Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Farmers Protest

ঠান্ডার কামড়ে আঁচ কমেনি আন্দোলনের

সরকার তো আঠেরো মাসের জন্য স্থগিত রাখার প্রস্তাব দিয়েছিল কৃষি আইন।

—ফাইল চিত্র

—ফাইল চিত্র

অগ্নি রায়
গাজিপুর শেষ আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০২১ ০৫:৪৩
Share: Save:

কানুন ওয়াপসি নহি তো ঘর ওয়াপসি নহি!

এই গর্জনে কাঁপছে যত দূর চোখ যায় ট্র্যাক্টর ঘেরা ২৪ নম্বর জাতীয় সড়ক এবং সংলগ্ন উড়ালপুল। প্রবল ঠান্ডার সঙ্গে যুঝছেন উত্তরপ্রদেশ এবং উত্তরাখণ্ডের গম, ধান, আখের খেত থেকে যোজন পথ পেরিয়া আসা কৃষকেরা। হয়তো গা-গরম হচ্ছে স্লোগানে। আর কাঠকয়লা জ্বালিয়ে জায়গায় জায়গায়
জ্বালানো হয়েছে আগুন। ত্রিপল, চট, প্লাস্টিকের চাদরে ঢাকা ট্র্যাক্টরগুলির ভিতর খড় বিছিয়ে রাতের শয়নযান। “তবে বৃষ্টি হলে জল আটকাতে পারছি না আমরা,” ত্রিপলের মধ্যে থেকে মুখ বার করে বলছেন অশীতিপর রণবীর শাস্ত্রী। এসেছেন সুদূর কনৌজ থেকে।

সরকার তো আঠেরো মাসের জন্য স্থগিত রাখার প্রস্তাব দিয়েছিল কৃষি আইন। এত কষ্ট করে মাসের পর মাস এখানে পড়ে না-থেকে গ্রামে ফিরে যেতে পারতেন তো তাঁরা? “লড়াই এক বারেই লড়তে হয়। বার বার লড়া যায় না। এক বার আমরা যদি ঝুঁকে যাই, আর সোজা হতে পারবো না,” বলছেন উধম সিংহ নাগর। এসেছেন হাপুর থেকে। তাঁর কথায়, “কৃষকেরা সহজ সরল হতে পারে, কিন্তু মূর্খ নয়। দেড় বছরের জন্য স্থগিতাদেশ দিচ্ছে ২০২১-এ উত্তরপ্রদেশের ভোটের জন্য। আমাদের শান্ত রেখে ভোট করিয়ে নেবে, তার পরে আবার পথে বসাবে।” তাঁর কথায়, ‘‘গ্রামে বিজলি থেকে শুরু করে সব কিছুর দাম বেড়েছে। কেবল এক রয়েছে ফসলের মূল্য। দাম তো বাড়েইনি, সরকারি এবং বেসরকারি চিনি কল থেকে এক বছরের বকেয়া টাকা উদ্ধার করতে মাথার ঘাম পায়ে ফেলতে হচ্ছে।

এক মাস পর দিল্লি এবং উত্তরপ্রদেশের সীমানায় এসে দেখছি, আন্দোলন মঞ্চ অনেকটাই গুছিয়ে নিয়েছেন চাষিরা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেকটাই যেন সংঘবদ্ধ। রাস্তার পাশেই মাটিতে চাদর বিছিয়ে তৈরি হয়েছে ‘মেক শিফট’ বিপণি। সেখানে বিক্রি হচ্ছে ‘আই লাভ কিসান’ লেখা স্টিকার, ব্যাজ, টুপি, পতাকা। সঙ্গে জাতীয় পতাকাও। নিয়মিত কেনাবেচা চলছে এই প্রতিবাদের প্রতীক পণ্যগুলির।

দু’মাস হয়ে গেল চাষিদের রাস্তাতেই ঘরবাড়ি। নিজেদের খেত ছেড়ে এসে বসে আছেন, এর পর তাঁদের চলবে কী করে? যাঁরা সম্পন্ন তাঁদের কথা আলাদা। কিন্তু উত্তরপ্রদেশের বাগপত থেকে আসা দীপক চৌধরির মতো যাঁদের ছটাক জমি সম্বল, তাঁদের? দীপক বলছিলেন, “এই আইন চালু হলে তো আমাদের আরও বড় ক্ষতি হয়ে যাবে! অম্বানী-আদানিরা প্রথমে লোভ দেখিয়ে ভাল দাম দেবে। তার পর জমিও ছিনিয়ে নেবে।”

ঠান্ডা ঠেকাতে কাঠকুটো পোড়ানোয় স্থানে স্থানে এত ধোঁয়া, যে চোখ জ্বালা করে। ঢালাও লঙ্গরে সকাল থেকে চলছে ডাল, ভাত, সব্জি। “ঈশ্বরই তো চাষ করেন। তাঁর ফসলই আসে আমাদের কাছে। আগামী এক বছর যদি এখানে বসেও থাকি, তাও আসবে। গ্রাম থেকে প্রতিদিন ট্র্যাক্টরে করে ফসল আসছে,” জানাচ্ছেন অজিত রাঠী। মুজফ্ফরনগরে গমের খেত রয়েছে তাঁর। কৃষক ইউনিয়নের জেলা অধ্যক্ষও বটে। জানাচ্ছেন, পালা করে করে গ্রাম থেকে লোক যাতায়াত করছেন। এখান থেকে অনেকে ফিরে গিয়ে খেতির কাজে হাত লাগাচ্ছেন, পরিবারের অন্যদের হাতে আন্দোলনের ব্যাটন তুলে দিয়ে। তবে ট্র্যাক্টরে করে খাদ্যপণ্য আনার ক্ষেত্রেও যে বাধা দিচ্ছে যোগী আদিত্যনাথের পুলিশ— এমন অভিযোগও শোনা যাচ্ছে। বুলন্দশহর থেকে আসা হর্ষ চৌধরি জানালেন, তাঁর গ্রামে পুলিশ বাড়ি বাড়ি গিয়ে চাষিদের ধমকাচ্ছে। মাল আনতে গেলে রাস্তায় আটকাচ্ছে। তিক্ত গলায় হর্ষ বলছেন, “একটা কথা স্পষ্ট। এর পর উত্তরপ্রদেশের ভোটে চাষিরা বিজেপিকে একটা ভোটও দেবে না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE