Advertisement
E-Paper

ক্রিকেট-কাণ্ডের হাওয়ায় নিশান ওড়াল ভারতীয় সেনাও! হঠাৎ পাকিস্তানকে তাক করে ‘সিঁদুর’ নিয়ে প্রচারের ঝাঁজ বৃদ্ধি কেন?

এশিয়া কাপ ক্রিকেটের মাঠ থেকে নতুন করে আলোচনার কেন্দ্রে ‘অপারেশন সিঁদুর’ আর যুদ্ধবিমান ধ্বংসের দাবি-পাল্টা দাবি। এ বার তার রেশ ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীতেও!

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০২৫ ২১:১৬
From cricket match to defence forces, why is there a sudden increase in claims targeting Pakistan with ‘Operation Sindoor’ ahead Bihar assembly election

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

আগামী সপ্তাহে নির্বাচন কমিশন বিহার বিধানসভা ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণা করতে পারে বলে আপাতত রাজনীতির জল্পনা। ঘটনাচক্রে, তার আগেই আবার উত্তেজনার কেন্দ্রে ‘পাকিস্তান’ এবং ‘অপারেশন সিঁদুর’! প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী থেকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিংহ, সেনাপ্রধান উপেন্দ্র দ্বিবেদী থেকে বায়ুসেনা প্রধান অমরপ্রীত সিংহের মন্তব্য, এমনকি, ক্রিকেট মাঠে দ্বৈরথের সময় অঙ্গভঙ্গিতেও চলে আসছে ‘সিঁদুর-সংঘাত’ এবং যুদ্ধবিমান ধ্বংসের প্রসঙ্গ।

কেন, তা নিয়েই তৈরি হয়েছে কৌতূহল। বিরোধীদের অনেকে বলছেন, বিহারের আসন্ন বিধানসভা ভোট ‘নজরে’ রেখেই ইসলামাবাদ বিরোধী সুর চড়ানো হচ্ছে। তাঁদের যুক্তি, ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের আগে পুলওয়ামায় জঙ্গিহানা এবং তার প্রতিক্রিয়ায় বালাকোটের জঙ্গিশিবিরে ভারতীয় বায়ুসেনার হামলাকে প্রচারে তুলে ধরে ‘নজিরবিহীন’ সাফল্য পেয়েছিল বিজেপি। কিন্তু ‘তিনশো পার’ পদ্মশিবির ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটের প্রচারে রামমন্দিরকে ‘হাতিয়ার’ করে সুবিধা করতে পারেনি। সরকার গড়ার জন্য চন্দ্রবাবু নায়ড়ুর টিডিপি এবং নীতীশ কুমারের জেডিইউ-র উপর ভরসা করতে হয়েছিল মোদীকে। সেই ‘ভুল’ থেকে শিক্ষা নিয়ে বিহারের ভোটে বিজেপি আবার পাকিস্তানের বিরোধিতায় ‘যুদ্ধজিগির’ তুলতে চাইছে বলে বিরোধী শিবিরের অনেকের বক্তব্য।

বিজেপি অবশ্য ‘সিঁদুর’ নিয়ে নিজেদের রাজনৈতিক প্রচারের সঙ্গে ভারতীয় সেনার বক্তব্যকে এক ভাবে দেখতে রাজি নয়। রাজ্য বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি রাহুল সিংহের কথায়, ‘‘যাঁরা দেশের স্বার্থের বিষয় বোঝেন না, তাঁরাই বায়ুসেনা প্রধানের সঙ্গে রাজনীতিকে জুড়তে চাইবেন। অপারেশন সিঁদুর একটা গৌরবময় অধ্যায়। তার সঙ্গে নির্বাচন, রাজনীতিকে জুড়লে আসলে দেশের গৌরবকেই লঘু করা হয়।’’

এর শুরু হয়েছিল সদ্যসমাপ্ত এশিয়া কাপে। ওই টুর্নামেন্টে পাকিস্তানের ক্রিকেটারদের সঙ্গে হাত মেলাননি ভারতের ক্রিকেটারেরা। টসের পর, এমনকি, খেলা শেষেও করমর্দন হয়নি। চ্যাম্পিয়ন হয়ে পাক ক্রিকেট বোর্ডের চেয়ারম্যান মহসিন নকভির হাত থেকে ট্রফি নিতে অস্বীকার করেছেন অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদব এবং তাঁর সতীর্থ ভারতীয় ক্রিকেটারেরা। তার আগে পাক ব্যাটার সাহিবজ়াদা ফারহানের রাইফেল চালানোর ভঙ্গি, পেসার হ্যারিস রউফের হাতের ইশারায় ভারতের যুদ্ধবিমান ধ্বংসের ইঙ্গিত এবং তার পাল্টা জসপ্রীত বুমরাহের পাক যুদ্ধবিমান ধ্বংসের বার্তা নিয়েও বিতর্ক হয়েছে। তার রেশ পুরোপুরি মেলায়নি এখনও। এই পরিস্থিতিতেই রবিবার শ্রীলঙ্কার বিশ্বকাপের ম্যাচে কলম্বোয় পাকিস্তানের মহিলা দলের মুখোমুখি হবে ভারত। ভারতীয় বোর্ড স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছে, সেই ম্যাচেও ভারতীয় ক্রিকেটারেরা পাকিস্তানের ক্রিকেটারদের সঙ্গে হাত মেলানো পারবেন না।

এরই মধ্যে শুক্রবার নতুন করে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে তোপ দাগলেন ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর দুই শাখার (বায়ুসেনা এবং স্থলসেনা) প্রধানেরা। এয়ার চিফ মার্শাল অমরপ্রীত দাবি করলেন, সিঁদুর অভিযানে পাকিস্তানের অন্তত পাঁচটি যুদ্ধবিমান ভারত ধ্বংস করেছে। তার মধ্যে রয়েছে আমেরিকার তৈরি এফ-১৬ বিমানও। পাকিস্তানের ভূখণ্ডে সর্বোচ্চ ৩০০ কিলোমিটার পর্যন্ত ঢুকে ভারত আঘাত করেছে বলেও জানালেন তিনি। অন্য দিকে, জেনারেল দ্বিবেদী জানিয়ে দিলেন, সন্ত্রাসে মদত দেওয়া বন্ধ না করলে পাকিস্তানের ঐতিহাসিক এবং ভৌগোলিক অস্তিত্ব সঙ্কটের মুখে পড়বে। তাঁর কথায়, ‘‘অপারেশন সিঁদুর ১.০-র সময় আমরা যে সংযম দেখিয়েছিলাম এ বার তা দেখাব না।’’

মোদীর ‘সিঁদুর’, রাজনাথের ‘বদল’

রবিবার রাতে ভারতীয় ক্রিকেট দল পাকিস্তানকে হারিয়ে এশিয়া কাপ জেতার অব্যবহিত পরে প্রধানমন্ত্রী মোদী সমাজমাধ্যমে লিখেছিলেন, ‘‘খেলার মাঠেও অপারেশন সিঁদুর। ফলাফল একই— ভারত বিজয়ী।’’ পহেলগাঁও হামলার পরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর অভিযানের ‘অতীত’ তুলে এ ভাবেই দেশের খেলোয়াড়দের জয়ের জন্য অভিনন্দন জানিয়ে সব শেষে তিনি লেখেন, ‘‘আমাদের ক্রিকেটারদের শুভেচ্ছা।’’

বৃহস্পতিবার গুজরাতের ভুজে দশেরা উৎসব উপলক্ষে সেনা ‘শস্ত্রপূজা’ কর্মসূচিতে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ পাকিস্তানকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘‘স্যর ক্রিক এলাকায় পাকিস্তানের যে কোনও আগ্রাসনের জবাব‌ে এমন প্রত্যাঘাত হবে, যার অভিঘাতে ইতিহাস এবং ভূগোল বদলে যাবে।’’ ১৯৬৫ সালের যুদ্ধে ভারতীয় সেনার লাহোরের উপকণ্ঠে পৌঁছে যাওয়া এবং সাম্প্রতিক ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর প্রসঙ্গ তুলে রাজনাথ বলেন, ‘‘পাকিস্তানকে মনে রাখতে হবে, করাচি যাওয়ার একটি পথ কিন্তু এই খাঁড়ি (স্যর ক্রিক) হয়েই।’’ সম্প্রতি সিন্ধু নদের ওই বদ্বীপের ৯৬ কিলোমিটার দীর্ঘ খাঁড়িবেষ্টিত অঞ্চলের ওপারে পাক সেনার তৎপরতা দেখা গিয়েছে বলে অভিযোগ। তারই প্রেক্ষিতে এমন মন্তব্য করেন রাজনাথ।

বিহার ভোটের ‘ছায়া’

গত ২২ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ে পর্যটক হত্যাকাণ্ড এবং তার জবাবে ৬ থেকে ১০ মে ‘অপারেশন সিঁদুর’ ও ভারত-পাক সামরিক সঙ্ঘাত হয়েছিল। কিন্তু সংঘর্ষবিরতির পরে (যার নেপথ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভূমিকা ছিল বলে ওয়াশিংটন এবং ইসলামাবাদের দাবি) নতুন করে টানাপড়েন তৈরি হয়নি। এমনকি, ভারত সিন্ধু ও তার উপনদীগুলির জলবন্টন চুক্তির শর্ত ভাঙলেও পাক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সরকার সামরিক পদক্ষেপের হুমকির পরিবর্তে আন্তর্জাতিক সংস্থাকে নালিশ জানানোর পথ বেছে নিয়েছে। এই আবহে হঠাৎ করে ক্রিকেট মাঠে উত্তেজনার আবহ (যাকে অনেকে ‘পূর্বপরিকল্পিত’ বলে ব্যাখ্যা করছেন) এবং তার পরে ভারতের সেনাপ্রধানদের মধ্যে সেই উত্তেজনার সঞ্চার ঘিরে প্রশ্ন উঠেছে।

‘সিঁদুরে’ কি ‘মেওয়া’ ফলবে বিহারে?

বিপণন বিশেষজ্ঞ সুহেল শেঠ পাঁচ মাস আগেই ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর সফল বিপণনের কথা বলেছিলেন। আনন্দবাজার ডট কম-এ তিনি লিখেছিলেন, ‘‘ব্র্যান্ডিং দুনিয়ার প্রতিনিধি হিসেবে আমার চোখে সর্বাগ্রে ধরা দিচ্ছে ভারতের সশস্ত্র বাহিনীর নেওয়া ‘ব্র্যান্ডিং কৌশল’। ভারতের এই সামরিক অভিযানের নামটি যে ভঙ্গিতে উন্মোচিত হয়েছে এবং তার পরে যে কৌশলে দ্রুত গোটা দেশের সঙ্গে সে নামের পরিচয় ঘটানো হয়েছে, তা আলোচিত হওয়ার মতোই। বিপণন বা ব্র্যান্ডিংয়ের দৃষ্টি নিয়ে যদি কেউ ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর দিকে তাকান, তা হলে বলতেই হবে যে, ভারতীয় বাহিনী ব্র্যান্ডিংয়ের জোরে এই অভিযানকে একটা ভিন্ন মাত্রায় তুলে নিয়ে গিয়েছে।’’

সুহেল লিখেছিলেন, ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর যে ‘লোগো’ তৈরি করা হয়েছে (এবং সারা দেশে দ্রুত যেটা ছড়িয়ে পড়েছে), সেটাই প্রথম বাজিমাত করে দিয়েছে। তাঁর মতে, ব্র্যান্ডিংয়ের ক্ষেত্রে লোগো সব সময় গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, লোগো সব সময়ই একটা অভিন্ন লক্ষ্য বা উদ্দেশ্যের সঙ্গে অনেককে জুড়ে নিতে পারে। ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর লোগো তৈরিই করা হয়েছে অর্থবহ ভাবে। অসামান্য মুনশিয়ানায় সেটি প্রচারের আলোতেও আনা হয়েছে। টকটকে লাল গোলাকার একটা সিঁদুরকৌটোকে যে ভাবে ‘সিঁদুর’ শব্দের ইংরেজি বানানে ইংরেজি ‘ও’ বর্ণ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে, তা দারুণ দৃশ্যকল্প তৈরি করেছে জানিয়ে সুহেল বলেছিলেন, ‘‘এটি খুব সহজে আমাদের বোধকে ছুঁয়ে যাচ্ছে।’’

এ বার কি বিহারবাসীর মন ছুঁয়ে ফেলবে ‘সিঁদুর’? বিরোধীদের দাবি, বিজেপি সেই চেষ্টাই শুরু করেছে।

Operation Sindoor Operation Sindoor Effect Bihar Assembly Election Asia Cup 2025
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy