Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

ভুয়ো সংস্থায় ভারী জিডিপি! ফাঁক দেখাল এনএসএসও

এনএসএসও-র সমীক্ষা বলছে, কোম্পানি বিষয়ক মন্ত্রকের তালিকাভুক্ত কর্পোরেট সংস্থার তথ্য থেকেই জিডিপি-র হিসেব কষা হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে এক-তৃতীয়াংশের বেশি সংস্থার কোনও খোঁজই মেলেনি!

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০১৯ ০২:২৩
Share: Save:

নরেন্দ্র মোদী সরকার ক্ষমতায় এসে জিডিপি পরিমাপের পদ্ধতি বদলে দিয়েছিল। তার পরেই আর্থিক বৃদ্ধির হারে ভারত বিশ্বসেরা হয়ে ওঠে। কিন্তু লোকসভা ভোটের প্রচারপর্বের মধ্যেই সেই জিডিপি মাপার পদ্ধতিতে এ বার অসংখ্য ছিদ্র খুঁজে বের করল সরকারেরই সংস্থা ন্যাশনাল স্যাম্পল সার্ভে অর্গানাইজেশন (এনএসএসও)।

এনএসএসও-র সমীক্ষা বলছে, কোম্পানি বিষয়ক মন্ত্রকের তালিকাভুক্ত কর্পোরেট সংস্থার তথ্য থেকেই জিডিপি-র হিসেব কষা হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে এক-তৃতীয়াংশের বেশি সংস্থার কোনও খোঁজই মেলেনি!

প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে কি ভুয়ো সংস্থার তথ্যের ভিত্তিতেই মোদী জমানায় জিডিপি-র হিসেব কষা হয়েছে? আর তার ভিত্তিতেই আর্থিক বৃদ্ধির হারে ভারত বিশ্বসেরা বলে ঢাক পিটিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী-অরুণ জেটলিরা?

প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম একে ‘কেলেঙ্কারি’ আখ্যা দিয়ে তদন্তের দাবি করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘এনএসএসও-র রিপোর্ট আর্থিক বৃদ্ধির পরিসংখ্যানে বিরাট ফাঁক বের করে ফেলেছে। এখন স্পষ্ট যে সরকার ভুয়ো তথ্য কাজে লাগাচ্ছে। পরিসংখ্যান মন্ত্রকের ভুল পরিসংখ্যান প্রকাশ একটা কেলেঙ্কারি। এর তদন্ত হওয়া দরকার।’’

চিদম্বরমের অভিযোগ, সরকারের রাজনৈতিক কর্তাব্যক্তিরা গোটা প্রক্রিয়ায় নাক গলিয়েছেন। কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান মন্ত্রক এবং এনএসএসও-র অফিসারদের ভয় দেখিয়েছেন। কিন্তু অর্থনীতির উজ্জ্বল ছবি তুলে ধরার চেষ্টা হলেও, আমজনতার দৈনন্দিন জীবনে রুটিরুজির সমস্যা, চাষিদের দুর্ভোগ, ঋণের বোঝা, ছোট-মাঝারি শিল্পের দুর্ভোগ থেকেই অর্থনীতির আসল ছবি স্পষ্ট। অর্থ মন্ত্রকের আর্থিক বিষয়ক দফতর গত মাসে যে রিপোর্ট দিয়েছে, তাতেও অর্থনীতির মলিন ছবির কথাই বলা হয়েছে।

এর আগে এনএসএসও-র বেকারি সংক্রান্ত সমীক্ষা ধামাচাপা দিয়ে রাখার চেষ্টা করেছিল মোদী সরকার। যা নিয়ে আপত্তি তুলে পরিসংখ্যান কমিশনের সদস্যরা পদত্যাগ করেন। সেই সমীক্ষা ফাঁস হয়ে যাওয়ার পর দেখা যায়, মোদী জমানায় বেকারত্বের হার গত ৪৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।

এ বার এনএসএসও ২০১৭-র জুন পর্যন্ত ১২ মাস ধরে সমীক্ষা চালিয়ে জানিয়েছে, কোম্পানি বিষয়ক মন্ত্রকের এমসিএ-২১ তথ্যভাণ্ডারের ৩৬ শতাংশ সংস্থারই খোঁজ মিলছে না। অথচ কোম্পানি বিষয়ক মন্ত্রকের তথ্য অনুযায়ী, এই সংস্থাগুলির সক্রিয় থাকার কথা। নিয়মিত ভাবে রিটার্ন ফাইল করার কথা। তথ্য খতিয়ে না দেখেই পরিসংখ্যান মন্ত্রক কেন তার ভিত্তিতে জিডিপি-র হিসেব কষল, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন পরিসংখ্যানবিদরাও।

অস্বস্তিতে পড়ে পরিসংখ্যান মন্ত্রক এর বিশদ ব্যাখ্যা দিয়ে বিবৃতি জারি করেছে। মন্ত্রকের যুক্তি, অর্থনীতির কাঠামোয় পরিবর্তনের ফলে জিডিপি মাপার পদ্ধতিও বদলের দরকার ছিল। শিল্পের বাৎসরিক সমীক্ষার বদলে কোম্পানি বিষয়ক মন্ত্রকের তথ্য ব্যবহার করার বিষয়টিও ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টস স্ট্যাটিসটিক্সের উপদেষ্টা কমিটিতে দীর্ঘ আলোচনার পরেই ঠিক হয়। এনএসএসও-র সাম্প্রতিক সমীক্ষাটি পরিষেবা ক্ষেত্রের তথ্যে কোথাও ফাঁক রয়েছে কি না। তা দেখার জন্য করা হয়েছিল। এনএসএসও-র রিপোর্ট নিয়েও উপদেষ্টা কমিটিতে আলোচনা হবে। কিন্তু তাই বলে জিডিপি হিসেবের পদ্ধতিতে এর কোনও প্রভাব পড়ছে না। পরিসংখ্যান মন্ত্রক জানিয়েছে, দেশের সমস্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের হিসেব কষতে সপ্তম আর্থিক গণনা শুরু হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

GDP NSSO Indian Economy
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE