Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

জলে ভাসছে কাজিরাঙার গন্ডার, হরিণ

বন্যা, জীবন সংগ্রাম, মৃত্যু। জল নামলে নতুন ঘাসে ঢাকা জঙ্গলে ফের ঘর বাঁধা, বংশবৃদ্ধি। প্রতি বছর কাজিরাঙার জীবনচক্রের ছবিটা এমনই। তা বদলায়নি এ বছরও।

নাক উঁচিয়ে। বন্যার জলে সাঁতার গন্ডারের। কাজিরাঙায়। সৌজন্যে: ডব্লিউটিআই।

নাক উঁচিয়ে। বন্যার জলে সাঁতার গন্ডারের। কাজিরাঙায়। সৌজন্যে: ডব্লিউটিআই।

রাজীবাক্ষ রক্ষিত
গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০১৬ ০৩:৩২
Share: Save:

বন্যা, জীবন সংগ্রাম, মৃত্যু। জল নামলে নতুন ঘাসে ঢাকা জঙ্গলে ফের ঘর বাঁধা, বংশবৃদ্ধি।

প্রতি বছর কাজিরাঙার জীবনচক্রের ছবিটা এমনই। তা বদলায়নি এ বছরও।

জলে ডুবে থাকা জঙ্গলে অসহায় প্রাণীদের খোঁজে নৌকায় টহল দিচ্ছেন বন্যপ্রাণী সংক্রান্ত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘ডব্লিউটিআই’-এর সদস্য ও চিকিৎসক, বনকর্মীরা। তাঁরা জানিয়েছেন, বছরের অন্য সময় মানুষ দেখলেই দূরে পালায় গন্ডারের দল। সঙ্গে শাবক থাকা স্ত্রী গন্ডার বনরক্ষীদের দেখলে তেড়ে যায়। বন্যায় ছবিটা অন্যরকম। কোহরার এক বনরক্ষী জানান, গত শুক্রবার জঙ্গলে একটি শাবককে ঠেলতে ঠেলতে তাঁদের নৌকার পাশে নিয়ে যায় একটি মা গন্ডার। রক্ষীরা শাবকটিকে নৌকায় তুলে নেন। মা সাঁতরাতে থাকে পায়ের তলায় শক্ত জমির খোঁজে। ওই বনকর্মীর মন্তব্য, ‘‘জানি না শাবকটি তার মাকে আর কখনও দেখতে পাবে কি না।’’ তিনি জানান, বন্যাকবলিত জঙ্গলে পানকৌড়ির মতো গলা উঁচিয়ে সাঁতরে শুকনো জমি খুঁজছে হগ ডিয়ার, বার্কিং ডিয়ারের দল।

বনকর্মী, পশুপ্রেমী, চিকিৎসক, পুলিশকর্মীরা দিনরাত উদ্ধারকাজ করে চলেছেন। শুকনো ডাঙার খোঁজে গভীর জঙ্গল থেকে বেরিয়ে আসা প্রাণীদের উপর নজর রয়েছে চোরাশিকারিদেরও। কাজিরাঙা থেকে কার্বি পাহাড় পাড়ি দেওয়া বন্যপ্রাণীদের গতিবিধি তাই খেয়ালে রাখছেন বনকর্মীরাও। ওই সব এলাকায় জারি হয়েছে ১৪৪ ধারা।

প্রশাসনিক সূত্রে খবর, কাজিরাঙার প্রায় পুরোটাই এখন জলমগ্ন। ডুবেছে ৩৭ নম্বর জাতীয় সড়ক। এখনও পর্যন্ত বন্যায় ৯টি গন্ডারের মৃত্যু হয়েছে। তার মধ্যে দু'টি শাবক। জল কমলে জানা যাবে আর কোনও গন্ডারের মৃত্যু হয়েছে কি না। বনকর্তারা জানিয়েছেন, প্রতি বছর বন্যায় শতাধিক হরিণের মৃত্যু হয় কাজিরাঙায়। এ বার সংখ্যাটি এখনই ১০০ ছুঁইছুঁই। জাতীয় সড়ক পেরোতে গিয়ে গাড়ির ধাক্কায় এখনও পর্যন্ত ৫৮টি হরিণের প্রাণ গিয়েছে। কাজিরাঙার বুক চিরে যাওয়া জাতীয় সড়কে ১৪৪ ধারা ও ‘টাইম-কার্ডের’ ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। ৪০ কিলোমিটারের বেশি গতিতে গাড়ি চালানো সেখানে নিষেধ। কিন্তু তাতেও পশুমৃত্যু ঠেকানো যাচ্ছে না।

প্রশাসনিক সূত্রে খবর, জঙ্গল লাগোয়া কয়েকটি প্রত্যন্ত জনবসতিতে ঢুকেছে বাঘও। গাছের উপরে তারা বসে থাকছে। মরিয়ানির একটি গ্রামে এক ব্যক্তিকে জখম করেছে একটি বাঘ। সেখানে হাতির পালও গ্রামে গ্রামে অনেক বাড়ি ভেঙেছে। লোকালয়ে ঢুকছে বুনো মোষের দল।

কাজিরাঙা পশু উদ্ধার কেন্দ্রে উদ্ধার হওয়া হাতি ও গন্ডার শাবকদের চিকিৎসা চলছে। সেখানে রয়েছে ৭৯টি হরিণ, ৮টি গন্ডার শাবক। ওই সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, ২০১২-র জোড়া বানের মতো ভয়াবহ পরিস্থিতি এ বার কাজিরাঙায় হয়নি। সে বার বন্যায় ৫১২টি হরিণ, ২৮টি বুনো শুয়োর, ১৭টি গন্ডারের মৃত্যু হয়েছিল।

বন দফতর সূত্রে খবর, বন্যায় কাজিরাঙার ভিতরে বেশিরভাগ সেতু ভেসে গিয়েছে। পশু উদ্ধার কেন্দ্রের প্রধান রথীন বর্মন ও ডিএফও শুভাশিস দাস জানান— আশপাশের গ্রাম ও পশুপ্রেমী সংগঠনের শতাধিক মানুষ রাতদিন বনকর্মীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বন্যপ্রাণীদের উদ্ধারে হাত মিলিয়েছেন। জাতীয় সড়কে দাঁড়িয়ে নিয়ন্ত্রণ করছেন গাড়ির গতি। আশার কথা একটাই— বন্যার জল ধীরে ধীরে নামতে শুরু করেছে। প্রশাসন জানিয়েছে, গত কাল জলতল প্রায় তিন ফুট নেমেছে।

পরিবেশবিদদের বক্তব্য, বন্যা প্রথম থেকেই কাজিরাঙার বাস্তুতন্ত্রের অঙ্গ। বন্যার তোড়ে জঙ্গলের পুরনো মাটি, বিলগুলির জমা জল, পুরনো ঘাস ভেসে যায়। ওই পলিতেই নতুন ঘাস জন্মায়। শুরু হয় নতুন জীবনচক্র। বন্যায় যে পশুমৃত্যু হয়, তার চেয়ে বেশি ফিরেও আসে সেই চক্র মেনে।

অন্য দিকে, কার্বি আংলংয়ের জগদম্বায় গন্ডারের হামলা থেকে বাঁচতে এক বনরক্ষী এসএলআর থেকে গুলি চালিয়েছিলেন। তিনটি গুলি লাগে গন্ডারের মাথায়, ঘাড়ে। গত কাল গন্ডারটির মৃত্যু হয়। জঙ্গল ছেড়ে পাহাড়ে আশ্রয় নেওয়া গন্ডারদের খোঁজে জগদম্বায় গিয়েছিলেন বনরক্ষীরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

kaziranga
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE