Advertisement
১৯ মে ২০২৪
মিলছে না কৃষক-দুর্দশার অঙ্ক

অবাক করছে আত্মহত্যার সরকারি তথ্য

গোটা দেশে ২০১৫ সালে ১২ হাজারের বেশি কৃষক আত্মহত্যা করেছেন। তবে কেন্দ্রের জাতীয় ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরো (এনসিআরবি) জানাচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গ-সহ ৭টি রাজ্যে ওই বছর একটিও কৃষক আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেনি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৭ মে ২০১৭ ০৩:৪৪
Share: Save:

গোটা দেশে ২০১৫ সালে ১২ হাজারের বেশি কৃষক আত্মহত্যা করেছেন। তবে কেন্দ্রের জাতীয় ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরো (এনসিআরবি) জানাচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গ-সহ ৭টি রাজ্যে ওই বছর একটিও কৃষক আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেনি। রাজ্যগুলিই তাদের পুলিশ রেকর্ডের ভিত্তিতে এনসিআরবি-কে এই কথা জানিয়েছে। কৃষক আত্মহত্যা নিয়ে এক জনস্বার্থ মামলায় কেন্দ্রীয় সরকার সম্প্রতি এই তথ্য পেশ করায় অনেকেই বিস্মিত। বিশেষ করে কৃষক সংগঠনগুলির সঙ্গে যু্ক্ত ও সমাজকর্মীদের অনেকে প্রশ্ন তুলছেন এর বাস্তবতা নিয়ে। এমন অভিযোগও উঠছে যে, সব রাজ্যে পুলিশের রেকর্ডে কৃষকদের আত্মহত্যার তথ্য ঠিকঠাক নথিভুক্ত হচ্ছে না। হিসেব রাখার পদ্ধতির কারণেও কৃষকদের আত্মহত্যার আসল ছবিটা ধরা পড়ছে না।

কেন্দ্রীয় সরকারের তথ্য বলছে ২০১৪-২০১৫, দু’বছরেই কৃষক-খেতমজুর মিলিয়ে আত্মহত্যার সংখ্যা ছিল ১২ হাজারের বেশি। তবে কৃষক আত্মহত্যার ঘটনা ৫,৬৫০ থেকে বেড়ে হয়েছে ৮,০০৭। অর্থাৎ ৪২% বেড়েছে। অথচ ওই একই সময়ে খেতমজুরের আত্মহত্যার ঘটনা ৬,৭১০ থেকে কমে হয়েছে ৪,৫৯৫। চাষ করতে গিয়ে ঋণের দায়ে দেউলিয়া হয়ে আত্মহত্যার হারই সব থেকে বেশি। ৩৮.৭% কৃষকই দেনার দায়ে আত্মহত্যা করছেন। আরও ১৯.৫% কৃষক আত্মহত্যা করেছেন কৃষি সংক্রান্ত সমস্যায়।

যদিও কৃষক সংগঠনগুলির অভিযোগ, বাস্তবে আত্মহত্যার সংখ্যা ঢের বেশি। কৃষক সভার যুগ্ম সম্পাদক বিজু কৃষ্ণনের অভিযোগ, ‘‘জাতীয় ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরো ভাগচাষি ও কৃষিক্ষেত্রের শ্রমিকদের স্বনিযুক্ত বলে উল্লেখ করে কৃষক আত্মহত্যা কম করে দেখাতে চাইছে। সেই কারণেই খেতমজুরদের সংখ্যা কমেছে বলে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু বাস্তব ছবিটা আলাদা। পরপর দু’বছরের খরার ধাক্কা সামলাতে না সামলাতেই নোট-বন্দির ফলেও কৃষকদের উপর চাপ বেড়েছে।’’

কৃষি ক্ষেত্রে আত্মহত্যা

জাতীয় ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরো

২০১৪ সালে মোট ১২,৩৬০

• কৃষক ৫,৬৫০

• খেতমজুর ৬,৭১০

২০১৫ সালে মোট ১২,৬১০

• কৃষক ৮,০০৭

• খেতমজুর ৪,৫৯৫

• দেনার চাপে ৩৮.৭%

• চাষের সমস্যায় ১৯.৫%

মোদী সরকারের কৃষিমন্ত্রী রাধামোহন সিংহ অবশ্য বলছেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী ২০২২-এর মধ্যে কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করার লক্ষ্য নিয়েছেন। অধিকাংশ কৃষক দারিদ্রসীমার নীচে। কৃষকদের আয় বাড়লে আত্মহত্যার প্রবণতাও কমবে।’’ প্রাকৃতিক দুর্যোগের রক্ষাকবচ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী ফসল বিমা যোজনা চালু হয়েছে।

পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে কৃষক সংগঠনগুলির বক্তব্য, এই রাজ্যে সব থেকে বড় সমস্যা হল, ধান ও আলুর উপযুক্ত দাম না পাওয়া। ৫০ কেজির আলুর বস্তার যা দাম মিলছে, তা ফলানোর খরচের থেকে অনেক কম। কিষাণ মান্ডিতে ধান বেচতে গিয়ে ন’রকমের প্রমাণপত্র দিতে হয়। কিন্তু তার পরেও দাম পেতে দেরি হয়। ফলে সরকারের ঘোষিত দামের থেকে কয়েকশো টাকা কমে ধান বিক্রি করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন কৃষকেরা।

কৃষক সংগঠনগুলি মনে করে, আত্মহত্যার সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন বা তরজা রাতারাতি মিটবে না। কিন্তু অবিলম্বে কৃষকদের এই সমস্যাগুলির দিকে নজর দেওয়া দরকার। কেন্দ্রীয় সরকার সুপ্রিম কোর্টে যুক্তি দিয়েছে, কৃষক আত্মহত্যার ঘটনা ঘটলে পরিবারের জন্য ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়। কিন্তু প্রধান বিচারপতি জে এস খেহরের বক্তব্য, সরকারের উচিত আত্মহত্যার আগেই কৃষকদের সুরাহার ব্যবস্থা করা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Suicide Farmer Government Information
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE