Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
PFI

PFI: বাইরে প্রচার, সরকার দুষছে পিএফআই-কে

বুধবার দিল্লি, মহারাষ্ট্র, উত্তরপ্রদেশ, পঞ্জাব ও জম্মু ও কাশ্মীরের মতো রাজ্যগুলিকে সতর্ক করে দিল কেন্দ্র।

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

অনমিত্র সেনগুপ্ত
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০২২ ০৮:২৬
Share: Save:

বিজেপি মুখপাত্ররা পয়গম্বরকে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করায় গত কালই ভারতে আত্মঘাতী হামলা চালানোর হুমকি দিয়েছে আল কায়দা। ওই হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার দিল্লি, মহারাষ্ট্র, উত্তরপ্রদেশ, পঞ্জাব ও জম্মু ও কাশ্মীরের মতো রাজ্যগুলিকে সতর্ক করে দিল কেন্দ্র। সূত্রের মতে, আগামী দিনে জনবহুল স্থানে জঙ্গি হামলার আশঙ্কা করছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। সেই কারণ ভিড়বহুল স্থান যেমন স্টেশন, বাস স্ট্যান্ড, মন্দির-মসজিদ, স্কুল, শপিং মলে নিরাপত্তা জোরদার করার প্রশ্নে জোর দেওয়া হয়েছে। এ দিকে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন নিয়ে বিক্ষোভ, দিল্লি দাঙ্গার পরে কানপুরের গোষ্ঠী সংঘর্ষেও কট্টরপন্থী সংগঠন পপুলার ফ্রন্ট অব ইন্ডিয়া (পিএফআই)-এর হাত রয়েছে বলে জেনেছেন গোয়েন্দারা।

বিজেপি মুখপাত্রদের কারণে মুসলিম দুনিয়ার কাছে প্রবল অস্বস্তির মুখে পড়তে হয় ভারতকে। গোয়েন্দারা বলছেন, ওই বিতর্কের আন্তর্জাতিক প্রচারের পিছনে পিএফআই-এর হাত রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। তাঁদের দাবি, অতীতে ২০২০ সালে ঠিক একই ভাবে দিল্লি দাঙ্গাকেও আন্তর্জাতিক দুনিয়ার সামনে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছিল পিএফআই। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রের মতে, বিজেপি মুখপাত্রের পয়গম্বরের বিরুদ্ধে করা আপত্তিকর মন্তব্যকে কেন্দ্র করে কানপুরে যে গোষ্ঠী সংঘর্ষ হয়, তার পরেই বিষয়টি আন্তর্জাতিক দুনিয়ার নজর আসে। বিশ্ব মঞ্চে ওই ঘটনাকে তুলে ধরার পিছনে পিএফআই-এর হাত রয়েছে বলেই মনে করছেন গোয়েন্দারা। টুলকিটের মাধ্যমে যাদের পিছন থেকে প্রচারে মদত দিয়েছে পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই।

২০২০ সালে যখন দিল্লি দাঙ্গার সময়ে ভারত সফর করছিলেন তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এমনকি তিনি দিল্লিতে থাকাকালীন উত্তর-পূর্ব দিল্লির একাধিক জায়গায় প্রবল গোষ্ঠী সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। স্বভাবতই তা বিশ্বের নজর কেড়ে নেয়। এ ক্ষেত্রেও গত শুক্রবার কানপুরে যে দাঙ্গা হয় সে দিন উত্তরপ্রদেশে ছিলেন খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে ঘটা ওই দাঙ্গা নজর কেড়ে নেয় সংবাদমাধ্যমের। হাই প্রোফাইল নেতাদের উপস্থিতিতে যে ভাবে দিল্লি ও কানপুরের গোষ্ঠী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটানো হয়, তার মধ্যে যোগসূত্র হিসাবে নাম উঠে আসে পিএফআই-এর। যদিয়ো পিএফআই সংগঠনটির দাবি, উত্তরপ্রদেশে তাদের কোনও সংগঠনই নেই। তবে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ জানিয়েছে, ওই ঘটনায় ধৃত ৫৪ জনের মধ্যে ৩ জন পিএফআইয়ের সঙ্গে যুক্ত। বিরোধী শিবিরের দাবি, দিল্লি দাঙ্গার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর কিংবা বিজেপি নেতা কপিল মিশ্রদের উত্তেজক বয়ান সংঘর্ষের অন্যতম কারণ ছিল। কানপুরের ক্ষেত্রেও বিজেপি নেতাদের উত্তেজক বয়ানই দায়ী। বিরোধীদের মতে, নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতেই বিজেপি এখন পিএফআই-র ঘাড়ে বন্দুক রাখার কৌশল নিয়েছে।

জঙ্গি কার্যকলাপে সরাসরি যুক্ত থাকার কারণে পিএফআই-কে নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সরব অসম ও উত্তরপ্রদেশ সরকার। এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বলেন, “কিছু রাজ্য দাবি জানিয়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” যদিও বিরোধীদের বক্তব্য, হায়দরাবাদের এমআইএম দলের মতোই পিএফআই হল বিজেপির বি-টিম। বিরোধীদের মতে, কট্টর ওই মৌলবাদী সংগঠনগুলির লক্ষ্যই হল মুসলিম তোষণের কথা বলা যা আখেরে হিন্দু মেরুকরণের প্রশ্নে বিজেপিকে সাহায্য করে। সেই কারণে পিএইআইয়ের বিরুদ্ধে নানাবিধ দেশবিরোধী কাজের অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও তাদের নিষিদ্ধ করার পথে হাঁটতে রাজি নয় কেন্দ্র।

এ মাসের শেষেই শুরু অমরনাথ যাত্রা। তার আগে জঙ্গি সংগঠন আল কায়দার হুমকিতে নড়েচড়ে বসেছে কেন্দ্রও। দেশ জুড়ে জঙ্গি সংগঠনগুলির যে স্লিপার শাখা রয়েছে, তার উপরে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। দেশে অস্থিরতা তৈরি করতে আল কায়দার সম্ভাব্য নিশানা স্কুল, শপিং মল ও ধর্মীয় স্থানগুলি হতে পারে বলে মনে করছেন গোয়েন্দারা। নজরদারি বাড়ানো হয়েছে অমরনাথ যাত্রা পথেও। সূত্রের দাবি, খুবই স্পর্শকাতর সময়। তাই সম্ভাব্য সব ধরনের হামলা আটকানোর প্রস্তুতি চালু রয়েছে। বিশেষ ভাবে নজরদারি করা হচ্ছে ভিড়বহুল এলাকাগুলিতে। সমস্ত এজেন্সিকে সতর্ক করা হয়েছে। এ দিকে আল কায়দার হুমকি প্রসঙ্গে পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলির নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শিবসেনা সাংসদ প্রিয়ঙ্কা চর্তুবেদী। তাঁর কথায়, “পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলির উচিত এক সুরে আল কায়দার হুমকির বিরোধিতা করা। ধর্মীয় ভাবনাকে শ্রদ্ধা করা এক রকম, কিন্তু তার ভিত্তিতে হামলা চালানো আর এক রকম।” বিজেপি নেতৃত্ব বিষয়টি নিয়ে মুখে কুলুপ দিলেও, বুধবার বিজেপি শাসিত মধ্যপ্রদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নরোত্তম মিশ্র আল কায়দার প্রতি পাল্টা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “কায়দে মে রহেগা তো ফ্যায়দে মে রহেগা। কারণ দেশের শাসনভার নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহের হাতে। আল কায়দা-সহ কোনও জঙ্গি গোষ্ঠীর হুমকি বরদাস্ত করা হবে না।”

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তেফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ

অন্য বিষয়গুলি:

PFI
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE