টানা তিন বার লোকসভা নির্বাচনে জেতার লক্ষ্যে রাজ্যস্তরে সাংগঠনিক রদবদলে হাত দিল বিজেপি। আজ তেলঙ্গানা, অন্ধ্রপ্রদেশ, ঝাড়খণ্ড ও পঞ্জাবের রাজ্য সভাপতি পদে পরিবর্তন করা হয়। আরও চার থেকে ছ’টি রাজ্যে পরিবর্তনের সম্ভাবনা রয়েছে বলে বিজেপি সূত্রের খবর। পরবর্তী ধাপে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় রদবদল হওয়ার কথা রয়েছে। তাৎপর্যপূর্ণ, আজ যে চার জনকে রাজ্য সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে তিন জনই কংগ্রেস থেকে এসে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন। যা দেখে কংগ্রেসের কটাক্ষ, বিজেপির মতো দলে কি নেতা কম পড়েছে?
আজ যে চার রাজ্যে সভাপতি পরিবর্তন হয়েছে, তার মধ্যে তেলঙ্গানায় বছর শেষেই নির্বাচন। ওই রাজ্যে বিতর্কিত তথা কট্টর মুখ বলে পরিচিত দলীয় সভাপতি বান্দি সঞ্জয়কে সরিয়ে জি কিষাণ রেড্ডিকে আনার সিদ্ধান্ত নেয় দল। গোড়া থেকেই বিজেপির সদস্য রেড্ডি দ্বিতীয় মোদী মন্ত্রিসভায় সংস্কৃতি-পর্যটন ছাড়াও উত্তর-পূর্বের উন্নয়ন মন্ত্রকের দায়িত্বে ছিলেন। মূলত ভোটের আগে মন্ত্রিসভা থেকে দলে এবং দল থেকে মন্ত্রিসভার মধ্যে রদবদল করার পরিকল্পনা নিয়ে বিজেপি নেতৃত্ব এগোচ্ছেন। সেই নীতি মেনেই রেড্ডিকে মন্ত্রিসভা থেকে সরিয়ে দলের দায়িত্বে আনা হল। বিজেপি সূত্রের মতে তেলঙ্গানার ওই বিজেপি নেতার সকলকে নিয়ে চলার ক্ষমতা থাকায় তাঁকে রাজ্যের দায়িত্বে আনা হয়েছে। মূলত রাজ্যের শাসক দল কে চন্দ্রশেখর রাওয়ের সঙ্গে তীব্র সংঘাতের পথে না গিয়ে লোকসভার কথা মাথায় রেখে রাজ্যে জোটের জমি প্রস্তুত করাই আগামী দিনে প্রধান দায়িত্ব হতে চলেছে রেড্ডির। তবে মন্ত্রী হিসাবে কেবল রেড্ডি একা নন, পীযূষ গয়াল, ধর্মেন্দ্র প্রধানদেরও বিভিন্ন রাজ্যের দায়িত্বে আনার কথা ভাবা হচ্ছে। সূত্রের মতে, রাজ্যের ওবিসি ভোটের কথা ভেবে উত্তরপ্রদেশের দায়িত্বে ধর্মেন্দ্র প্রধান ও রাজস্থানের দায়িত্বে পীযূষ গয়ালকে পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে। এ ছাড়া মধ্যপ্রদেশ, কর্নাটক, কেরল ও রাজস্থানেও সাংগঠনিক স্তরে রদবদল দ্রুত হয়ে যাওয়ার কথা রয়েছে। তার পরেই মন্ত্রিসভায় রদবদলে হাত দিতে চলেছেন বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব। আগামী ৭-৮ জুলাই উত্তরপ্রদেশ, তেলঙ্গানা, রাজস্থান, ছত্তীসগঢ়— এই চার রাজ্যে সফরে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। এর মধ্যে উত্তরপ্রদেশ ছাড়া বাকি তিন রাজ্যেই বিধানসভা নির্বাচন আসন্ন। সূত্রের মতে, ওই সফর শেষ করে মন্ত্রিসভার রদবদলে হাত দেবেন মোদী।
অন্য রাজ্যগুলির মধ্যে অন্ধ্রপ্রদেশে এনটি রামরাওয়ের মেয়ে ডি পুরন্দেশ্বরীকে সে রাজ্যের সভাপতি করা হয়েছে। মূলত ওই রাজ্যে টিডিপি নির্ভরতা কমাতেই এনটি রামরাওয়ের পরিবারের সদস্যকে বেছে নেওয়া হয়েছে। লক্ষ্য পুরন্দেশ্বরীকে সামনে রেখে ওই রাজ্যে টিডিপিতে ভাঙন ধরানো এবং এনটি রাম রাওয়ের মেয়েকে সামনে রেখে সহানুভূতির ভোট কুড়নো। দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারের আমলে মনমোহন সিংহ মন্ত্রিসভায় কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ছিলেন তিনি। পরে মনমোহন সরকার অন্ধ্রপ্রদেশ ভেঙে তেলঙ্গানা রাজ্য গঠনের সিদ্ধান্ত নিলে তিনি কংগ্রেস ছেড়ে বেরিয়ে আসেন। পরবর্তী সময়ে যোগ দেন বিজেপিতে।
অন্য দুই রাজ্যের মধ্যে আজ ঝাড়খণ্ডে সভাপতি করা হয়েছে বাবুলাল মরান্ডিকে। তিনি ২০০০-০২ ওই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। পরে ২০০৬ সালে তিনি বিজেপি ছেড়ে ঝাড়খণ্ড বিকাশ মোর্চা দল গড়ে কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মিলিয়েছিলেন। পরে ২০১৯ সালের বিধানসভা নির্বাচনে আসন ভাগাভাগি নিয়ে জটিলতায় একা লড়েন মরান্ডি। জয়ীও হন। তার পরেই ফের বিজেপিতে যোগ দিয়ে বিরোধী দলনেতা হন তিনি। আসন্ন লোকসভা ও তার পরে বিধানসভা ভোটের কথা ভেবেই তাঁকে রাজ্য সভাপতি করা হয়েছে। আর পঞ্জাবের বিজেপি সভাপতি হয়েছেন প্রয়াত কংগ্রেস নেতা বলরাম জাখরের ছেলে তথা প্রাক্তন কংগ্রেস সাংসদ সুনীল জাখর। সুনীল গত বছর বিজেপিতে যোগ দেন। দীর্ঘ সময় কংগ্রেস সরকারের মন্ত্রীও ছিলেন তিনি।
জাখর, পুরন্দেশ্বরী কিংবা বাবুলাল মরান্ডির মতোই কংগ্রেসের নেতা ছিলেন হিমন্ত বিশ্বশর্মা। তিনি এখন অসমে বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী। মণিপুরেও তাই। বতর্মান বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিংহ আগে ছিলেন কংগ্রেসে। পশ্চিমবঙ্গেও বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী আগে ছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসে। যা দেখে কংগ্রেসের রাজ্যসভা সাংসদ মণিকম টেগোরের কটাক্ষ, ‘‘সঙ্ঘ পরিবারের কি প্রতিভার অভাব হয়েছে? ঠিক কত জন প্রাক্তন কংগ্রেস নেতা এখন বিজেপির সভাপতি-সহ অন্য পদে রয়েছেন?’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)