গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
ওয়েনাড়ে ভূমিধসের পূর্বাভাস বিতর্কে এ বার ‘মুখ খুলল’ কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠান ‘ভারতীয় ভূতত্ত্ব সর্বেক্ষণ’ (জিয়োলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া বা জিএসআই)। সংস্থার তরফে শুক্রবার জানানো হয়েছে, পাহাড়ি এলাকায় ধস থেকে প্রাণহানি বাঁচাতে বছর কয়েক আগে যে বিশেষ সতর্কবার্তা চালু করা হয়েছিল, তা এখনও পরীক্ষামূলক স্তরে রয়েছে। এখনও দেশের আমজনতাকে নিখুঁত ভাবে ভূমিধসের পূর্বাভাস দেওয়ার পদ্ধতি চালু করতে চার-পাঁচ বছর সময় লাগবে বলে জানানো হয়েছে প্রতিষ্ঠানের তরফে।
প্রসঙ্গত, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বুধবার সংসদের উচ্চকক্ষে দাবি করেন, ওয়েনাড়ে ভূমিধসকাণ্ডের অন্তত এক সপ্তাহ আগে, গত ২৩ জুলাই, কেন্দ্র বিজয়ন সরকারকে এ নিয়ে সতর্ক করেছিল। ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস শুনেই পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর ন’টি দল। শাহ বলেন, ‘‘কেরলে আগেভাগেই জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী (এনডিআরএফ)-র ন’টি দলকে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু কেরল সরকার সময় থাকতে মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরানোর বন্দোবস্ত করেনি। তা করা হলে প্রাণহানি কিছুটা হ্রাস পেত।’’
কিন্তু কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন বুধবার রাতেই শাহের দাবি খারিজ করে বলেন, ‘‘ওয়েনাড়ে ধসের সম্ভাবনা নিয়ে কেন্দ্রের তরফে কেরলকে কোনও সতর্কবার্তা পাঠানো হয়নি।’’ শুধুমাত্র কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতর (আইএমডি)-এর তরফে ওয়েনাড় এবং সংলগ্ন এলাকায় ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নিয়ে একটি ‘মামুলি’ কমলা সতর্কতা পাঠানো হয়েছিল বলে দাবি করেছিলেন বিজয়ন। কেন্দ্রীয় সংস্থা জিএসআই-এর বিবৃতিতে কার্যত কেরলের মুখ্যমন্ত্রীর যুক্তি মান্যতা পেল বলে ভূতত্ত্ববিদদের একাংশ মনে করছেন।
সূত্রের খবর, ভূবিজ্ঞান এবং বিপর্যয় সংক্রান্ত ক্ষেত্রে সতর্কবার্তাকে আরও কী ভাবে উন্নত ও নিখুঁত করা যায় সুসংহত পদ্ধতি মেনে সেই প্রচেষ্টা চালাচ্ছে জিএসআই। এই উদ্দেশ্যে কয়েক বছর আগে সতর্কবার্তা পাঠানোর পদ্ধতিও চালু করা হয়েছিল। জিএসআই শুক্রবার সংবাদ সংস্থা পিটিআই-কে জানিয়েছে, এখনও সেই ‘সতর্কবার্তা মডেল’ প্রাথমিক স্তরে রয়েছে এবং দিনে মাত্র এক বার সেই বার্তা পাঠানো হয়। এ ক্ষেত্রেও রাজ্য বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ (এসডিএমএ) এবং জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ (ডিডিএমএ)-কে সেই পরীক্ষামূলক সতর্কবার্তা পাঠানো হয়েছিল বলে জিএসআই মুখপাত্রের দাবি।
পরিবেশবিজ্ঞানী ও ভূতত্ত্ববিদদের একাংশের মতে, ভূতত্ত্বগত ভাবে এ দেশে সবচেয়ে ধসপ্রবণ হিমালয় পার্বত্য এলাকা। তার পরেই দক্ষিণ ভারতের পশ্চিমঘাট পর্বত। অল্প সময়ের মধ্যে অতি পরিমাণে বৃষ্টি হলে ধসের আশঙ্কা বাড়ে। সাধারণত ২০ ডিগ্রির বেশি ঢাল হলেই ধস সম্ভাবনা থাকে। তার উপরে সংশ্লিষ্ট এলাকার ভূতাত্ত্বিক গঠন এবং মাটির চরিত্রের উপরেও বিষয়টি অনেকাংশে নির্ভরশীল। ধসের ফলে শুধু প্রাণহানি বা সম্পত্তিহানি হয় তা-ই নয়, পাহাড়ি এলাকায় সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
এমন পরিস্থিতির ফলে উদ্ধারকাজেও দেরি হয়। যেমনটা হচ্ছে ওয়েনাড়ে। কেরলের স্বাস্থ্যমন্ত্রী বীণা জর্জ শুক্রবার জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত ওয়েনাড়ে মৃতের সংখ্যা ৩০৮। তার মধ্যে ১৯৫টি দেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়াও ১১৩টি দেহাংশ পেয়েছেন উদ্ধারকারীরা। সেগুলিরও ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। যদিও সরকারি খাতায় এখনও পর্যন্ত ১৯০ জনের মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়েছে। সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, মৃতের সংখ্যা ১৯০, নিখোঁজ ২০০-র বেশি মানুষ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy