Advertisement
E-Paper

চাপের মুখে নতি স্বীকার, কৃষকদের সব দাবি মানল মহারাষ্ট্র সরকার

সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে রাজ্য সরকার। জানানো হয় কৃষকদের সব দাবি মেনে নেওয়ার কথা।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০১৮ ২৩:৩২
আজাদ ময়দানে কৃষকদের সমাবেশ। সোমবার। ছবি: পিটিআই।

আজাদ ময়দানে কৃষকদের সমাবেশ। সোমবার। ছবি: পিটিআই।

কৃষকদের আন্দোলনের সামনে চাপে পড়ে পিছু হঠতে বাধ্য হল মহারাষ্ট্রের দেবেন্দ্র ফডণবীসের সরকার। ঋণ মকুব থেকে ফসলের ন্যায্য দাম, লাঙল যার জমি তার— কৃষকদের এমনই একগুচ্ছ দাবি মেনে নেওয়ার কথা ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী। সোমবার কৃষক নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন তিনি। এই ঘোষণার পরেই মুম্বইয়ের প্রতিবাদ-সমাবেশ প্রত্যাহার করে নেন আন্দোলনকারীরা।

ঝড়ের আভাস পাওয়া গিয়েছিল দিন ছয়েক আগেই। যখন, নাসিক থেকে এক গুচ্ছ দাবি নিয়ে পথ চলা শুরু করেছিলেন প্রায় কুড়ি হাজার কৃষক। লক্ষ্য ছিল মহারাষ্ট্র বিধানসভা ঘেরাও। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে প্রতিবাদ এবং দাবিদাওয়া জানানো। দাবি আদায়ের জন্য ৬ দিনে প্রায় ১৮০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে কৃষকরা রবিবার যখন মুম্বইয়ে ঢুকলেন, তখন মিছিলের সদস্য সংখ্যা ৩৫ হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে।

সোমবার সকাল থেকে ক্রমাগত বাড়তে থাকে প্রতিবাদী কৃষকের সংখ্যা। একটা সময়ে তা ৫০ হাজার ছাড়িয়ে যায়। মুম্বইয়ের পথে তখন উড়ছে হাজারে হাজারে কাস্তে-হাতুড়িওয়ালা লাল ঝান্ডা। যা ক্রমেই চাপ বাড়াতে থাকে শাসক দলের অন্দরে। প্রথমে ঠিক ছিল, বেলা ১২টা নাগাদ বিধানসভায় গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ফডণবীসের সঙ্গে দেখা করবেন কৃষক প্রতিনিধিরা। কিন্তু, সেই সময় ক্রমেই পিছতে থাকে। এরই মধ্যে বিতর্ক বাড়িয়ে দেয় খোদ মুখ্যমন্ত্রীর একটি মন্তব্য। মুখ্যমন্ত্রী দাবি করে বসেন, ‘‘এই আন্দোলনে সামিল হওয়া ৯৫ শতাংশই কৃষক নন। কৃষক আন্দোলনের চরিত্র নষ্ট করার জন্য এঁরা যোগ দিয়েছেন।’’ মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্যের পরই রে রে করে ওঠেন কৃষক নেতারা।

এত কিছুর পর শেষ পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পায় ১২ জনের কৃষক প্রতিনিধি দলটি। বেশ কিছু ক্ষণ বৈঠকের পর মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্রর হাতে তাঁদের দাবিদাওয়া তুলে দেন কৃষক নেতারা। দলটি বৈঠক শেষে বেরিয়ে আসার পরেই রাজ্যের সেচমন্ত্রী গিরিশ মহাজন জানান, কৃষকদের দাবি নিয়ে আলোচনা চলছে। কিছু দাবি মেনে নেওয়া হবে। শীঘ্রই সরকারের সিদ্ধান্ত জানানো হবে।

আরও পড়ুন: হাতে খাবার, জলের প্যাকেট, মুম্বইয়ে বিপুল অভ্যর্থনা কৃষকদের

তার কিছু ক্ষণের মধ্যেই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে রাজ্য সরকার। জানানো হয় কৃষকদের সব দাবি মেনে নেওয়ার কথা। ঘোষণা করা হয়, কৃষকদের দাবি মতো তাদের হাতে জমি তুলে দেওয়া হবে। আর এই প্রক্রিয়া শুরু হবে আগামী ছ’মাসের মধ্যে। সরকারে তরফে এই আশ্বাস পাওয়ার পরই আন্দোলন প্রত্যাহারের কথা ঘোষণা করা হয়।

বিজেপি শাসিত মহারাষ্ট্রে এই কৃষক আন্দোলনকে ঘিরে বেশ কিছু দিন ধরেই চিন্তার ভাঁজ পড়ছিল শাসক শিবিরের অন্দরে। মহারাষ্ট্রের কৃষক সভার উদ্যোগে গড়ে ওঠা এই কৃষক আন্দোলনে সমর্থন জানায় শিবসেনা, এনসিপি-র মতো দল। রবিবার সকালেই কৃষকদের সঙ্গে দেখা করেছিলেন শিবসেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরের ছেলে আদিত্য। নাসিকের এক সভায় কেন্দ্র ও রাজ্যের কৃষক-বিরোধী সরকারকে ছুড়ে ফেলার ডাক দেন এনসিপি প্রধান শরদ পওয়ার। আলোচনা শুরু হয় সঙ্ঘ পরিবারের অন্দরেও। সোমবার কৃষকদের সমাবেশ যোগ দেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। টুইট করেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধী। সব ইগো ছেড়ে কৃষকদের দাবি মেনে নেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডণবীসকে ‘উপদেশ’ দেন রাহুল।

অবশেষে বিকেলে আন্দোলনকারীদের তরফে ঘোষণা করা হয় সরকার তাদের সব দাবি মেনে নিয়েছে। পিছু হঠতে বাধ্য হয় বিজেপি সরকার।

আরও পড়ুন: কৃষকদের লাল মিছিলে কপালে ভাঁজ বিজেপির

বিজেপি শাসিত একটি সরকারের এই নতিস্বীকারকে নিজেদের নৈতিক জয় হিসেবেই দেখছেন বাম নেতারা। ত্রিপুরা বিধানসভা ভোটে বিজেপির কাছে ধরাশায়ী বামেদের জাতীয় রাজনীতিতে অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলছিল। তখনই এই ‘সাফল্য’ কিছুটা হলেও তাদের জমি শক্ত করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

Farmers March Maharashtra Loan Waiver Devendra Fadnavis
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy