—ফাইল চিত্র।
গোটা দেশ জুড়ে গেরুয়া ঝড়। বিজেপির একার আসনই তিনশো ছাড়িয়েছে। কিন্তু এই প্রবল ঝড় ঠেকিয়েই বিপরীত বিন্দুতে থাকল কেরল! শবরীমালা-অস্ত্র কাজে লাগিয়েও মালাবার উপকূলে প্রভাব বিস্তারে ব্যর্থ হল বিজেপি।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ কাজে লাগিয়ে কেরলের বাম সরকার মন্দিরের দরজা মহিলাদের জন্য খুলে দেওয়ার পরে তার বিরুদ্ধে বিক্ষোভে নেমেছিল সঙ্ঘ-বিজেপি। ওই আন্দোলন-বিক্ষোভের পরবর্তী পরিস্থিতিতে কেরল বিজেপির লক্ষ্য ছিল এ বার লোকসভা ভোটে রাজ্য থেকে অন্তত দু’টো আসন জয়। সেই সঙ্গে ভোট-প্রাপ্তির হার অন্তত ২০%-এ নিয়ে যাওয়া এবং রাজ্যের অন্তত ১০টি বিধানসভা কেন্দ্রে ‘লিড’ আদায় করা। কিন্তু ফলাফল স্পষ্ট হওয়ার পরে দেখা যাচ্ছে, কোনও আসন বিজেপি তো যেতেইনি, বরং ২০ আসনের মধ্যে ১৩টিতে এনডিএ প্রার্থীদের জামানত জব্দ হয়েছে! বিজেপি পেয়েছে ১২.৯৩% ভোট। এনডিএ-র বাকি শরিকদের ভোট যোগ করলে মোট প্রাপ্তির হার ১৬%-এর কাছাকাছি। একমাত্র তিরুঅনন্তপুরম আসনে বিজেপি দ্বিতীয় স্থানে আসতে পেরেছে। ওই লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যেই নেমম বিধানসভা এলাকায় (সেখানে বিজেপিরই বিধায়ক) শুধু তাদের ‘লিড’ আছে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ বারবার কেরলে গিয়ে সব রকম চেষ্টা চালিয়েছিলেন ‘ভক্ত মনে আঘাতে’র কথা বলে শবরীমালা প্রসঙ্গে ভাবাবেগ উস্কে দেওয়ার। রাজনৈতিক শিবিরের অনেকেরই মত, এই মেরুকরণের চেষ্টার ফল বরং বিজেপির বিপক্ষে গিয়েছে। রাজ্যে ২০টির মধ্যে ১৯টি আসনই জিতে নিয়েছে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউডিএফ। বাকি একটি আসন সিপিএম। কংগ্রেস পেয়েছে ৩৭.২৭% ভোট, সিপিএম পেয়েছে ২৫.৮৩%। শরিকদের ভোট যোগ করলে ইউডিএফের ভোট প্রায় ৪৫% এবং এলডিএফের প্রায় ৩৭%।
কেরল বিজেপির রাজ্য সভাপতি পি শ্রীধরন পিল্লাই মানছেন, ‘‘রাজ্যে আমাদের ফল প্রত্যাশামতো হয়নি। গোটা দেশের থেকে আলাদা প্রবণতা এখানে কেন হল, তা খতিয়ে দেখতে হবে।’’ ঘরোয়া আলোচনায় বিজেপি নেতারা স্বীকার করছেন, তাঁরা শবরীমালা এবং হিন্দু ভাবাবেগে বেশি জোর দিতে যাওয়ায় রাজ্যের মুসলিম ও খ্রিস্টান— দু’ধরনের সংখ্যালঘুই কংগ্রেসকে ঢেলে ভোট দিয়েছেন। তাতে বামেদের ক্ষতি হয়েছে বটে। কিন্তু বিজেপির কোনও ফায়দা হয়নি।
পাতানামতিট্টা লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে শবরীমালা মন্দিরের এলাকা। ওই কেন্দ্রে কংগ্রেসের অ্যান্টো অ্যান্টনিই ফের জয়ী হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন সিপিএমের বীণা জর্জ। বিজেপির কে সুরেন্দ্রন শেষ করেছেন তৃতীয় স্থানে। শবরী-বিক্ষোভের জেরে সুরেন্দ্রনের জেলে যাওয়ার ঘটনাও তাঁকে ভোটে বিশেষ ‘সহানুভূতি’ এনে দেয়নি। আবার ওয়েনাডে রাহুল গাঁধীর বিরুদ্ধে এনডিএ শরিক ভারতীয় ধর্ম জন সেনার (বিডিজেএস) তুষার ভেল্লাপল্লি জামানত খুইয়েছেন।
সিপিএমের কান্নুর জেলা সম্পাদক এবং ভাডাকারা কেন্দ্রের প্রার্থী পি জয়রাজনের মতে, ‘‘শবরীমালা বা অন্য কোনও বিষয়ে কেরলের রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে মানুষ রায় দেননি। ভোটের এই ফল বরং বিজেপির বিরুদ্ধে জনমতের প্রতিফলন। যার ফসল আমরা পাইনি, কংগ্রেস পেয়েছে।’’ আর তিরুঅনন্তপুরমে গত বারের চেয়ে ব্যবধান বাড়িয়ে ৯৯ হাজার ৯৮৯ ভোটে জিতে, তৃতীয় বারের জন্য সাংসদ হয়ে কংগ্রেসের শশী তারুরের মন্তব্য, ‘‘বিজেপিকে রুখতে কেরলের মানুষের চেষ্টা সারা দেশের নিরিখে শেষ পর্যন্ত কাজে লাগল না! আফশোস এটাই যে, আমরা সেঞ্চুরি করলাম কিন্তু টিম হেরে গেল!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy