Advertisement
E-Paper

কোর্টকে রসায়নের ‘পাঠ’ দিয়ে ভাইরাল! মধ্যপ্রদেশে স্বামীকে হত্যায় অভিযুক্ত সেই মমতার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড

ময়নাতদন্তের রিপোর্টে স্বামীকে তড়িদাহত করে খুনের ‘প্রমাণ’! বিচারপতিরা তা নিয়ে প্রশ্ন করতেই মহিলা যে জবাব দিয়েছিলেন, তা শুনে গোটা এজলাস স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিল।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০২৫ ১৩:৫০
মমতা পাঠক।

মমতা পাঠক। ছবি: সংগৃহীত।

ময়নাতদন্তের রিপোর্টে স্বামীকে তড়িদাহত করে খুনের ‘প্রমাণ’! বিচারপতিরা তা নিয়ে প্রশ্ন করতেই মহিলা যে জবাব দিয়েছিলেন, তা শুনে গোটা এজলাস স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিল। স্বামী খুনে অভিযুক্ত সেই মহিলা নিজের হয়েই সওয়াল করতে দিয়ে বিচারপতিদের রয়াসনবিদ্যার পাঠ দিয়েছিলেন। ‘ব্যাখ্যা’ দিয়ে বুঝিয়ে ছিলেন, ‘‘আগুনে পোড়া ক্ষত না বিদ্যুতে পোড়া ক্ষত, তা কিছুতেই ময়নাতদন্তে বোঝা সম্ভব নয়।’’

বছর ষাটেকের সেই রসায়নের অধ্যাপিকা মমতা পাঠককে বুধবার স্বামী-হত্যার ওই মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিল মধ্যপ্রদেশ হাই কোর্ট। নিম্ন আদালতে মমতা দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পরেও অন্তর্বর্তী জামিন পেয়েছিলেন। তাঁর প্রতিবন্ধী সন্তানকে দেখভাল করার আর কেউ ছিল না। সেই কারণেই এত দিন মমতা অন্তর্বর্তী জামিনে মুক্ত ছিলেন। বুধবার হাই কোর্ট রায় ঘোষণা করার পরেই মহিলাকে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়েছে।

২০২১ সালের ২৯ এপ্রিল মধ্যপ্রদেশের ছত্তরপুরে খুন হন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চিকিৎসক নীরজ পাঠক। অভিযোগ ওঠে, তাঁর স্ত্রী মমতা প্রথমে স্বামীকে ঘুমের ওষুধ দিয়েছিলেন। তার পর তড়িদাহত করে খুন করেন স্বামীকে। পরে ছেলেকে নিয়ে ঝাঁসি চলে যান। পুলিশের কাছে মমতা বলেছিলেন, ১ মে ঝাঁসি থেকে বাড়ি ফিরে তিনি স্বামীকে মৃত অবস্থায় দেখতে পান। কিন্তু তদন্তে নীরজের একটি ভয়েস রেকর্ডিং উদ্ধার হয়। তাতে জানা যায়, নীরজের উপর অত্যাচার করতেন মমতা। তাঁদের গাড়িচালকের বয়ানেও বিষয়টির সত্যতা স্পষ্ট হয়। এ-ও জানা যায়, মমতা ওই গাড়িচালককে বলেছিলেন, ‘‘বড় ভুল হয়ে গিয়েছে।’’ তদন্তে ধরা পড়ে, অতীতে নীরজের বিরুদ্ধে গার্হস্থ্য হিংসার অভিযোগও দায়ের করেছিলেন মমতা। যদিও সেই অভিযোগ পরে প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন। দু’জনের বৈবাহিক সম্পর্কের টানাপড়েনের কথা জানাজানি হতেই কাঠগড়ায় তোলা হয়েছিল মমতাকে।

নিম্ন আদালতও মমতাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়। সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করেই হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন অধ্যাপিকা। সেখানে নিজেই নিজের হয়ে সওয়াল করার সিদ্ধান্ত নেন। হাই কোর্টে সে রকমই একটি শুনানিতে বৃদ্ধাকে বিচারপতি জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘‘আপনি আপনার স্বামীকে তড়িদাহত করে মেরেছেন। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট নিয়ে আপনার কিছু বলার আছে?’’

তার জবাবেই ময়নাতদন্তের রিপোর্টে কোথায় ‘গলদ’ রয়েছে, আদালতে বুঝিয়ে ছিলেন মমতা। বিচারপতি বিবেক আগরওয়াল ও বিচারপতি দেবনারায়ণ মিশ্রের বেঞ্চের সামনে অধ্যাপিকা বোঝাতে শুরু করেছিলেন, বিদ্যুস্পৃষ্ট হলে দেহের কলাকোষের প্রতিক্রিয়া কেমন হয়, কী কী রাসায়নিক বদল ঘটে। একমাত্র গবেষণাগারে পরীক্ষা করলেই যে তা বোঝা সম্ভব এবং কী ভাবে সম্ভব, সেই জটিল ব্যাখ্যাও দিয়েছিলেন মমতা। তাঁর কথায়, ‘‘ময়নাতদন্তে শুধুমাত্র চোখের দেখায় এ সব বোঝা সম্ভব নয়।’’

ওই শুনানির পর রায়দান স্থগিত রেখেছিলেন বিচারপতিরা। সমস্ত তথ্যপ্রমাণ নজরে রেখে বুধবার নিম্ন আদালতের রায় এবং সাজা বহাল রাখল মধ্যপ্রদেশ হাই কোর্ট।

Madhya Pradesh High Court Murder Life sentence
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy