Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
Violence

Kalicharan Maharaj: ধর্ম সংসদ থেকে গডসের বন্দনা, হল এফআইআর

অসমের শিলচর থেকে হরিয়ানার অম্বালা বা কর্নাটকের চিকাবল্লাপুর— এমন চোখ রাঙানির বড় দিনের নজির খুঁজে পাচ্ছেন না অনেকে।

ধর্মগুরু কালীচরণ মহারাজ

ধর্মগুরু কালীচরণ মহারাজ

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০২১ ০৬:৪৮
Share: Save:

উত্তরাখণ্ডের হরিদ্বারের পরে এ বার ছত্তীসগঢ়ের রায়পুর। ধর্মীয় মঞ্চ থেকে মোহনদাস গাঁধীকে কটু কথা বলেই ক্ষান্ত থাকেননি তথাকথিত ধর্মগুরু কালীচরণ মহারাজ, বলেছেন তাঁকে হত্যা করে প্রকৃত দেশপ্রেমের কাজ করেছেন নাথুরাম গডসে। হিন্দুত্ববাদী এই সন্তের কথায়, গাঁধীই দেশ ভাগ করিয়েছেন এবং তাঁর জন্যই ভারত হিন্দু রাষ্ট্র হয়ে উঠতে পারেনি। অন্য ধর্মকে বিঁধেও নানা আক্রমণাত্মক কথা বলেছেন কালীচরণ। উত্তরাখণ্ডের বিজেপি সরকার হরিদ্বারের বিষয়টিকে গুরুত্ব না-দিলেও কংগ্রেস শাসিত ছত্তীসগঢ় সরকার এই সন্তের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক বিভেদ তৈরির চেষ্টা এবং হিংসায় উস্কানি দেওয়ার দায়ে এফআইআর করেছে। সন্তটির যে রাজ্যে আশ্রম আছে, সেই মহারাষ্ট্রের অ-বিজেপি জোট সরকারও তাঁর মন্তব্যের নিন্দা করে জানিয়েছে, ছাড় দেওয়া হবে না এঁকে।

অসমের শিলচর থেকে হরিয়ানার অম্বালা বা কর্নাটকের চিকাবল্লাপুর— এমন চোখ রাঙানির বড় দিনের নজির খুঁজে পাচ্ছেন না অনেকে। যিশুর জন্ম ক্ষণের ক্যারল গানের মাঝখানে ছুড়ে দেওয়া হয়েছে ‘জয় শ্রীরাম’ হুঙ্কার। ফতোয়া দেওয়া হয়েছে, ক্রিসমাসের উৎসবে হিন্দুদের অংশ নেওয়া চলবে না। আর দেশের নানা জায়গায় ‘ধর্ম সংসদ’-এর নামে তথাকথিত হিন্দুত্ববাদী ধর্মগুরুরা উগরে দিচ্ছেন হিংসার বার্তা, উস্কানির বাণী এবং জিঘাংসার বিষ। এর আগে হরিদ্বারে ‘ধর্ম সংসদ’ ডেকে সাম্প্রদায়িক জিগির তোলা এবং গণহত্যার ডাক দেওয়ার পরেও যতি নরসিংহানন্দ সরস্বতীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি যোগী আদিত্যনাথের সরকার। সরকারের এক মুখপাত্রের দাবি, “কোথাও গন্ডগোল তো হয়নি, হলে দেখা যাবে।” রায়পুরের ‘ধর্ম সংসদ’-এ কিন্তু ছবিটা ছিল ভিন্ন। বলা যায় হিন্দু বনাম হিন্দুত্বের সংঘাত দেখা গিয়েছে মঞ্চে। কালীচরণের বক্তব্যের নিন্দা করে প্রতিবাদে সংসদ ছেড়ে চলে গিয়েছেন ছত্তীসগঢ়ের দুধাধারী মন্দিরের মহন্ত রামসুন্দর দাস। পরে তিনি বলেন, “গাঁধী সারা জীবন দেশের জন্য ত্যাগ স্বীকার করে গিয়েছেন। আর এই ভাবে তাঁকে অশালীন ভাষায় গালিগালাজ করা হল! আমি এর প্রতিবাদ করেছি। সনাতন ধর্মের শিক্ষা এটা নয়। তার উপরে এই কাজ করা হল ধর্ম সংসদ থেকে! আয়োজকদের আমি বলতে চাই, যখন এই সব কথা বলা হচ্ছিল, কেন আপনাদের কোনও এক জনও এর প্রতিবাদ করলেন না?” মহন্ত দাস বলেন, “এই দেশে ৩০ কোটি মুসলিম বাস করেন, ১৫ কোটি খ্রিস্টান। তুমি বলে দিলেই তো এই দেশ ‘হিন্দু রাষ্ট্র’ হয়ে যায় না!” মহন্ত জানান, ওই অনুষ্ঠানের সঙ্গে তিনি আর কোনও ভাবেই যুক্ত নন।

শুধু মহন্তই নন, কালীচরণের এই সব মন্তব্যের পরে গোড়ায় এগিয়ে আসা ছত্তীসগঢ় সরকারও আর সংস্রব রাখেনি এই অনুষ্ঠানের সঙ্গে। কারণ, তিনি যে শুধু মোহনদাস গাঁধীকে অশালীন আক্রমণ করেছেন তা নয়, কংগ্রেসের ধর্মনিরপেক্ষতাকে বিঁধেছেন। ধর্ম আলোচনার মঞ্চ থেকে সরাসরি ডাক দিয়েছেন, অন্য ধর্মের কবল থেকে হিন্দু ধর্মকে রক্ষা করার জন্য শুধুমাত্র হিন্দুত্ববাদী নেতাদেরই ভোটে জেতানোর। গেরুয়া বাহিনীর আইটি সেল কালীচরণের উস্কানির ভিডিয়ো কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ছড়িয়ে দিয়েছে ভক্তদের ফোনে ফোনে। কথা ছিল, মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বঘেল উপস্থিত থাকবেন সংসদের সমাপ্তি অনুষ্ঠানে। কিন্তু বঘেল আর ওমুখো হননি।

রাহুল গাঁধী এ দিন হিন্দিতে মোহনদাস গাঁধীরই একটি মন্তব্য টুইট করেছেন। তার সারমর্ম— শরীরকে বেড়িতে বন্দি করা যায়, যন্ত্রণা দিয়ে কাউকে শেষও করে দেওয়া যায়। কিন্তু মতাদর্শকে বন্দি করা যায় না। মহারাষ্ট্রের মন্ত্রী ও এনসিপি নেতা নবাব মালিক টুইটে বলেছেন, ‘গাঁধীকে অপমান করা মানে দেশকে অসম্মান করা।’ মহারাষ্ট্রের আকোলাতেই কালীচরণের আশ্রম। সেখানকার উপ-মুখ্যমন্ত্রী অজিত পওয়ার বলেছেন, “ছাড়া হবে না এই সন্তকে। কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে এই সাম্প্রদায়িক উস্কানির।” কংগ্রেস নেতারাও কালীচরণকে তুলোধোনা করছেন। কিন্তু বিজেপি চুপ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Violence mahatma gandhi Nathuram Godse
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE