Advertisement
০৩ মে ২০২৪
Gunshot at Jaipur-Mumbai Train

‘বি ৫, বি৬ কামরায় গিয়ে দেখি এএসআই-সহ চার জন রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে’

পুলিশকে আরপিএফ কনস্টেবল ঘনশ্যাম জানিয়েছেন, এএসআই মীণা এবং কনস্টেবল চেতন ট্রেনের এসি কামরায় নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন। আর তিনি এবং পারমার স্লিপার কামরায় ছিলেন।

জয়পুর-মুম্বই এক্সপ্রেস। (ডান দিকে) অভিযুক্ত আরপিএফ কনস্টেবল চেতন সিংহ। ছবি: সংগৃহীত।

জয়পুর-মুম্বই এক্সপ্রেস। (ডান দিকে) অভিযুক্ত আরপিএফ কনস্টেবল চেতন সিংহ। ছবি: সংগৃহীত।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
মুম্বই শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০২৩ ১২:১৪
Share: Save:

রবিবার রাতে জয়পুর-মুম্বইগামী ট্রেনে ডিউটি পড়েছিল অভিযুক্ত আরপিএফ কনস্টেবল চেতন সিংহের। ওই দিনই ওই ট্রেনেই দায়িত্বে ছিলেন অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব-ইনস্পেক্টর (এএসআই) টিকারাম মীণা এবং কনস্টেবল ঘনশ্যাম আচার্য এবং কনস্টেবল নরেন্দ্র পারমার।

সুরাত থেকে রাত ২টো ৫৩ মিনিটে জয়পুর-মুম্বই এক্সপ্রেসে উঠেছিলেন আরপিএফ কর্মীরা। পুলিশকে আরপিএফ কনস্টেবল ঘনশ্যাম জানিয়েছেন, এএসআই মীণা এবং কনস্টেবল চেতন ট্রেনের এসি কামরায় নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন। আর তিনি এবং পারমার স্লিপার কামরায় ছিলেন।

ঘনশ্যাম বলেন, “ট্রেন সুরাত স্টেশন ছাড়ার আধ ঘণ্টা পর আমি এএসআই মীণাকে রিপোর্ট জমা দিতে গিয়েছিলাম। সেখানে এএসআইয়ের সঙ্গে ছিলেন চেতন এবং তিন টিকিট পরীক্ষক। এএসআই আমাকে জানান, চেতনের শরীর খারাপ লাগছে। আমি তখন ওঁর গায়ে হাত দিয়ে বোঝার চেষ্টা করি জ্বর এসেছে কি না। কিন্তু ঠিক বুঝতে পারিনি। তবে চেতন পরের স্টেশনে নেমে যেতে চাইছিলেন। তখন এএসআই তাঁকে জানান, আর মাত্র দু’ঘণ্টা বাকি রয়েছে ডিউটি শেষ হতে। একেবারে ডিউটি শেষ করেই চিকিৎসকের কাছে যেন চলে যান।”

ঘনশ্যামের দাবি, চেতনকে ডিউটি শেষ করার কথা বললেও, তিনি এএসআইয়ের কথাকে এড়িয়ে যেতে চাইছিলেন। এর পরই এএসআই মুম্বই কন্ট্রোল রুমে চেতনের শরীর খারাপের কথা জানান। সেখান থেকে এএসআইকে নির্দেশ দেওয়া হয়, চেতনের ডিউটির সময় শেষ হলেই তবে যেন ছাড়া হয়। তার পর মুম্বইয়ে নেমে চিকিৎসা করানোর পরামর্শও দেওয়া হয়। কিন্তু চেতন পরের ট্রেন থেকে নেমে যাওয়ার জন্য জেদ ধরে বসে থাকেন। এর পর ঘনশ্যামকে চেতনের জন্য ঠান্ডা পানীয় নিয়ে আসতে বলেন এএসআই মীণা। কিন্তু ঠান্ডা পানীয় আনার পরেও চেতন তা খেতে চাননি।

পুলিশকে ঘনশ্যাম বলেন, “এএসআই আমাকে বলেন, চেতনকে বিশ্রাম দেওয়া দেওয়া হোক। একটি কামরায় নিয়ে গিয়ে ওঁকে শোয়ানোর ব্যবস্থা করতে বলেন। তার পরই আমি চেতনকে নিয়ে বি৪ কামরায় যাই। ওঁর রাইফেলটা আমার কাছে রাখি। ওঁকে শুইয়ে দিই। কিন্তু ১০ মিনিট পর চেতন আমার কাছে রাইফেলটা চান। আমি ওঁকে বিশ্রাম নিতে বলি। কিন্তু হঠাৎই রেগে গিয়ে আমার গলা টিপে ধরেন চেতন। আমি নিজেকে ওঁর হাত থেকে মুক্ত করলেও, চেতন আমার রাইফেলটা ছিনিয়ে নিয়ে চলে যান। ভেবেছিলাম, হয়তো ভুল করে আমার রাইফেলটা নিয়ে গিয়েছেন।”

ঘনশ্যাম জানিয়েছেন, এই ঘটনার পর তিনি তাঁর ঊর্ধ্বতনকে বিষয়টি জানান। এর পরই মীণা এবং ঘনশ্যাম চেতনের কাছে গিয়ে জানান, ভুল করে অন্য রাইফেল নিয়েছেন। তার পরই চেতন ওই রাইফেল ফেরত দিয়ে নিজের রাইফেল নেন। চেতনের মুখ তখন রাগে লাল দেখাচ্ছিল। চেতনকে বুঝিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করেন এএসআই। কিন্তু কিছুতেই শান্ত হচ্ছিলেন না চেতন। ঘনশ্যাম বলেন, “আমি যখন আবার নিজের কামরায় ফিরে যাচ্ছিলাম, তখন দেখি চেতন তাঁর রাইফেলের সেফটি ক্যাচ খুলছেন। তখনই বুঝে গিয়েছিলাম, কিছু একটা ঘটানোর চেষ্টা করছেন চেতন। বিষয়টি এএসআইকে জানাতেই, তিনি আবার চেতনকে শান্ত করার চেষ্টা করেন। তার পর আমি নিজের কামরায় ফিরে যাই।”

সোমবার ভোর ৫টা ২৫ মিনিট। ঘনশ্যাম জানান, ট্রেন তখন ভাইতারনা স্টেশনে পৌঁছেছে। সেই সময় তাঁর এক সহকর্মী ফোন করেন জানান, এএসআইকে গুলি করা হয়েছে। এ কথা শুনে বি৫ কামরায় ছুটে যান ঘনশ্যাম। গিয়ে দেখেন ওই কামরায় আতঙ্কে ছোটাছুটি করছেন যাত্রীরা। তাঁরা জানান, এএসআইকে গুলি করেছেন চেতন। এর পরই এএসআইয়ের সঙ্গে থাকা পারমারকে ফোন করেন ঘনশ্যাম। তিনি ঠিক আছেন কি না জানতে চান। পারমার জানান, তিনি ঠিক আছেন। এর পরই কন্ট্রোল রুমে ফোন করে গুলি চলার বিষয়টি জানান ঘনশ্যাম।

তাঁর কথায়, “বি১ কামরার সামনে চেতনকে দেখতে পেয়েছিলাম। হাতে ধরা ছিল রাইফেল। মুখে ক্রোধের ছাপ স্পষ্ট। আমাকেও গুলি করতে পারেন ভেবে পিছিয়ে এসেছিলাম। ১০ মিনিট পর ট্রেনটি ঝাঁকুনি দিয়ে থেমে যায়। তার পর দেখি চেতন ট্রেন থেকে নেমে রেললাইন ধরে হাঁটছেন। ট্রেনের দিকে রাইফেল তাক করা। ট্রেন তখন মীরা রোড এবং দহিসার স্টেশনের মাঝে। যাত্রীদের ট্রেনের মেঝেতে বসে পড়ার পরামর্শ দিলাম। তার পরই বি৫, বি৬ কামরার কাছে গুলির আওয়াজ পেলাম।”

সেই কামরার দিকে ছুটে যান ঘনশ্যাম। তত ক্ষণে চেতন ওখান থেকে চম্পট দিয়েছিলেন। ওই কামরায় গিয়ে দেখেন, এএসআই মীণা এবং আরও তিন যাত্রী রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছেন। বোরিভালি স্টেশনে গুলিবিদ্ধ চার জনকে নামানো হয়। কিন্তু তত ক্ষণে চার জনেরই মৃত্যু হয়েছিল। এএসআই মীণা ছাড়াও তিন যাত্রীর গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

RPF
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE