ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক সেরে বাইরে বেরোলেন কংগ্রেস সহ-সভাপতি রাহুল গাঁধী। সোমবার নয়াদিল্লিতে পিটিআইয়ের ছবি।
আজ না-হয় কাল কংগ্রেস সভাপতি পদের দায়িত্ব নিতে হবে তাঁকেই। রাহুল গাঁধীর জন্য সেই অমোঘ মুহূর্ত এ বার এগিয়ে এল!
দলীয় সদর দফতরে আজ বৈঠকে বসেছিল কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটি। কিন্তু অসুস্থতার কারণে আসতে পারেননি সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী। ২৪ আকবর রোডে কংগ্রেসের সদর দফতর ও সনিয়ার বাসভবন দশ জনপথের পাঁচিল একটাই। মাঝে দরজা। কিন্তু দলীয় সূত্র বলছে, সনিয়ার শরীর এতটাই খারাপ যে, দশ মিনিটের জন্যও তাঁকে বৈঠকে যাওয়ার অনুমতি দেননি চিকিৎসকেরা।
এই পরিস্থিতিতে ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকেই প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ, এ কে অ্যান্টনির মতো বর্ষীয়ান নেতারা দাবি তোলেন, কংগ্রেস সভাপতি পদে এখনই রাহুলের অভিষেক হোক। কারণ এটাই উপযুক্ত সময়। সেই সমবেত দাবির মুখে দাঁড়িয়ে রাহুলও জানিয়ে দিলেন, দল তাঁকে যে দায়িত্বই দিক, চ্যালেঞ্জ নিতে তিনি প্রস্তুত। রাহুলের পদোন্নতি নিয়ে ওয়ার্কিং কমিটির ‘সর্বসম্মত আবেদন’ বৈঠকের পরেই সনিয়ার কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়। যদিও এ দিনের বৈঠকেই দলীয় সংগঠনের মেয়াদ আরও এক বছর বাড়িয়ে আগামী বছর ডিসেম্বর পর্যন্ত সভানেত্রী পদে রাখা হয়েছে সনিয়াকে। তবে কংগ্রেস সূত্র বলছে, মাঝপথে সভাপতি বদল করতে তো কোনও অসুবিধা নেই। আর বদলটা যদি বছর ঘোরার আগেই ঘটে যায়, তাতেও অবাক হওয়ার কিছু নেই।
এ সবটাই কি আগাম চিত্রনাট্য মেনে হচ্ছে? নাকি সবই সময়ের দাবি?
১৯৯৮ থেকে কংগ্রেস সভানেত্রী পদে রয়েছেন সনিয়া। দলের বেশির ভাগ নেতার মতে, সনিয়া জমানায় এ ধরনের যত ঘটনা ঘটেছে, তা গাঁধী পরিবারের আস্থাভাজন হাতেগোনা দু’তিন জন নেতাকে নিয়ে আগাম পরিকল্পনা অনুযায়ীই করেছেন দলনেত্রী। এমনকী ২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসে কংগ্রেস সহ-সভাপতি পদে রাহুলের অভিষেকের নকশাও আগেই তৈরি হয়েছিল। আজকের ঘটনাও তার থেকে আলাদা নয়।
যদিও প্রকাশ্যে কংগ্রেস নেতারা তা মানতে চাননি। তবে ঘরোয়া আলোচনায় একাধিক শীর্ষ নেতা বলেন, লোকসভা ভোটের আগে সভাপতি পদে রাহুলের অভিষেক হতোই। সে জন্য অনুকূল পরিবেশের অপেক্ষা করা হচ্ছিল। কোনও একটা সাফল্যের জন্য রাহুলকে কৃতিত্ব দিয়ে তাঁকে সভাপতি পদে বসানো হবে। এখন সনিয়ার অসুস্থতার কারণে পরিকল্পনা বদলায় কিনা, সেটা দেখার।
কংগ্রেস নেতাদের একাংশ আবার মনে করছেন না যে, উত্তরপ্রদেশ ও পঞ্জাবে বিধানসভা ভোটের আগে রাহুলকে সভাপতি করা হবে। তাঁদের মতে, উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেসের ভাল ফল করার সম্ভাবনা কম। পঞ্জাবেও যে দল আহামরি কিছু করতে পারবে, এমন আশা করা হচ্ছে না। এই অবস্থায় রাহুলকে সভাপতি করা হলে ব্যর্থতার দায় তাঁর কাঁধে চাপবে। ২০১৯-এর লোকসভা ভোটের আসল যুদ্ধের আগে সেটা মোটেই কাম্য নয়।
এর একটা বিপরীত মতও রয়েছে। কংগ্রেসের সেই সূত্র বলছে— সনিয়ার শারীরিক অবস্থা নয়, রাহুলকে সভাপতি করা নিয়ে তাড়াহুড়োর কারণ প্রিয়ঙ্কা বঢরা। হিন্দি বলয়ে এবং দলে তাঁর ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তা কংগ্রেসে সুবিদিত। উত্তরপ্রদেশ ভোটের আগে কংগ্রেস সংগঠনে সক্রিয় হয়েছেন প্রিয়ঙ্কা। এখন যদি নতুন করে ‘প্রিয়ঙ্কা লাও, কংগ্রেস বাঁচাও’ স্লোগান ওঠে, তা হলে রাহুলের ঢাকা পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সেই কারণেই আগেভাগে সভাপতি পদের জন্য রাহুলের নাম ঘোষণা করে রাখা হল।
রাহুলের অভিষেকের প্রসঙ্গ আজকের বৈঠকে প্রথমে উত্থাপন করেন মনমোহন সিংহ। তাঁকে সমর্থন করেন এ কে অ্যান্টনি। তার পর একে একে ওয়ার্কিং কমিটির সব সদস্য এই প্রস্তাবের পক্ষে সওয়াল করেন। কমল নাথ বৈঠকে বলেন, কংগ্রেস এখন নানা ভাবে কেন্দ্রকে বেগ দিচ্ছে। কিন্তু রাহুল কবে সভাপতি হবেন, এই প্রশ্নই ঢেকে দিচ্ছে সব উদ্যোগ। ফলে সেই প্রশ্নের জবাব যত দ্রুত দেওয়া হবে, ততই ভাল। তিনি এও বলেন যে, বিজেপিকে ঠেকাতে ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলি একজোট হচ্ছে। অসুস্থতার কারণে সনিয়াজির পক্ষে ততটা সক্রিয় থাকা সম্ভব হচ্ছে না। এই অবস্থায় রাহুলের রাজনৈতিক উচ্চতা না বাড়ালে জোটের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়তে পারেন আঞ্চলিক নেতা-নেত্রীরা। সি পি জোশী এবং অম্বিকা সোনি দাবি করেন আজই রাহুলকে সভাপতি ঘোষণা করে দেওয়া হোক। কিন্তু মনমোহন পরামর্শ দেন, তা না-করে সাংগঠনিক প্রক্রিয়া মানা হোক। আগে সর্বসম্মত আর্জি পাঠানো হোক সনিয়ার কাছে। মনমোহনের এই বক্তব্যের মধ্যেই চিত্রনাট্যটি দেখতে পাচ্ছেন অনেকে।
সেই চিত্রনাট্যের ক্লাইম্যাক্স কবে, প্রশ্ন সেটাই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy