Advertisement
১৮ মে ২০২৪
Coronavirus in India

৪ দশকে প্রথম, জিডিপি সঙ্কোচন ২৪ শতাংশ

জিডিপি যে কমবে, তা একপ্রকার নিশ্চিতই ছিল। মতভেদ ছিল, জিডিপি কতখানি কমবে, তা নিয়ে।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা 
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৪:৩৪
Share: Save:

আশঙ্কা পুরোপুরিই সত্যি হল।

এপ্রিল থেকে জুন, অর্থ বছরের প্রথম তিন মাসে দেশের জিডিপি-র সঙ্কোচন হল২৩.৯ শতাংশ।

কোভিড সংক্রমণ রুখতে দেশ জুড়ে লকডাউনের ধাক্কায় মার্চের শেষ থেকে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড প্রায় সবই বন্ধ ছিল। ফলে জিডিপি যে কমবে, তা একপ্রকার নিশ্চিতই ছিল। মতভেদ ছিল, জিডিপি কতখানি কমবে, তা নিয়ে। আজ জাতীয় পরিসংখ্যান দফতর জানিয়েছে, এপ্রিল-জুনে জিডিপি-র বহর বৃদ্ধি বা আর্থিক বৃদ্ধির বদলে ২৩.৯% আর্থিক সঙ্কোচন হয়েছে বা জিডিপি-র বহর কমেছে। গত চার দশকে এই প্রথম জিডিপি-র সঙ্কোচন হল।

প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম বলেন, ‘‘এর অর্থ হল, গত ১২ মাসে দেশের জিডিপি-র চার ভাগের এক ভাগ মুছে গিয়েছে। অন্য ভাবে বলতে গেলে ২০১৯-২০ অর্থ বছরের শেষ থেকে জিডিপি প্রায় ২০ শতাংশ কমেছে।’’

কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন আগেই বলে রেখেছিলেন, কোভিডের মতো ‘দৈবদুর্বিপাক’-এ অর্থনীতির সঙ্কোচন হতে পারে। সোমবার মোদী সরকারের শীর্ষমহলের ব্যাখ্যা, লকডাউনের জেরে যে হেতু অধিকাংশ কল-কারখানা, ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ ছিল, তাই এই সঙ্কোচন প্রত্যাশিত। আমেরিকা, জাপান বা ব্রিটেনে সঙ্কোচনের হার এর থেকেও বেশি।

কিন্তু অর্থনীতিবিদদের আশঙ্কা, শুধু এপ্রিল থেকে জুন নয়। এর পরেও অর্থনীতির সঙ্কোচন অব্যাহত থাকবে। পরিসংখ্যান বলছে, এই তিন মাসে নতুন লগ্নি ৪৭% কমেছে। ইতিহাসে এই প্রথম।

সঙ্কোচন কোথায় কত

• জিডিপি-র সঙ্কোচন ২৩.৯%

• উৎপাদন শিল্প ২৩.৩%

• নির্মাণ ৫০.৩%

• হোটেল, পরিবহণ, যোগাযোগ ৪৭%

• আবাসন, আর্থিক পরিষেবা ৫.৩%

• সরকারি প্রশাসন, প্রতিরক্ষা ১০.৩%

• খনি, খাদান ২৩.৩%

অর্থ মন্ত্রক অবশ্য দাবি করেছে, ‘আনলক’ পর্ব শুরু হওয়ার পরে দ্রুত গতিতে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে। কিন্তু সোমবারই দেখা গিয়েছে, জুলাই মাসেও আটটি প্রধান পরিকাঠামো ক্ষেত্রে সঙ্কোচন হয়েছে। এই নিয়ে টানা পাঁচ মাস পরিকাঠামো ক্ষেত্রে সঙ্কোচন চলছে। জুলাইয়ে পরিকাঠামো শিল্পে ৯.৬% উৎপাদন কমেছে। ইস্পাত, সিমেন্ট উৎপাদন কমেছে। ফলে অন্য ক্ষেত্রেও যে উৎপাদন কমছে, তা স্পষ্ট।

লকডাউন পর্বে একমাত্র খাদ্যপণ্য ও ওষুধ ছাড়া বাকি সবেরই উৎপাদন বন্ধ ছিল। তার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে পরিসংখ্যান মন্ত্রক জানিয়েছে, এপ্রিল-জুনে কৃষি ছাড়া বাকি সব ক্ষেত্রে সঙ্কোচন হয়েছে। গোটা বর্ষার মরসুমে বৃষ্টি ও ভাল ভাবে বীজ বোনার ফলে কৃষি ও সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে বৃদ্ধির হার ৩.৪%।

চিদম্বরম বলেন, ‘‘মোদী সরকারের উদাসীন মনোভাবের জন্য দেশকে মূল্য চোকাতে হচ্ছে। অর্থমন্ত্রীর উচিত চাষিদের ও তাঁদের উপরে ভগবানের আশীর্বাদকে ধন্যবাদ জানানো।’’

মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা কে ভি সুব্রহ্মণ্যন আজ যুক্তি দিয়েছেন, এপ্রিল থেকে জুন, শুধু দেশের নয়, বিশ্বের অর্থনীতিই লকডাউনে ছিল। কিন্তু আনলক পর্ব শুরু হতেই সঙ্কোচনের মাত্রা কমতে শুরু করেছে। যে ভাবে দ্রুত গতিতে অর্থনীতি পড়েছে, তেমনই দ্রুত গতিতে অর্থনীতির পুনরুত্থান দেখা যাচ্ছে। কিন্তু প্রাক্তন অর্থসচিব সুভাষচন্দ্র গর্গের মতে, ‘‘বিপদ এখনও কাটেনি। জুলাই ও অগস্টে অর্থনীতির মাপকাঠি দেখে বোঝা যাচ্ছে, জুলাই-সেপ্টেম্বরেও জিডিপি ১২ থেকে ১৫% কমবে।’’

আর্থিক মূল্যায়ন সংস্থা আইসিআরএ-র মুখ্য অর্থনীতিবিদ অদিতি নায়ারের মতে, দ্বিতীয় ও তৃতীয় ত্রৈমাসিক, অর্থাৎ জুলাই-সেপ্টেম্বর এবং অক্টোবর-ডিসেম্বর পর্যন্ত জিডিপি-র সঙ্কোচন অব্যাহত থাকবে। তবে সঙ্কোচনের মাত্রা কমতে পারে। লকডাউনের আগে থেকেই অবশ্য অর্থনীতির ঝিমুনির ফলে আর্থিক বৃদ্ধির হার কমতে শুরু করেছিল। গত অর্থ বছরের শেষ তিন মাস, অর্থাৎ জানুয়ারি-মার্চে বৃদ্ধির হার ৩.১ শতাংশে নেমে আসে। ১৭ বছরে বৃদ্ধির হার এত কমেনি। গত অর্থ বছর বা ২০১৯-২০-তেও বৃদ্ধির হার ৪.২ শতাংশে নেমে এসেছিল।

অর্থ মন্ত্রক সূত্রের ব্যাখ্যা, সরকারি পরিসংখ্যান থেকে স্পষ্ট যে, বর্ষার মরসুম ভাল না হলে এবং কেন্দ্র ও রাজ্য মিলে খাদ্য সুরক্ষা, জনস্বাস্থ্য, একশো দিনের কাজ, নগদ ভর্তুকিতে টাকা না ঢাললে অর্থনীতির সঙ্কোচন আরও বেশি হত। তিন মাসে সরকারি খরচ বেড়েছে প্রায় ১৬% বেড়েছে। কিন্তু ধাক্কা লেগেছে ভারতের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি হল দেশের বাজার বা কেনাকাটায়। সেখানে সঙ্কোচন ২৭%।কিন্তু সরকারি খরচ বাড়িয়ে অর্থনীতি সচল রাখতে হলেও লকডাউনের ধাক্কায় সরকারের রাজস্ব আয়ও কমে গিয়েছে। সরকারি কোষাগারের তথ্য হল, এপ্রিল থেকে জুলাই, চার মাসে রাজকোষ ঘাটতি গোটা বছরের রাজকোষ ঘাটতির লক্ষ্য ছাপিয়ে গিয়েছে।

এপ্রিল থেকে জুনে জিডিপি প্রায় ২৪ শতাংশ কমে যাওয়ার পরেও অর্থনীতিবিদদের অনেকেই মনে করছেন, ছবিটা এর থেকেও খারাপ। কারণ কর্পোরেট সংস্থার পরিসংখ্যান থেকে অসংগঠিত ক্ষেত্রের ছবি পুরোপুরি ধরা পড়বে না। লকডাউনের জেরে অসংগঠিত ক্ষেত্রেই বেশি ধাক্কা লেগেছে। যার ফলে পরিযায়ী শ্রমিক থেকে গরিব মানুষ রুটিরুজি হারিয়েছেন। আজ কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধীও মোদী সরকারকে অসংগঠিত ক্ষেত্রের সমস্যার জন্য দুষেছেন। উপদেষ্টা সংস্থা সিএমআইই-র পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মার্চের শেষে লকডাউন ঘোষণা হয়েছিল। সেই মার্চে দেশে বেকারত্বের হার ছিল ৮.৭৫%। ৩০ অগস্ট শেষ হওয়া সপ্তাহেও বেকারত্বের হার ৮ শতাংশের উপরেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus in India Coronavirus Lockdown GDP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE