পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গত বছর সবার প্রথমে জীবন বিমা ও স্বাস্থ্য বিমার প্রিমিয়ামে ১৮% জিএসটি প্রত্যাহারের দাবি তোলার পরে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন রাজনীতি করার অভিযোগ তুলেছিলেন। যুক্তি ছিল, বিমার প্রিমিয়ামে জিএসটি বাবদ যে আয় হয়, তার সিংহভাগ রাজ্যের ঝুলিতেই যায়।
আজ সেই সীতারামনই রাজ্যের অর্থমন্ত্রীদের সামনে ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য ও জীবন বিমার প্রিমিয়ামে জিএসটি প্রত্যাহারের প্রস্তাব পেশ করলেন। ফলে ব্যক্তিগত জীবন বিমা ও স্বাস্থ্য বিমার প্রিমিয়ামে এখন যে ১৮% জিএসটি চাপে, তা শূন্যে নেমে যাওয়ার রাস্তা খুলে গেল।
বুধবার দিল্লিতে স্বাস্থ্য ও জীবন বিমার প্রিমিয়ামে জিএসটি নিয়ে রাজ্যের অর্থমন্ত্রীদের মন্ত্রিগোষ্ঠীতে কেন্দ্রের এই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তাতে অধিকাংশ রাজ্যের অর্থমন্ত্রীই মত দিয়েছেন, পারিবারিক স্বাস্থ্য ও জীবন বিমায় ১৮% জিএসটি থাকুক। ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য ও জীবন বিমার প্রিমিয়ামে কোনও জিএসটি থাকা উচিত নয়।
পশ্চিমবঙ্গের অর্থ প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য দাবি তুলেছেন, শুধু জিএসটি কমালেই হবে না। তার সঙ্গে যাতে প্রিমিয়ামের বোঝা কমে, তা-ও নিশ্চিত করতে হবে। না হলে বিমা সংস্থাগুলি আমজনতাকে বোকা বানিয়ে যে পরিমাণ জিএসটি-র বোঝা কমবে, সেই পরিমাণ প্রিমিয়াম বাড়িয়ে দেবে। বিমায় জিএসটি কমলে রাজ্যগুলির যে রাজস্ব ক্ষতি হবে, তা পূরণ করতে হবেও বলে জানিয়েছেন তিনি। কেন্দ্রের হিসাবে, শুধু বিমায় জিএসটি কমানোর ফলে কেন্দ্রের বছরে ১০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব ক্ষতি হবে। চন্দ্রিমা জানিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গের রাজস্ব ক্ষতি হবে প্রায় ৯০০ কোটি টাকা। এই সংক্রান্ত মন্ত্রিগোষ্ঠীর চেয়ারম্যান, বিহারের উপমুখ্যমন্ত্রী সম্রাট চৌধরি বলেন, ‘‘মন্ত্রিগোষ্ঠীর প্রস্তাব জিএসটি পরিষদে পেশ করা হবে। সেখানেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।’’
শুধু বিমায় জিএসটি নয়। আজ রাজ্যের অর্থমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করে সামগ্রিক ভাবে দু’টি মাত্র জিএসটি-র হার, ৫ ও ১৮% চালু করে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যে জিএসটি কমানোরও প্রস্তাব করেছেন নির্মলা। এত দিন ছ’টি জিএসটি-র হার ছিল— শূন্য, ৫, ১২, ১৮, ২৮ ও ৪০%। কেন্দ্রীয় সরকার এখন সমস্ত নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য, খাবার, শিক্ষা, ওষুধে জিএসটি কমিয়ে শূন্য বা ৫% করতে চাইছে। ১২% ও ২৮% জিএসটি-র হার কার্যত উঠে যাবে। এসি, ফ্রিজ, ওয়াশিং মেশিনে জিএসটি ২৮% থেকে ১৮% হবে। এ নিয়ে বৃহস্পতিবার জিএসটি-র হার কমানো সংক্রান্ত মন্ত্রিগোষ্ঠীতে আলোচনা হবে।
নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যে জিএসটি-র হার কমলেও রাজ্যগুলির রাজস্ব ক্ষতি হবে। এত দিন শরীর-পরিবেশের পক্ষে ক্ষতিকারক ও বিলাসবহুল পণ্যে ৪০% জিএসটি-র উপরে বাড়তি সেস আদায় করে রাজ্যের ক্ষতি মেটানো হত। সেসের মেয়াদ ২০২৬-এর ৩১ মার্চ শেষ হবে। তামাক, পানমশলা, গুটখা ও বিলাসবহুল পণ্যে ৪০% জিএসটি ও অতিরিক্ত লেভি চাপতে পারে। ৪০%-এর বেশি জিএসটি বসাতে গেলে আইনে সংশোধন করতে হতে পারে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)