Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Russia Ukraine War

Russia Ukraine war: ‘রাত ৩টে থেকে এয়ার স্ট্রাইক হচ্ছে, বাঙ্কারে আছি, ভারত সরকার দ্রুত কিছু করুক’

এ বার মনে হয় আমাদের উদ্ধার করার ব্যাপারে ভারত সরকারের অনেক বেশি সক্রিয় হওয়া উচিত। কোথাও সেটার অভাব হচ্ছে।

কিভের আকাশে বোমারু বিমান। ছবি: রয়টার্স

কিভের আকাশে বোমারু বিমান। ছবি: রয়টার্স

মহম্মদ রাকিম হোসেন
কিভ শেষ আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৫:৫৬
Share: Save:

ক্রমশ খারাপ হয়ে যাচ্ছে কিভের পরিস্থিতি। বাড়ি থেকে বহু দূরে আপাতত আমরা ভারতীয় পড়ুয়ারা যতটা সম্ভব জোট বেঁধে থাকছি। এই পরিস্থিতিতে নিজেদের চেষ্টায় দেশে ফেরা কবে আদৌ সম্ভব হবে, জানা নেই। দেশে ফেরাতে ভারতীয় দূতাবাসের থেকে আমরা আরও একটু সহযোগিতা আশা করছি।

পশ্চিম ইউক্রেন সীমান্তের চারটি প্রতিবেশী দেশ রোমানিয়া, পোলান্ড, হাঙ্গেরি এবং স্লোভাকিয়ায় নিয়ে গিয়ে উড়ানে দেশে ফেরানোর পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিল ভারতীয় দূতাবাস। দূতাবাসের তরফ থেকে এখন বলা হচ্ছে, ‘তোমরা সীমান্তে চলে এসো। তার পরে আমরা ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।’ কিন্তু উত্তর-মধ্য ইউক্রেনের কিভ শহর থেকে এই যুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যে পশ্চিম ইউক্রেনের ওই সীমান্তবর্তী এলাকায় নিজেদের উদ্যোগে ও ব্যবস্থায় আদৌ কী ভাবে পৌঁছনো সম্ভব, সেই প্রশ্নের উত্তর কিন্তু কেউ দিচ্ছেন না।

খবর পেলাম, যে কোনও কারণেই হোক আপাতত পোলান্ড সীমান্ত দিয়ে যাওয়া বন্ধ আছে। খোলা আছে হাঙ্গেরি এবং রোমানিয়া সীমান্ত। ওই দুই সীমান্তে পৌঁছতে কিভ থেকে ট্রেনে লাগে ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা। আপাতত গাড়ি ছাড়া যাওয়ার পথ নেই। ওই দীর্ঘ সময়ে রাস্তায় যে কোনও মুহূর্তে বিপদ ঘটে যেতে পারে। তাই আমরা নিজেরা সেখানে পৌঁছতে ভয় পাচ্ছি। সমস্যা আরও একটা। যাঁরা ক্যাব ভাড়া করে নিজেরা গিয়েছেন, তাঁদের প্রচুর টাকা দিয়ে যেতে হয়েছে। মুহূর্তের মধ্যে বেড়ে যাচ্ছে সেই ভাড়ার অঙ্কটাও। আমাদের পক্ষে এত টাকা খরচ করে বিপদ ঘাড়ে নিয়ে সেখানে পৌঁছনো কার্যত অসম্ভব।

এ দিকে কাল রাত থেকে পরিস্থিতি অনেকটাই খারাপ হয়েছে। চকোলিভস্কি বুলেভার্ডের ১৬তলা হস্টেলের বাঙ্কারে অনেকটা সময় কাটাতে বাধ্য হচ্ছি আমরা। পুরনো ওই বম্ব শেল্টারে গত রাতে প্রায় সাড়ে তিনশো পড়ুয়া ছিলাম। আমি এবং আমার রুমমেট রাত দশটা থেকে সকাল ছ’টা পর্যন্ত ওখানে ছিলাম। সেখান থেকে ঘরে এসে একটু ঘুমিয়ে নিয়েছি। তা-ও খুব ভয়ে ভয়ে। কখন কী ঘটে, সেই দিক ভেবে সজাগ ঘুম যাকে বলে। মূলত রাত তিনটে থেকে সকাল ছ’টা পর্যন্ত গান বা এয়ার স্ট্রাইক হচ্ছে। তবে আজ, সকাল আটটা নাগাদও বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পেয়েছি।

হস্টেলের নীচে একটা সুপার মার্কেট আছে ঠিকই। কিন্তু সব বাজারে রেডিমেড ফুড শেষ হয়ে গিয়েছে। অন্য খাবার যা পাওয়া যাচ্ছে, তা-ও প্রায় দু’-তিন গুণ দামে বিক্রি হচ্ছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকাকালীন কাবলি ছোলা কিনে রেখেছিলাম। সেটা কাল রাতে ভিজিয়ে রেখেছি। এখন ভাত আর কাবলি ছোলার তরকারি রান্না করব। পরশু চিকেন রান্না করেছিলাম। কাল রাতেই তা শেষ হয়ে গিয়েছে। যা খাবার মজুত করা আছে আমাদের কাছে, তাতে আর কয়েক দিন ভাল করে চলে যাবে। কিন্তু তার পরে কী হবে, জানি না।

মালদার রতুয়ায় বাড়ি আমার। মা, বাবা, ভাই আর বোন রয়েছে বাড়িতে। ওঁদের সে ভাবে সব কিছু বলতে পারছি না। তবে ভিডিয়ো কল করে একাধিক বার কথা হচ্ছে। আমি একা নয়, কয়েক হাজার ভারতীয় এ দেশে আটকে আছেন। যাঁদের অধিকাংশ পড়ুয়া। এ বার মনে হয় আমাদের উদ্ধার করার ব্যাপারে ভারত সরকারের অনেক বেশি সক্রিয় হওয়া উচিত। কোথাও সেটার অভাব হচ্ছে।

ডাক্তারি পড়ুয়া,

অনুলিখন: জয়তী রাহা

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Russia Ukraine War
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE