতে পারছেন না ওঁরা।’’

যন্তর-মন্তরে ধর্না আজ ৬৪ দিনে পড়েছে। স্বাধীনতা দিবসের আগের দিন নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে পুলিশ সামিয়ানা তুলে নিয়ে গিয়েছিল। জেনারেটর সরিয়ে দিয়েছিল। তারপরেও বিক্ষোভকারীরা হঠেননি। সতবীরের প্রশ্ন, ‘‘কাদের নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে তুলে দিচ্ছে পুলিশ? আমাদের মতো ফৌজিদের? যাঁরা দিনের পর দিন সীমান্তে দেশের নিরাপত্তার দায়িত্ব সামলেছি!’’ একই বিষয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন সামরিক বাহিনীর প্রাক্তন প্রধানরাও। অবিলম্বে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়ে এই ঘটনার তদন্ত দাবি করেছেন তাঁরা।

কর্মরত বা প্রাক্তন সেনা প্রধানরা কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকাশ্যে সমালোচনা করছেন— এমন ঘটনা খুব একটা দেখা যায় না। তা হলে এ বার কেন মুখ খুললেন তাঁরা? খোলা চিঠিতে জেনারেল শঙ্কর রায়চৌধুরী, জে জে সিংহ, এস পদ্মনাভন, দীপক কপূর, বিক্রম সিংহ, ভি এ শর্মা, অ্যাডমিরাল মাধবেন্দ্র সিংহ, এয়ার চিফ মার্শাল এন সি সুরি, এস পি ত্যাগীরা জানিয়েছেন, ‘‘শুধুমাত্র ঔচিত্যের কারণে আমরা নীরব ছিলাম। রাজনৈতিক নেতৃত্বের আমাদের পূর্ণ আস্থা রয়েছে। কিন্তু এই বিষয়টি সমাধানে তাদের অক্ষমতায় আমরা হতাশ। আমরা আমাদের সহকর্মীদের পুরোপুরি পাশে থেকে তাঁদের দাবিকে সমর্থন করছি।’’ প্রাক্তন সামরিক কর্তাদের যুক্তি, ‘‘আগে প্রধানমন্ত্রীর কাছে দরবার করিনি। রাজনৈতিক নেতাদের ঘোষণায় আমাদের বিশ্বাস ছিল। আশা করেছিলাম, স্বাধীনতা দিবসে এই ঘোষণা হবে। দুঃখের কথা তা-ও হয়নি।’’

চাপের মুখে আজ ক্ষোভ চাপা দিতে মুখ খুলেছেন বিদেশ মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল ভি কে সিংহ। যাঁর এখনই মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করা উচিত বলে মনে করছেন অবসরপ্রাপ্ত ফৌজিরা। কিন্তু ভি কে-র যুক্তি, ‘‘প্রধানমন্ত্রী নিজেই বলেছেন খুব শীঘ্রই এই বিষয়টির সমাধান হবে। খুঁটিনাটি বিষয়গুলি খতিয়ে দেখা হচ্ছে যাতে পরে আইনি জটিলতা তৈরি না হয়।’’ প্রাক্তন সেনা কর্তারা এই যুক্তি খারিজ করে দিয়ে বলেছেন, ‘‘সরকার শুধু খুঁটিনাটি সমস্যার কথা আওড়াচ্ছে। নির্দিষ্ট করে কিছু বলছে না। এ তো সাধারণ পাটিগণিত!’’

Jantar Mantar ex army chiefs ex army chiefs leeter orop issue one rank one pension issue modi orop issue
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy