Advertisement
E-Paper

দর কত? রিসর্ট-রাজনীতির রমরমায় উঠছে প্রশ্ন

হোলির এক দিন আগেই হঠাৎ খবর এল, মধ্যপ্রদেশের ১৯ বিধায়ক উধাও। মোবাইল ফোনও বন্ধ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১২ মার্চ ২০২০ ০৪:২৮
কমল নাথ (বাঁ দিকে) ও জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া। —ফাইল চিত্র

কমল নাথ (বাঁ দিকে) ও জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া। —ফাইল চিত্র

আস্থা ভোটের মুখে তখন জনতা পার্টির নেতা রামকৃষ্ণ হেগড়ে। কংগ্রেস চাইছে তাঁর সরকার ফেলে দিতে। ইন্দিরা গাঁধী দেশের প্রধানমন্ত্রী। বেঙ্গালুরুর উপকণ্ঠে এক বিলাসবহুল রিসর্টে ৮০ জন বিধায়ককে পাঠালেন হেগড়ে। বললেন, বিধায়কদের বাঁচাতে হবে ‘কংগ্রেসের শকুন’দের হাত থেকে।

সে যাত্রায় সরকার রক্ষা হয়েছিল হেগড়ের। কিন্তু ভারতের রাজনীতিতে রাজনীতির একটি অন্য ঘরানা শুরু হয়ে গিয়েছিল, ‘রিসর্ট রাজনীতি’। অনেকে বলেন, সরকার ফেলে দেওয়ার রেওয়াজ কর্নাটকের আগেই শুরু হয়েছিল। তবে, এ ব্যাপারে এখনও পর্যন্ত সকলকে টেক্কা দিয়েছে কর্নাটকই। ধীরে ধীরে অবশ্য এখন সে সংস্কৃতি ছড়িয়ে পড়েছে অন্য রাজ্যেও। যেমন এখন মধ্যপ্রদেশে। সাম্প্রতিক কালে ঘটতে দেখা গিয়েছে কর্নাটক, মহারাষ্ট্রেও। অতীতে বেশির ভাগ অভিযোগ উঠত কংগ্রেসের বিরুদ্ধে, এখন বিজেপির বিরুদ্ধে।

হোলির এক দিন আগেই হঠাৎ খবর এল, মধ্যপ্রদেশের ১৯ বিধায়ক উধাও। মোবাইল ফোনও বন্ধ। তাঁদের বেশির ভাগই জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার অনুগামী। কয়েক ঘণ্টা পরে আচমকা তাঁদের দেখা গেল বেঙ্গালুরুর কাছে এক রিসর্টে। ২৭৫ একর এলাকায় ছড়িয়ে থাকা সবুজ বাগানে। সকলের হাতে পদত্যাগপত্র। ঝড় উঠল ভোপাল থেকে দিল্লিতে। বিজেপি দাবি করল, ‘‘ওখানে সংখ্যাটি ১৯। আসলে ইস্তফা দিতে রাজি প্রায় ৩০ জন বিধায়ক।’’

২২ জনের ইস্তফার চিঠি জোগাড়ও করে ফেলল বিজেপি। কাল রাতেই কমল নাথ স্থির করলেন, বাকি বিধায়কদের পাঠাবেন জয়পুর। কিন্তু আশ্বস্ত নয় বিজেপিও। নিজেদের বিধায়কদের নিয়ে এলেন দিল্লিতে। সেখান থেকে গুরুগ্রামের পাঁচতারা হোটেলে।

ফলে এখন যা পরিস্থিতি, ‘হিন্দুস্তানের দিল’ বা ‘ভারতের হৃদয়’ বলে পরিচিত মধ্যপ্রদেশে কোনো বড় মাপের জনপ্রতিনিধিই নেই। সংসদ চলছে, সাংসদরা দিল্লিতে। আর বিধায়কেরা তিন রাজ্যে ছড়িয়ে। সংসদ চত্বরে হিসেব কষছিলেন এক সাংসদ। প্রতি বিধায়কের থাকা-খাওয়া নিয়ে দিনে খরচ অন্তত ২৫ হাজার টাকা। চার্টার্ড বিমানে তাঁদের নিয়ে আসা-যাওয়া করাটাও লক্ষ লক্ষ টাকার ব্যাপার। সব মিলিয়ে কোটি কোটি টাকার খেলা। তার উপর অভিযোগ বিধায়কদের সঙ্গে রাখতেও খরচ হচ্ছে কোটি কোটি টাকা।

নৈতিকতার প্রশ্নটি এখানেই উঠছে, বিধায়কদের যদি ভিন্ রাজ্যে আড়াল করতেই হয়, তা হলে বিধানসভা রাখার কি দরকার?

মধ্যপ্রদেশের বিজেপি বিধায়কদের গুরুগ্রামের হোটেলে রেখে সদর দফতরে আসা এক নেতা বললেন, ‘‘তাঁরা উৎসবের মেজাজে আছেন। সরকার গড়লে সকলেরই লাভ!’’ কিন্তু বিজেপি বিধায়কদের কেন হোটেলে রাখতে হচ্ছে? নেতার জবাব: ‘‘কমল নাথ তো দাবি করছেন, বিজেপি বিধায়করাও না কি তাঁর সঙ্গে আছেন!’’ কংগ্রেস নেতা শোভা ওঝা বললেন, ‘‘বিজেপি ধোঁকা দিয়ে কংগ্রেসের বিধায়কদের নিয়ে গিয়েছেন। ১৯ জনের মধ্যে দশ জনই বিজেপিতে যেতে রাজি নন। তাঁদের কথা, জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া না হয় নিজেরটা গুছিয়ে নেবেন। বাকিরা কেন ইস্তফা দিয়ে বিধায়ক পদ খোয়াবেন? আবার তো লড়ে জিততে হবে।’’

বেঙ্গালুরুতে এই বিধায়কদের বোঝাতে দুই নেতাকে পাঠিয়েছেন কমল নাথ। হাল ধরছেন কর্নাটকে কংগ্রেসের ‘সঙ্কটমোচক’ বলে পরিচিত ডি কে শিবকুমার। রাহুল গাঁধীর চাপে আজই যাঁকে সভাপতি করেছেন সনিয়া গাঁধী। শিবকুমার বলেন, ‘‘কংগ্রেসের সব বিধায়ক ফিরে যাবেন।’’ আবার বিজেপি বলছে, আশির বেশি যে কংগ্রেস বিধায়ককে অশোক গহলৌতের রাজ্যে নিয়ে গিয়েছেন কমল নাথ, তার মধ্যে ৬ জনও যোগাযোগ রাখছেন। দিগ্বিজয় বলছেন, ‘‘সামনের সপ্তাহে আস্থা ভোটেই প্রমাণ হবে, কত জন কার সঙ্গে। আমরা জিতছিই। বিজেপির ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হবে।’’ কংগ্রেস নেতাদের অসন্তোষ ঠেকাতে মন্ত্রিসভা ঢেলে সাজানোরও পরিকল্পনা করছেন মুখ্যমন্ত্রী।

Kamal Nath Jyotiraditya Scindia Resort Politics Congress BJP Madhya Pradesh
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy