Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

শাস্তি-ফাঁড়ায় সরকারি কাজ

সচিবেরা ফাইল নিয়ে হাত গুটিয়ে বসে রয়েছেন। সই করতে চাইছেন না। থমকে রয়েছে সরকারের কাজের গতি। টু-জি, কয়লা খনি, কমনওয়েল্‌থ গেমস— পরের পর দুর্নীতি তদন্তের ঠেলায় মনমোহন জমানার শেষ পর্বে এমনই হাল হয়েছিল। যার পোশাকি নাম হয়েছিল ‘পলিসি প্যারালিসিস’ বা নীতিপঙ্গুত্ব।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

প্রেমাংশু চৌধুরী
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৫ মে ২০১৭ ০৩:৫৭
Share: Save:

সচিবেরা ফাইল নিয়ে হাত গুটিয়ে বসে রয়েছেন। সই করতে চাইছেন না। থমকে রয়েছে সরকারের কাজের গতি। টু-জি, কয়লা খনি, কমনওয়েল্‌থ গেমস— পরের পর দুর্নীতি তদন্তের ঠেলায় মনমোহন জমানার শেষ পর্বে এমনই হাল হয়েছিল। যার পোশাকি নাম হয়েছিল ‘পলিসি প্যারালিসিস’ বা নীতিপঙ্গুত্ব।

নরেন্দ্র মোদী সরকারের তিন বছরের মাথায় ফের সেই বিপদ ফিরে আসার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। আশঙ্কার কারণ, কয়লা খনি বণ্টনে বেনিয়মে দোষী সাব্যস্ত করে প্রাক্তন কয়লাসচিব হরিশচন্দ্র গুপ্তের দু’বছর কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছে বিশেষ সিবিআই আদালত। আমলারা এতে বলছেন, অফিসারদের মধ্যে নতুন করে নিষ্ক্রিয়তা দেখা দিতে পারে।

এই বিপদের কথা স্বীকার করছেন মোদী সরকারের মন্ত্রীরাও। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিতিন গডকড়ীর মন্তব্য, ‘‘শুধুমাত্র নিয়মমাফিক কারণে, দুর্নীতি ছাড়াই শাস্তি হলে অফিসারদের মনোবল ভেঙে পড়বে। কেউ কোনও সিদ্ধান্ত নিতে চাইবেন না। দেশের জন্য তা মোটেই ভাল নয়।’’ আইএএস অ্যাসোসিয়েশন ঠিক করেছে, এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদের কাছে দরবার করবেন তাঁরা। অফিসারদের প্রশ্ন, মোদীই বলছেন, ‘আউট অফ দ্য বক্স’ পরিকল্পনা করতে, দ্রুত গতিতে সিদ্ধান্ত নিতে। কিন্তু তাদের সুরক্ষাকবচের জন্য মোদী সরকার কিছুই করেনি। আইএএস অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সঞ্জয় ভুসরেড্ডি বলেন, ‘‘অফিসারেরা সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য। সেখানে বিচারের ভুল হওয়া মানেই তার পিছনে দুর্নীতি বা ষড়যন্ত্র রয়েছে, এমনটা নয়। বৃহত্তর স্বার্থে সরকারকে তা বুঝতে হবে।’’

আরও পড়ুন: মমতার যাত্রা জোড়া লক্ষ্যে

আইএএস অ্যাসোসিয়েশনের এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানিয়েছেন দেশের শীর্ষ আমলা, নীতি আয়োগের সিইও অমিতাভ কান্ত। তাঁর যুক্তি, ‘‘সরকারের কোনও আর্থিক সিদ্ধান্ত ভুল হলে তা ফৌজদারি অপরাধের তালিকায় ফেলা উচিত নয়।’’

হরিশচন্দ্র গুপ্ত আইএএস মহলে তাঁর পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির জন্য পরিচিত। মনমোহন জমানায় কয়লাসচিবের নেতৃত্বে একটি বাছাই কমিটি বিভিন্ন রাজ্যের সুপারিশ ও শিল্প সংস্থাগুলির আবেদন খতিয়ে দেখে খনি বণ্টন করত। হরিশচন্দ্র কয়লাসচিব হিসেবে তাঁর কাজ করেছিলেন। কিন্তু ১০টি মামলায় তাঁর নাম জড়িয়েছে। তাঁর এতগুলি মামলা লড়ার মতো অর্থবল নেই বলে তিনি সবগুলি মামলা একসঙ্গে শুনানিরও আর্জি জানিয়েছিলেন। লোকলজ্জার ভয়ে তিনি জেলেই থাকতে চেয়েছেন।

এ-হেন এক প্রাক্তন অফিসারের কারাদণ্ড নিয়ে গত কয়েক দিন ধরেই তোলপাড় চলছিল আইএএস-দের মধ্যে। আজ প্রাক্তন ক্যাবিনেট সচিব বি কে চতুর্বেদী এ নিয়ে কলম ধরায় তা প্রকাশ্য চেহারা পেয়েছে। চতুর্বেদী লিখেছেন, ‘‘গুপ্ত দেশের অন্যতম সৎ অফিসার বলে পরিচিত। কয়লা খনি বণ্টন নীতিতে ভুল ছিল বলে তিনি দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। তিনি বা অন্য কোনও অফিসার টাকা, সম্পত্তি বা অন্য কোনও সুবিধা পেয়েছেন, এমন অভিযোগ নেই।’’ চতুর্বেদীর হুঁশিয়ারি, ‘‘এর পরে আমলারা নির্ভয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন থাকছে। আর কোনও রক্ষাকবচ থাকবে না সৎ অফিসারদের।’’ চতুর্বেদীর নিবন্ধ তুলে ধরে মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের স্কুল-শিক্ষা সচিব অনিল স্বরূপের মন্তব্য, ‘‘এটাই হল ফলাফল।’’ অনিল নিজেও দীর্ঘদিন কয়লা মন্ত্রকের সচিব ছিলেন।

কী বলছে মোদী সরকার?

প্রধানমন্ত্রী দফতর তথা কর্মীবর্গ দফতরের মন্ত্রী জিতেন্দ্র সিংহ বলেন, ‘‘আমলাদের রক্ষাকবচ দিতে দুর্নীতি দমন আইনে সংশোধনী বিল চার বছর ধরে সংসদে ঝুলে রয়েছে।’’ আমলাদের অভিযোগ, মনমোহন জমনার শেষ পর্বে আনা বিলটি পাশ করাতে মোদী সরকার উদ্যোগী হয়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Government Job
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE