ইতিউতি ছড়িয়ে রয়েছে জলের বোতল, ছেঁড়া চটি, জুতো, দলীয় পতাকার টুকরো, জামাকাপড়ের অংশও। আশপাশে তখনও উপড়ে পড়ে রয়েছে বিদ্যুতের খুঁটি, ভাঙা গাছের ডাল। মাঠে আজ সকালে ভিড়ের লেশমাত্র নেই বটে। তবে ঘটনাস্থল দেখলেই বোঝা যায়, ঝড় বয়ে গিয়েছে তার উপর দিয়ে।
গত কাল তামিলনাড়ুর কারুরে জনসভার আয়োজন করেছিলেন দক্ষিণের জনপ্রিয় তারকা-রাজনীতিবিদ থালাপতি বিজয়। তাঁকে দেখতে ভিড় জমান প্রায় ২৭ হাজার মানুষ। দুপুর ৩টে নাগাদ সভা শুরু করার কথা ছিল বিজয়ের। সকাল ১১টা থেকেই ভিড় জমাতে শুরু করেন অনুরাগীরা। এ দিকে প্রায় ৬ ঘণ্টা দেরিতে পৌঁছন বিজয়। খিদে, তৃষ্ণা, প্রবল গরম উপেক্ষা করে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষারত মানুষের তখন ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙেছে। সন্ধে ৭টা ৪০ মিনিট নাগাদ প্রচার-যানে উঠে বিজয় বক্তৃতা দেওয়া শুরু করার খানিক ক্ষণের মধ্যেই তাঁর কাছাকাছি আসার জন্য ভক্তদের মধ্যে হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। আশপাশের গাছে, বাড়ির ছাদেও তিলধারণের জায়গা নেই। তার মধ্যে কোথাও গাছের ডাল ভেঙেছে, সেই ডালে লেগে ভেঙে পড়ে বিদ্যুতের খুঁটি। তড়িদাহত হওয়ার ঘটনা এড়াতে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দেন কর্তৃপক্ষ। ফলে অন্ধকারে প্রবল ঠেলাঠেলি শুরু হয়। ভিড়ের চাপে অজ্ঞান হয়ে যান অনেকে। অনেকে মাটিতে পড়ে যান। তাঁদের উপর দিয়েই বিজয়ের গাড়ির দিকে এগোতে থাকে ভিড়। এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, তারকা যদি ভিড় উপেক্ষা না করে এক বারও হাত নাড়তেন, তা হলে হয়তো এতটা বেপরোয়া হয়ে উঠত না জনতা। উনি বিষয়টি প্রথমে পাত্তাই দেননি। ঘুরেও তাকাননি। যদিও বিজয় পরে জানিয়েছেন, অস্বাভাবিক কিছু ঘটেছে আঁচ করে তিনি খানিক ক্ষণের মধ্যে বক্তৃতা থামিয়ে দেন। কিন্তু তত ক্ষণে পদদলিত হয়ে মৃত্যু হয়েছে বহু মানুষের। প্রশাসন সূত্রের খবর, মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৪০ হয়েছে।
মা-কাকিমার সঙ্গে সভায় গিয়েছিল ২ বছরের ছোট্ট থিরু বিষ্ণু। ভিড়ে মৃত ৪০ জনের মধ্যে সে-ই সবচেয়ে ছোট। মৃতদের তালিকায় অন্তত ১০ জন শিশু রয়েছে। ছেলের মৃতদেহ আঁকড়ে কাঁদছে মা, অসুস্থ ছেলেকে কোলে নিয়ে সাহায্যের জন্য আর্ত চিৎকার করছেন বাবা— হৃদয় বিদারক এমন নানা চিত্র ছড়িয়ে পড়েছে সমাজমাধ্যমে। থিরুর পরিবার অবশ্য বলেছে, ‘‘ভুল আমাদেরই। অত ছোট বাচ্চাকে ভিড়ে নিয়ে যাওয়াই কাল হয়েছে।’’
গতকালের সেই ভিড়ে ছিলেন ২২ বছরের বৃন্দা। দু’বছরের ছেলেকে দিদির কাছে রেখে প্রাণের তারকাকে চোখের দেখা দেখতে ছুটেছিলেন মাঠের পানে। বৃন্দার দিদি জানালেন, পদপিষ্ট হওয়ার খবর পেয়ে তাঁরা বৃন্দাকে ফোন করতে শুরু করেন। ফোন বেজে গিয়েছিল। রাত সাড়ে দশটার পরে সুইচ অফও হয়ে যায়। আজ সকালে অনুষ্ঠানের আয়োজকদের বৃন্দার ছবি দেখানো হলে জানা যায়, কালকের মৃত্যুমিছিলে নাম রয়েছে ওই তরুণীরও। এই ঘটনায় মর্মাহত বিজয় ও তাঁর দল টিভিকে মৃতদের পরিবার পিছু ২০ লক্ষ টাকা এবং আহতদের ২ লক্ষ করে টাকা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন। বৃন্দার দিদি সে কথা শোনার পরে কাঁদতে কাঁদতে বলেছেন, ‘‘টাকা চাই না। ওরা কি বোনকে ফিরিয়ে দিতে পারবে? ভিড় সামলানোর জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা কেন ছিল না? দু’বছরের এই দুধের ছেলেটার কী হবে?’’ সংবাদ সংস্থা
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)