Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

নয়া শর্তে সভাপতি রাহুলই, দাবি দলের

রাহুলকে বোঝাতে আজ সকালে আহমেদ পটেল ও কে সি বেণুগোপাল তাঁর কাছে যান। কিন্তু রাহুল তাঁদের ফের জানিয়ে দেন, ইস্তফার অবস্থান থেকে তিনি সরছেন না। নতুন কাউকে সভাপতি খুঁজে নিক দল।

মা-ছেলে: জওহরলাল নেহরুর মৃত্যুবার্ষিকীতে শান্তিবনে শ্রদ্ধা জানাতে হাজির সনিয়া ও রাহুল গাঁধী। ছবি: পিটিআই।

মা-ছেলে: জওহরলাল নেহরুর মৃত্যুবার্ষিকীতে শান্তিবনে শ্রদ্ধা জানাতে হাজির সনিয়া ও রাহুল গাঁধী। ছবি: পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৮ মে ২০১৯ ০২:৩০
Share: Save:

নতুন কাউকে সভাপতি করার অবস্থানে সোমবারও দীর্ঘক্ষণ অবধি অনড় ছিলেন রাহুল গাঁধী। রাহুলের জেদ দেখে রাজ্যে রাজ্যে নেতাদের পদ থেকে ইস্তফা পেশের হিড়িক পড়ে। ‘কামরাজ প্ল্যান’-এর দিন ফিরে এল কি না, গুঞ্জন শুরু হয় দলের অন্দরেই। তবে রাতের দিকে বরফ কিছুটা হলেও গলেছে বলে সূত্রের দাবি।

রাহুলকে বোঝাতে আজ সকালে আহমেদ পটেল ও কে সি বেণুগোপাল তাঁর কাছে যান। কিন্তু রাহুল তাঁদের ফের জানিয়ে দেন, ইস্তফার অবস্থান থেকে তিনি সরছেন না। নতুন কাউকে সভাপতি খুঁজে নিক দল। যদিও আহমেদ পটেল পরে টুইট করে জানান, ‘‘রুটিন প্রশাসনিক কাজের জন্য আমি কংগ্রেস সভাপতির সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম। অন্য কোনও জল্পনা ভিত্তিহীন।’’ কংগ্রেসের মুখপাত্র রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালাও বিবৃতি দিয়ে বলেন, ‘‘ওয়ার্কিং কমিটি রাহুল গাঁধীকেই সংগঠনের আমূল পরিবর্তনের দায়িত্ব দিয়েছে।’’ অর্থাৎ, রাহুল গাঁধীই সভাপতি থাকছেন।

কিন্তু কংগ্রেসের সূত্রই বলছে, রাহুল এতই ক্ষুব্ধ যে তিনি সব বৈঠক বাতিল করে দিয়েছেন। আহমেদ পটেল ও বেণুগোপাল ছাড়া কারও সঙ্গে দেখা করেননি। অশোক গহলৌত দেখা করতে চাইলেও তাঁকে ফিরিয়ে দিয়েছেন। পরে আহমেদ পটেল প্রিয়ঙ্কার সঙ্গে কথা বলেন। রাহুলের সঙ্গেও কথা হয় প্রিয়ঙ্কার। রাতের দিকে দলীয় সূত্রে জানা যায়, রাহুল সম্ভবত কিছু শর্ত দিতে চলেছেন। দলের সভাপতির দায়িত্ব সামলাতে হলে সংগঠনের নিয়ন্ত্রণ এবং দলীয় কার্যশৈলী বদল করার ক্ষমতা তাঁর হাতে থাকতে হবে। এই শর্ত মানলে তিনি হয়তো কাজ চালিয়ে যাবেন। আহমেদ পটেল রাতে বলেন, ‘‘নো চেঞ্জ, অল ইজ ওয়েল।’’

কামরাজ প্ল্যান কী? ১৯৬৩ সালে তামিলনাড়ুর (তখন মাদ্রাজ) মুখ্যমন্ত্রী কুমারস্বামী কামরাজ প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুকে প্রস্তাব দিয়েছিলেন, কংগ্রেসের সব প্রবীণ নেতার মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দলের কাজ করা উচিত। নইলে নেতাদের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক ছিন্ন হচ্ছে। এ কথা শুনে নেহরু নিজেও সরে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু কামরাজ রাজি হননি। তবে লালবাহাদুর শাস্ত্রী, মোরারজি দেশাই, জগজীবন রামের মতো কেন্দ্রীয় মন্ত্রী-সহ কামরাজ, বিজু পট্টনায়কের মতো ৬ জন মুখ্যমন্ত্রী পদত্যাগ করেন। কামরাজকে দলের সভাপতি করেন নেহরু।

জুন মাসের গোড়ায় রাহুল নতুন সাংসদদের নিয়ে বৈঠক করতে পারেন। সংসদে দলের নেতা হতেও তিনি রাজি। এ দিন দুপুরে নেতাদের বলেছেন, ‘‘আমি ‘ভ্যানিশ’ হয়ে যাচ্ছি না। দলে থেকেই লড়াই জারি রাখব। তবে গাঁধী পরিবারের বাইরে থেকে কাউকে সভাপতি করুন। আমার বোনকে এর মধ্যে টানবেন না।’’

তবে রাহুলের কড়া অবস্থানে দলের অন্য নেতাদের উপরে চাপ বাড়ছে। রাহুল এত দিন রাজ্যে-রাজ্যে বড় নেতাদের উপর ভরসা রেখে এগিয়েছেন। তাঁদের দাবি মেনে নিয়েছেন। সনিয়াও প্রবীণদের রাখতে চেয়েছিলেন। অথচ তাঁদের ব্যর্থতার কারণেই কংগ্রেসের আজ এই হাল। ওয়ার্কিং কমিটি রাহুলকেই দলের খোলনলচে বদলানোর দায়িত্ব দিয়েছে। সেটা তখনই সম্ভব হবে, যখন তাবড় নেতারা পদ ছেড়ে দেবেন। তখনই মাটির সঙ্গে যোগ থাকা নেতাদের সামনে এনে দল ঢেলে সাজানো যাবে। তাই সূত্রের খবর, কৌশলগত ভাবেই নিজের ইস্তফায় অনড় থেকে বাকিদের উপরে চাপ বাড়াচ্ছেন রাহুল।

উত্তরপ্রদেশের সভাপতি রাজ বব্বর, মহারাষ্ট্রের অশোক চহ্বাণ, প্রদেশ কমিটি থেকে কমল নাথের পর ওড়িশার নিরঞ্জন পট্টনায়েক, কর্নাটকের এইচ কে পাটিল, অসমের রিপুন বোরা, ঝাড়খণ্ডের অজয় কুমার, পঞ্জাবের সুনীল জাখররা ইস্তফা পেশ করেছেন। যদিও পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ক্যাপ্টেন অমরেন্দ্র সিংহ বলেছেন, রাজ্যে ভাল ফলের পর জাখরের ইস্তফা দেওয়ার মানে হয় না। কিন্তু ইস্তফার হিড়িক দেখে অনেকেরই ‘কামরাজ প্ল্যান’-এর কথা মনে পড়ছে। তবে কংগ্রেসের সঙ্কট এ বারে কিছুটা ভিন্ন। পরপর দুটি লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস শোচনীয় ফল করল। শতাব্দীপ্রাচীন দলটি লোকসভায় ৫৫টিরও কম আসন পাওয়ায় এ বারেও প্রধান বিরোধী দলের মর্যাদা পাচ্ছে না। যে তিন রাজ্যে মাত্র পাঁচ মাস আগে কংগ্রেস সরকার গড়েছিল, সেগুলি-সহ ১৭টি রাজ্যেই ধরাশায়ী হয়েছে সে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE