Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

আয় কমেছে কেন্দ্রের, ছাঁটাই রাজ্যের পাওনাও

অর্থনীতির ঝিমিয়ে পড়ার অবস্থা কাটাতে মোদী সরকার মাঠে নামবে বলে যখন শিল্পমহল অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে, তখন অর্থ মন্ত্রকের তথ্যই বলছে— চলতি অর্থ বছরের শুরু থেকেই খরচ ছাঁটা শুরু হয়েছে।

অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। —ফাইল চিত্র।

অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। —ফাইল চিত্র।

প্রেমাংশু চৌধুরী
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২০ অগস্ট ২০১৯ ০৩:০৮
Share: Save:

বেসরকারি লগ্নিতে ভাটার টান। বাজারে বিক্রিবাটা কমে গিয়েছে। রফতানিও তেমন বাড়ছে না। অর্থনীতির রেলগাড়ি ছোটার জন্য জরুরি চারটি ইঞ্জিনের মধ্যে বাকি থাকে একমাত্র সরকারি খরচ। কিন্তু সেখানেও টান পড়েছে।

অর্থনীতির ঝিমিয়ে পড়ার অবস্থা কাটাতে মোদী সরকার মাঠে নামবে বলে যখন শিল্পমহল অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে, তখন অর্থ মন্ত্রকের তথ্যই বলছে— চলতি অর্থ বছরের শুরু থেকেই খরচ ছাঁটা শুরু হয়েছে। কেন্দ্রীয় প্রকল্পে খরচে রাশ টানা হচ্ছে। রাজস্ব আয় থেকে রাজ্যের ভাগেও কম টাকা যাচ্ছে। চতুর্দশ অর্থ কমিশনের নিয়ম মেনে কেন্দ্রের মোট রাজস্ব আয়ের ৪২ শতাংশ রাজ্যগুলির মধ্যে ভাগ করে দেওয়ার কথা। কিন্তু বাজেট অনুযায়ী, চলতি অর্থ বছরে মাত্র ৩৩ শতাংশ রাজ্যগুলির মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হবে।

অর্থনীতিবিদদের বক্তব্য, এমনিতেই যখন অর্থনীতি ঝিমিয়ে পড়ছে, তখন সরকারি প্রকল্পেই যদি কম খরচ হয়, তা হলে আর্থিক বৃদ্ধির হার আরও কমে যাবে। রাজ্যগুলি যদি কেন্দ্রের থেকে কম টাকা পায়, তা হলে রাজ্য স্তরেও উন্নয়ন প্রকল্পে খরচ কমবে। এ হল দুষ্টচক্রের ফাঁদ। এক দিকে, আর্থিক বৃদ্ধি কমে যাওয়ায় রাজস্ব আয় কমছে। অন্য দিকে, রাজস্ব আদায় কমছে বলে খরচে রাশ টানা হচ্ছে। তার ফলে আরও বৃদ্ধি কমার আশঙ্কা।

গত অর্থ বছরের শেষ তিন মাস, জানুয়ারি থেকে মার্চে আর্থিক বৃদ্ধির হার ৫.৮ শতাংশে নেমে এসেছিল। যা প্রথম মোদী জমানায় সর্বনিম্ন। অর্থনীতিবিদদের মতে, লোকসভা ভোটের আগে অন্তর্বর্তী বাজেটে ঘাটতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে গিয়ে সরকারি খরচ ছাঁটাইয়ের ফলেই বৃদ্ধির হার ধাক্কা খেয়েছিল। কিন্তু নতুন অর্থ বছরেও ছবিটা বদলায়নি।

পরিসংখ্যান বলছে, এপ্রিল থেকে জুনে পরিকাঠামো তৈরিতে খরচ বা মূলধনী খাতে ব্যয় গত বছরের এই তিন মাসের তুলনায় ২৭ শতাংশ কমে গিয়েছে। যেখানে বাজেট অনুযায়ী মূলধনী খাতে ব্যয় এ বছর ১১ শতাংশ বাড়ার কথা। রাজস্ব খাতে এই তিন মাসে খরচ বেড়েছে মাত্র ৬ শতাংশ। যেখানে গোটা বছরে রাজস্ব ব্যয় ২২ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাওয়ার কথা।

রাজ্যের উন্নয়নের খরচে ছাঁটাইয়ের ক্ষেত্রেও একই ছবি। এক দিকে, কেন্দ্রের আয় থেকে রাজ্যগুলিকে প্রাপ্য অনুযায়ী ৪২ শতাংশ ভাগ দেওয়া হচ্ছে না। এমনিতেই মোদী সরকার সেস-সারচার্জ বসিয়ে আয়ের পথ নিয়েছে। এই খাতে রোজগারের ভাগ রাজ্যগুলিকে দেওয়ার কোনও দায় কেন্দ্রের নেই। ফলে রাজ্যের প্রাপ্য অর্থ কমে যাচ্ছে। অন্য দিকে, অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের বাজেট বলছে, কেন্দ্রীয় সরকারি প্রকল্পগুলিতে মোদী সরকার খরচ বাড়িয়েছে। কিন্তু যে সব প্রকল্পে কেন্দ্র রাজ্যগুলিকে অর্থসাহায্য দেয়, সেই সব প্রকল্পে মোট বাজেটের সেই ৯ শতাংশই খরচ হচ্ছে।

কেন এ ভাবে খরচে ছাঁটাই হচ্ছে?

অর্থ মন্ত্রক সূত্রের যুক্তি, প্রাথমিক হিসেব অনুযায়ী চলতি বছর এপ্রিল-জুনে কর্পোরেট কর থেকে আয় মাত্র ৬ শতাংশ বেড়েছে। আয়কর, শুল্ক থেকে আয় বৃদ্ধির হার কিছুটা ভাল হলেও লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় অনেক কম। পেট্রল-ডিজেলে উৎপাদন শুল্ক থেকে আয় বেড়েছে মাত্র ৮ শতাংশ।

কিন্তু কেন্দ্রীয় কর বাবদ আয়ের ৪২ শতাংশ রাজ্যের সঙ্গে ভাগ করা হচ্ছে না কেন? অর্থ মন্ত্রক সূত্রের ব্যাখ্যা, চতুর্দশ অর্থ কমিশনের সুপারিশের এটি শেষ বছর। রাজ্যের প্রাপ্য অধিকাংশ অনুদান আগেই দেওয়া হয়ে গিয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Economy Economic Slowdown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE