রূপান্তরিত: মণীশ গিরি এখন সাবি।
লম্বা চুল রাখা শুরু করেছিলেন। কাজের সময় উর্দি পরলেও অন্য সময় শাড়িই পরতেন মণীশ গিরি। লিঙ্গ পরিবর্তনের পরে যিনি নিজের নাম রেখেছেন সাবি।
নৌসেনার নাবিক মণীশ গিরি ওরফে সাবির যুক্তি ছিল, পুরুষ থেকে নারী হলেও তাঁর কাজেকর্মে কোথাও কোনও খামতি নেই। সব কাজ তিনি আগের মতোই করছেন। কোথাও অসুবিধা হচ্ছে না।
নৌসেনার চাকরি সংক্রান্ত আইন অবশ্য তার অনুমতি দেয়নি। সোমবারই নৌসেনা বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, মণীশ গিরিকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হল। নৌসেনার যুক্তি, আইন অনুযায়ী কোনও মহিলাকে যুদ্ধজাহাজের নাবিক হিসেবে নিয়োগ করা যায় না। নৌসেনার এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করবেন বলে আজ সাবি জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দ্বারস্থ হওয়ার ভাবনাও তাঁর মাথায় রয়েছে।
তাঁর যুক্তি, ‘‘আমি অন্য যে কোনও পুরুষ-নারীর মতোই ভারতের নাগরিক। সকলের মতো আমারও সমান অধিকার রয়েছে। এখনও আমি বন্দুকের ট্রিগার টিপে গুলি চালাতে পারি। তা হলে কেন আমি দেশের সেবা করতে পারব না? নিজের অধিকারের জন্য লড়াই করতে আমি সুপ্রিম কোর্টে যাব।’’
নৌসেনার অবশ্য পাল্টা যুক্তি, মণীশ গিরিকে পুরুষ হিসেবেই নিয়োগ করা হয়েছিল। ছুটিতে থাকাকালীন বেসরকারি হাসপাতাল থেকে অস্ত্রোপচার করে তিনি লিঙ্গ বদল করেন। সেখানেই নৌসেনার নিয়োগ সংক্রান্ত নিয়ম ভেঙেছেন তিনি। মণীশ তাঁর নাম বদল করলেও নৌসেনার বিবৃতিতে তাঁর উল্লেখ নেই। তাঁকে মণীশ ও পুরুষবাচক সর্বনামেই সম্বোধন করা হয়েছে। যার অর্থ, সরকারি ভাবে নৌসেনা মণীশের নতুন পরিচয়কে স্বীকৃতি দেয়নি।
আরও পড়ুন:জয় এড়িয়ে উন্নয়ন-কথা অমিতের
বছর সাতেক আগে বিশাখাপত্তনমে ইস্টার্ন নাভাল কমান্ডে মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং শাখায় যোগ দেন মণীশ। গত বছর ছুটি নিয়ে দিল্লিতে গিয়ে লিঙ্গ পরিবর্তন করান তিনি। কাজে যোগ গিয়ে হঠাৎ অসুস্থ হওয়ার পরে বিষয়টি ধরা পড়ে। তখনই যুদ্ধজাহাজ থেকে সরিয়ে নৌসেনা ঘাঁটিতে কাজ দেওয়া হয় তাঁকে। নৌসেনা সূত্রের বক্তব্য, প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের মতামত নিয়েই মণীশকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
কিন্তু মণীশ ওরফে সাবির অভিযোগ, তিনি লিঙ্গ পরিচিতি নিয়ে সঙ্কটে পড়ে নৌসেনার চিকিৎসকদের সাহায্য চেয়েছিলেন। কিন্তু সাহায্য মেলেনি। সে জন্যই বেসরকারি চিকিৎসকের সাহায্য নিতে হয়। এ ছাড়াও তাঁকে মানসিক ভাবে হেনস্থা করা হয়েছে। মানসিক চিকিৎসার জন্য ছয় মাস বিশেষ ওয়ার্ডে রাখা হয়েছিল। তাঁকে মানসিক রোগী প্রতিপন্ন করে বরখাস্ত করার চেষ্টা হয়। মহিলা হিসেবে কাজে যোগ দেওয়ার পরেও বৈষম্যের শিকার হতে হয়।
সামরিক আইন বিশেষজ্ঞ মেজর নভদীপ সিংহের যুক্তি, রূপান্তকারীদের অধিকার রক্ষার প্রয়োজন রয়েছে। এই ধরনের সমস্যা সহানুভূতির সঙ্গেই দেখতে হবে। কিন্তু নৌসেনার একটি বিশেষ ক্ষেত্রে পৃথক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা নেই। ফলে সরকারকেই এ বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। প্রয়োজনে আইন সংশোধন করতে হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy