Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

বন্যাকবলিত উত্তর-পূর্ব, ডুবেছে বরাক

ডাঙার খোঁজে। কোকরাঝাড়ে উদ্ধারকাজ। বৃহস্পতিবার। ছবি: উজ্জ্বল দেব।

ডাঙার খোঁজে। কোকরাঝাড়ে উদ্ধারকাজ। বৃহস্পতিবার। ছবি: উজ্জ্বল দেব।

নিজস্ব সংবাদদাতা
গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ২১ অগস্ট ২০১৫ ০২:৪৪
Share: Save:

এক টানা বৃষ্টিতে অসমে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। রাজ্যের ১৩টি জেলায় ৩১টি মহকুমার ৬১১টি গ্রাম জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। উত্তর-পূর্বের অন্য কয়েকটি রাজ্যও বন্যাকবলিত। পরিস্থিতি জটিল বরাক উপত্যকাতেও।

প্রশাসনিক সূত্রে জানানো হয়েছে, নামনি অসম ও বড়োভূমিতে তিন দিন ধরে নাগাড়ে বৃষ্টিতে সব বড় নদীই বিপদসীমা ছাড়িয়ে বইছে। সঙ্গে জুড়েছে ভুটান থেকে আসা জল। কোকরাঝাড় জেলার কোকরাঝাড়, দোতমা, গোঁসাইগাঁও বানভাসি। স্বরমাঙ্গা নদীর জলে ডুবেছে পাটগাঁও, বড়িয়াগুড়ি, সারাগুড়ি। সারাগুড়ি প্রাথমিক স্কুলের বড় অংশ ভেসে গিয়েছে। চিরাং জেলার অর্ধশতাধিক গ্রাম বানভাসি। বেশি ক্ষতি হয়েছে সিদলিতে। বেংটোলের ৭৫টি গ্রাম মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। কোকরাঝাড়ের স্বরমাঙ্গা, সরলভাঙা, গোঙ্গিয়া, লংগা, গৌরাঙ্গ নদী, চিরাং জেলায় আই ও চম্পামতীতে ভুটান থেকেও প্রচুর জল মিশেছে। চিরাং-এর বিজনিতে রঙিয়া ডিভিশনের অধীনে বিজনি ও চাপড়াকাটা স্টেশনের মধ্যবর্তী অংশে ১০ মিটার রেললাইন বন্যায় ভেসে গিয়েছে। তার জেরে রাজধানী এক্সপ্রেসও ৫ ঘণ্টা পাতিলাদহ স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকে। রেল সূত্রে খবর, ত্রিবান্দ্রম এক্সপ্রেস সরভোগে, কামরূপ এক্সপ্রেস বরপেটা রোডে, কলকাতা-ডিব্রুগড় এক্সপ্রেস বাসুগাঁওয়ে, আলিপুরদুয়ার-কামাখ্যা ইন্টারসিটি এক্সপ্রেস পাতিলাদহে, নর্থইস্ট এক্সপ্রেস রঙিয়ায় দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়। ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেসকে ২টো পর্যন্ত গুয়াহাটি স্টেশনে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। প্রশাসন জানিয়েছে, আই নদীর জলে বঙ্গাইগাঁওতে বন্যা দেখা দিয়েছে। ১১৩টি গ্রামের প্রায় ৫৫ হাজার মানুষ ঘরছাড়া। ত্রাণের দাবিতে ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কে বিক্ষোভ দেখানো হয়। বন্যা দেখা দিয়েছে গোয়ালপাড়ায়। কোকরাঝাড়, বঙাইগাঁও, চিরাং, গোয়ালপাড়ার অনেক জায়গায় জাতীয় ও রাজ্য সড়কে যান চলাচল বন্ধ। নামনি অসমের নলবাড়ি, বরপেটা, জেলাতেও বন্যা হয়েছে। বৃষ্টিতে থমকে গিয়েছে ধুবুরির জীবনযাত্রা। উজানি অসমের তিনসুকিয়া, ডিব্রুগড়, শিবসাগর, যোরহাট ও ব্রহ্মপুত্রের উত্তর তীরে ধেমাজি, লখিমপুরে বন্যা পরিস্থিতি আশঙ্কাজনক। কয়েকটি জায়গায় ছোট বাঁধ ভেঙেছে। যোরহাটের নিমাতিঘাট, গোহপুরের লোহিতমুখে ব্রহ্মপুত্র বিপদসীমার উপরে বইছে। মাজুলির অবস্থাও শোচনীয়। বন্যার পাশাপাশি ব্যাপক ভূমিক্ষয় চলছে। ব্রহ্মপুত্র ছাড়া জিয়াভরালি, পুঁথিমারি ও বেকির জল বিপদসীমার উপরে বইছে। বৃষ্টির জেরে গুয়াহাটির বিভিন্ন অংশেও কৃত্রিম বন্যা দেখা দিয়েছে।

বরাক উপত্যকার হাইলাকান্দির পাঁচগ্রামে ৫৩ নম্বর জাতীয় সড়ক গত রাত থেকে জলের তলায়। কাছাড়ের কাটিগড়ায় তারাপুর গ্রামে ধস নেমে একটি বাড়ি পুরো ভেঙে গিয়েছে, আরও একটি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত। দূরবীণটিলা ও হারাংগাজাও এলাকাতেও ধস নেমে যান চলাচল থমকে যায়। রাজ্য ও কেন্দ্রীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর পাশাপাশি, সেনাবাহিনীর রেড হর্ন ডিভিশন বিভিন্ন এলাকায় ত্রাণকাজ চালাচ্ছে। রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর জানিয়েছে, এখনও পর্যন্ত বন্যায় ২৭ হাজার হেক্টর কৃষিজমি ক্ষতিগ্রস্ত। বন্যাকবলিত মানুষের সংখ্যা প্রায় ২ লক্ষ ৯৭ হাজার। ১২৪টি ত্রাণ শিবিরে ঠাঁই নিয়েছেন প্রায় ৮৫ হাজার মানুষ।

মেঘালয়ের রাজধানী শিলং-ও বন্যায় ডুবেছে। নাগাড়ে বৃষ্টির তোড়ে পোলো, পাইনথোরবায় হড়পা বান দেখা দেয়। প্রশাসন বিপজ্জনক এলাকায় থাকা পরিবারগুলিকে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। দেওয়া হচ্ছে শুকনো খাবার। ওয়া উমখ্রা নদীর জল বেড়ে অনেক এলাকা ডুবেছে। মাওকালুম এলাকায় ধস নেমে বাড়ি ভেঙেছে। গারো পাহাড়েও বেশ কিছু এলাকায় ধস নেমেছে। পশ্চিম গারো পাহাড়ের বিপজ্জনক এলাকাগুলি থেকে পরিবারগুলিকে অবিলম্বে সরে যেতে নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন। পশ্চিম খাসি হিল জেলার উমথিয়েড বিনথার গ্রামে ধস নামে। নংস্টেন-শিলং রোডে হড়পা বান হয়। নাগাল্যান্ডের জুনহেবটো জেলার অনেক জায়গায় ধস নামার খবর এসেছে। আঘুনাটো মহকুমা বাকি রাজ্য থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। নাথা নিউ এলাকাতেও ধসে সড়ক বিচ্ছিন্ন। মণিপুরের তামেংলং জেলায় টানা বৃষ্টির জেরে অনেক জায়গায় ধস নেমেছে। তামেই-ইম্ফল রোড ও তামেই-তামেংলং রোডে গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে গিয়েছে।

অরুণাচল প্রদেশের লোহিত, দিবাং ভ্যালি, লোয়ার দিবাং ভ্যালি ও পূর্ব সিয়াং অত্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত। লোহিত ও সিয়াং নদীর জল বিপদসীমায় পৌঁছনোয় ব্রহ্মপুত্রেও জল বাড়ছে। এ ছাড়া কালিখোলা, দিগারু, লাসাপানি, ডেনিং, তেজুখোলা, দুরানালা নদী বিপদসীমা ছাড়িয়ে বইছে। তেজু ও বালিজানে বিপজ্জনক ভাবে ভূমিক্ষয় হচ্ছে। আলুবাড়ি, পাসিঘাট-মারিয়াং রোড, কালামাটি, পাসিঘাট-মেবোর রাস্তা, হুনলি-ডেসালি রোড ধস এবং বন্যায় অগম্য. দিবাং-এর সিকু সেতু ভেঙে নামনি দিবাং উপত্যকা ও মেবোর যোগাযোগ ছিন্ন হয়েছে। চিপু নদীর বন্যায় বিদ্যুৎস্তম্ভ ভেঙে রোয়িং শহর দু’দিন ধরে অন্ধকারে। খালিহামারিতে জিয়াভরালি নদীও বিপদসীমা ছাড়িয়েছে। মেঘালয়ের গারো পাহাড়ের তুরায় গানোল নদীর জলে ৯ বছরের এক কিশোরী ভেসে গিয়েছে। গারো পাহাড়ের সিমসাং, গানোল, জিনজিরাম নদী বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। আপার চাঁদমারির গানড্রাক জলপ্রপাতের কাছে ও বাবুপাড়ায় সড়কের অনেকটা অংশ ভেসে গিয়েছে। তুরা-ডালু-বাঘমারার মধ্যেও সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। পশ্চিম গারো পাহাড়ে গানোল নদীর জলে ফুলবাড়ি, রাজাবালা, টিকরিকিলা, সেলসেলা এলাকা জলমগ্ন। শিববাড়ি এলাকায় ৬২ নম্বর জাতীয় সড়কেও যান চলাচল বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে। পূর্ব জয়ন্তীয়া হিলের নারপু, টংসেং, সোনাপুর, রটাচেরায় ধসে ৪৪ নম্বর জাতীয় সড়কে যানবাহন আটকে পড়ে। ফলে, অসম থেকে বরাক উপত্যকা, মিজোরাম, ত্রিপুরাগামী ও উল্টোদিক থেকে আসা যানবাহন বিভিন্ন জায়গায় আটকে রয়েছে। দক্ষিণ পশ্চিম খাসি পাহাড়ের মাওকিরওয়াট ও রানিকরে ধসে বেশ কিছু বাড়ি ভেঙেছে। কেনিয়ং-এ ধসে রাস্তা বন্ধ। গারো পাহাড়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি বন্ধ রাখা হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Flood North-East Barak Guwahati
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE