Advertisement
E-Paper

ক্যানসার মোকাবিলায় তৈরি হল বিধি

• কলকাতার ডাক্তারদের চিকিৎসায় সন্তুষ্ট না-হয়ে মাকে ভেলোরে নিয়ে গিয়েছিলেন বাগুইআটির এক ইঞ্জিনিয়ার। সেখানকার ডাক্তার কাগজপত্র দেখে বললেন, ‘‘আগের চিকিৎসাটাই তো ভুল ছিল!’’

সোমা মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৭ মে ২০১৭ ১২:৫০

• কলকাতার ডাক্তারদের চিকিৎসায় সন্তুষ্ট না-হয়ে মাকে ভেলোরে নিয়ে গিয়েছিলেন বাগুইআটির এক ইঞ্জিনিয়ার। সেখানকার ডাক্তার কাগজপত্র দেখে বললেন, ‘‘আগের চিকিৎসাটাই তো ভুল ছিল!’’

• ভেলোরের ডাক্তারদের চিকিৎসায় সন্তুষ্ট হতে না-পেরে বেহালার এক ব্যবসায়ী ভাইকে নিয়ে ছুটেছিলেন মুম্বই। মুম্বইয়ের ডাক্তার রায় দিলেন, ‘‘ভেলোরে যা হয়েছে, তার কোনও দরকারই ছিল না।’’

ইঞ্জিনিয়ারের মা এবং ব্যবসায়ীর ভাই দু’জনেই ক্যানসারে আক্রান্ত। কিন্তু দেশে ক্যানসার চিকিৎসা নিয়ে কোনও সুস্পষ্ট নির্দেশিকা না-থাকায় দাবি আর পাল্টা দাবিতে প্রায়শই আতান্তরে পড়তে হয় রোগীদের। সন্দেহ, অবিশ্বাস, বিভ্রান্তি আর অভিযোগের বহর বাড়তে থাকে। এত দিনে ক্যানসার চিকিৎসার সেই বিশেষ নির্দেশিকা তৈরি হল ভারতে।

কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক সূত্রের খবর, নির্দেশিকাটি তৈরি করেছে মুম্বইয়ের টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতাল। তারা ওই নির্দেশিকা অনুসরণ করবে বলে ইতিমধ্যেই জানিয়েছে দেশের ১০০টি হাসপাতাল। ধাপে ধাপে অন্যান্য হাসপাতালও এর আওতায় চলে আসবে বলে স্বাস্থ্য শিবিরের খবর।

নির্দেশিকার ছ’দফা

• ক্যানসার নির্ণয়ে কী কী পরীক্ষা দরকার

• কোন ধরনের ক্যানসারে কী কেমোথেরাপি প্রয়োজন

• কোন ক্যানসারে আগে অস্ত্রোপচার দরকার

• রেডিওথেরাপি কোন কোন ক্ষেত্রে কার্যকর

• হরমোন থেরাপি কোথায় জরুরি

• রোগ ফিরে এলে কেমন চিকিৎসা চাই

তবে নির্দেশিকাটিকে এখনই বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে না বলে জানান স্বাস্থ্য মন্ত্রকের এক কর্তা। ‘‘এটি মেনে চলার যুক্তি কী, সেটা সকলকেই বুঝিয়ে বলা হচ্ছে। চিকিৎসা প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনা যদি কোনও প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য হয়, তা হলে তারা নিশ্চয়ই এই নির্দেশিকা মেনে চলবে,’’ আশা ওই স্বাস্থ্যকর্তার।

ওই নির্দেশিকাকে সম্পূর্ণ বলতে চাইছেন না টাটা মেমোরিয়ালের কর্তৃপক্ষও। তাঁরা জানাচ্ছেন, এই নির্দেশিকার অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। যেমন, কোনটা ন্যূনতম চিকিৎসা আর কোনটা চূড়ান্ত, সেই বিষয়ে এতে স্পষ্ট কিছু বলা নেই। সময় এবং বিজ্ঞানের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে এই নির্দেশিকাতেও নিয়মিত সংযোজন ও পরিমার্জন হবে।

ইউরোপ, আমেরিকায় ক্যানসার চিকিৎসার বিধি রয়েছে। এ দেশে সেই বিধিই মেনে চলা হয়। কিন্তু নিজের নিজের দেশের পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে আলাদা আলাদা নির্দেশিকা থাকা জরুরি বলে মন্তব্য করে ক্যানসার চিকিৎসক গৌতম মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ক্যানসারের চিকিৎসার সঙ্গে বহু মানুষের অবিশ্বাস, সন্দেহ জড়িয়ে থাকে। খুব সহজেই ডাক্তারদের ভুল বোঝেন তাঁরা। অভিন্ন নির্দেশিকা মেনে চললে অন্তত অনাস্থার জায়গাটা দূর হবে।’’

এ দেশে প্রতি বছর প্রায় ১২ লক্ষ নতুন ক্যানসার রোগীর খোঁজ পাওয়া যায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র মতে, আর তিন বছরের মধ্যেই ভারতের প্রতিটি পরিবারে অন্তত এক জন ক্যানসার রোগীর হদিস মিলবে। এই পরিস্থিতিতে ক্যানসারের যথাযথ চিকিৎসা-নির্দেশিকা জরুরি ছিল বলে মনে করেন ক্যানসার বিশেষজ্ঞেরা।

ক্যানসার চিকিৎসক সৈকত গুপ্ত বলেন, ‘‘এ দেশে মূলত আমেরিকার চিকিৎসা-বিধিটাই মানা হয়। টাটা হাসপাতালের নির্দেশিকার সঙ্গে তার পার্থক্য সামান্যই।’’

প্রশ্ন উঠছে, ক্যানসারের ক্ষেত্রে যে-‘পেশেন্ট স্পেসিফিক’ অর্থাৎ রোগী-নির্ভর চিকিৎসার ধারণা গড়ে উঠছে, এই নির্দেশিকার বিষয়টি তাতে ধাক্কা দেবে না তো? ‘‘তা হওয়ার কথা নয়। কারণ কিছু ক্ষেত্রে প্রয়োজনমতো বদলের সুযোগ থাকবে। স্তন ক্যানসারের ক্ষেত্রে যেমন এখন জিন প্রোফাইল দেখা হয়। নির্দেশিকা মানার পরেও সেটুকু পরিবর্তনের স্বাধীনতা নেওয়াই যাবে,’’ বলছেন সৈকতবাবু।

ক্যানসার চিকিৎসকদের অনেকে এই নির্দেশিকাকে স্বাগত জানাচ্ছেন ঠিকই। তবে এটা কতটা মানা হবে, সেই বিষয়ে সংশয়ও তৈরি হয়েছে। ‘‘দেশের এক-এক অংশে এক-এক ধরনের ক্যানসারের প্রকোপ বেশি। তাই গোটা দেশের জন্য এক রকমের চিকিৎসা-নির্দেশিকা তৈরি করা হলে তাতে কিছু সমস্যা থেকেই যাবে। রোগী অনুযায়ী, পরিস্থিতি অনুযায়ী নির্দেশিকা হলে ভাল,’’ বলেন ক্যানসার চিকিৎসক স্থবির দাশগুপ্ত।

Cancer Government Rule
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy