Advertisement
E-Paper

আঞ্চলিক দলগুলির অস্তিত্ব কি প্রশ্নের মুখে

মমতা ব্রিগেডে সব আঞ্চলিক দলের নেতাদের হাজির করিয়ে বার্তা দিয়েছিলেন, তিনি এই ফ্রন্টের নেতৃত্ব দিতে তৈরি। তৃণমূল নেত্রী সভায় বলেছিলেন, ‘‘বিয়াল্লিশটা সিট দিন, দিল্লি কী ভাবে কাঁপাতে হয়, আমরা জানি। দিল্লি কী করে দখল করতে হয়, আমরা জানি। দিল্লিতে কী ভাবে সরকার গড়তে হয়, আমরা জানি।’’

প্রেমাংশু চৌধুরী

শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০১৯ ০৩:৩০
ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

‘ফেডারেল ফ্রন্ট’— মুখে এই দু’টি শব্দ নিয়ে কখনও নবান্ন, কখনও ভুবনেশ্বরে হাজির হতেন কে চন্দ্রশেখর রাও। বৈঠক করতেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, নবীন পট্টনায়কদের সঙ্গে।

ত্রিশঙ্কু লোকসভা হবে। অ-কংগ্রেসি, অ-বিজেপি সরকার হবে। আঞ্চলিক দলগুলির সরকার হবে। তিনি হবেন ‘কিং-মেকার’। এটাই ছিল রাওয়ের ইচ্ছা। রাওয়ের ডাকে সবাই যে সাড়া দিয়েছিলেন, এমন নয়। তাঁর পরে একই চেষ্টা শুরু করেন চন্দ্রবাবু নায়ডু। কিন্তু রাও বা নায়ডু তো ‘কিং-মেকার’ হলে, ‘কিং’ হবেন কে? তা নিয়েও দড়ি টানাটানি কম হয়নি।

মমতা ব্রিগেডে সব আঞ্চলিক দলের নেতাদের হাজির করিয়ে বার্তা দিয়েছিলেন, তিনি এই ফ্রন্টের নেতৃত্ব দিতে তৈরি। তৃণমূল নেত্রী সভায় বলেছিলেন, ‘‘বিয়াল্লিশটা সিট দিন, দিল্লি কী ভাবে কাঁপাতে হয়, আমরা জানি। দিল্লি কী করে দখল করতে হয়, আমরা জানি। দিল্লিতে কী ভাবে সরকার গড়তে হয়, আমরা জানি।’’ ভোটপর্বের শেষবেলায় মায়াবতী নিজের মুখে কার্যত বলেই ফেলেছিলেন, তিনি নরেন্দ্র মোদীর থেকে ভাল প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন।

লোকসভা ভোটের ফলাফল শুধু ‘ফেডারেল ফ্রন্ট’ নয়, দেশের আঞ্চলিক দলগুলির ভবিষ্যৎ নিয়েও প্রশ্ন তুলে দিল। কারণ অন্ধ্রপ্রদেশে ওয়াইএসআর কংগ্রেস, তামিলনাড়ুতে ডিএমকে এবং ওড়িশায় বিজু জনতা দল ছাড়া আর কোনও আঞ্চলিক দলই ভাল ফল করতে পারেনি। মমতা থেকে মায়াবতী, মেহবুবা মুফতি থেকে অখিলেশ যাদব— সকলেই ‘নরেন্দ্র মোদী’ নামের ঝড়ে কম-বেশি ধরাশায়ী। এক কথায় তার প্রমাণ হল, যে ১০টি রাজ্যে বিজেপি ক্ষমতায় নেই, সেখানকার ২৩১টি আসনের অর্ধেকের বেশি বিজেপির দখলে।

আঞ্চলিক দলগুলি কি তবে প্রাসঙ্গিকতা হারাতে শুরু করল? রাজনীতিকরা এখনই তা মানতে রাজি নন। কারণ এ বারের লোকসভা ভোটেই অন্ধ্রে ওয়াইএসআর কংগ্রেসের উত্থান ঘটেছে। এই আঞ্চলিক দলটির নেতা জগন্মোহন মুখ্যমন্ত্রীর পদে বসতে চলেছেন চন্দ্রবাবুর তেলুগু দেশম পার্টিকে হারিয়ে। ওড়িশায় লোকসভায় আসন কমলেও ফের মুখ্যমন্ত্রী পদে ফিরতে চলেছেন নবীন। পঞ্চম বার! তামিলনাড়ুতে এডিএমকে-কে পিছনে ফেলে এগিয়ে এসেছেন করুণানিধি-পুত্র, ডিএমকে নেতা স্ট্যালিন।

২০০৪-এ বিহার থেকে লালুপ্রসাদ বিপুল আসন ঝুলিতে পুরে রেলমন্ত্রী হয়েছিলেন। তেজস্বী যাদবের আরজেডি এ বার শূন্য। কর্নাটকে এইচ ডি দেবগৌড়া-কুমারস্বামীর জেডি(এস) ক্ষমতায় থাকলেও একটি মাত্র আসনে জিতে আসতেই নাভিশ্বাস ওঠার অবস্থা হয়েছে। শরদ পওয়ারের দল মাত্র পাঁচটি আসনে জিতে আসতে পারবে কি না, তা নিয়েই সন্দেহ দেখা দিয়েছে। ধুঁকছে শিবু সোরেনের ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চাও। আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুঠো থেকে যে ভাবে ১৮টি লোকসভা, চারটি বিধানসভা আসন ছিনিয়ে নিয়েছে বিজেপি, তাতে ২০২১ নিয়ে তৃণমূল নেত্রীর কপালে ভাঁজ পড়তে বাধ্য।

মহারাষ্ট্রে শিবসেনা, বিহারে জেডি(ইউ), পঞ্জাবে অকালি দল এনডিএ-র শরিক ছিল। তিন রাজ্যেই আঞ্চলিক দল এখন কোণঠাসা। শক্তি বাড়িয়েছে বিজেপি। কাশ্মীরে কিছু দিন আগেও বিজেপির সঙ্গে মিলে সরকারে ছিল পিডিপি। সেই পিডিপির নেতা নিজামুদ্দিন ভাট ফল ঘোষণার আগেই বলেছিলেন, বিজেপি ফের ক্ষমতায় এলে আঞ্চলিক দলগুলিকে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে। বিপুল ভোটে জেতার পরে মোদী সরকার যে কাশ্মীরের গদি দখলে ফের ঝাঁপাবে, তাতে কোনও সংশয় নেই। ফলে জম্মু-কাশ্মীরে ন্যাশনাল কনফারেন্স, পিডিপির ভবিষ্যৎ কী দাঁড়াবে, প্রশ্ন তুলে দিয়েছে আজকের ফলাফল।

Election Results 2019 Mamata Banerjee Chandrababu Naidu
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy