Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
India-China

চিনা বিদেশমন্ত্রীর সঙ্গে জয়শঙ্করের বৈঠকে দিশা মিলল না প্যাংগংয়ে ‘বরফ গলা’র

সীমান্ত ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত চুক্তি মেনে চলার বিষয়ে জয়শঙ্কর এবং ওয়াং সহমত হয়েছেন বলে বিদেশমন্ত্রক সূত্রের খবর। কিন্তু বেজিংয়ের তরফে এ বিষয়ে কোনও বিবৃতি মেলেনি।

মুখোমুখি ভারত ও চিনা সেনা। ৭ সেপ্টেম্বর মুখপারি টপে। ছবি: টুইটার থেকে নেওয়া।

মুখোমুখি ভারত ও চিনা সেনা। ৭ সেপ্টেম্বর মুখপারি টপে। ছবি: টুইটার থেকে নেওয়া।

সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১২:৩৪
Share: Save:

রাশিয়ায় জোড়া বৈঠকের পরেও লাদাখ-পরিস্থিতি বদলের ইঙ্গিত মিলল না। সরকারি সূত্রের খবর, লাদাখের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় (এলএসি) উত্তেজনা কমানোর বিষয়ে নীতিগত ভাবে সম্মত হলেও সেনা প্রত্যাহার নিয়ে সম্মত হয়নি চিন।

সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও)-এর পার্শ্ববৈঠকে বৃহস্পতিবার দু’দফায় আলোচনা করেন ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এবং চিনের বিদেশমন্ত্রী তথা স্টেট কাউন্সিলর ওয়াং ই। প্রথমবার মধ্যাহ্নভোজন পর্বের বৈঠকে রুশ বিদেশমন্ত্রী সের্গেই লাভরভও ছিলেন। সন্ধ্যায় দ্বিতীয় বৈঠকে জয়শঙ্কর এবং ওয়াং লাদাখ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন।

বিদেশ মন্ত্রকের একটি সূত্র জানাচ্ছে, সীমান্তে শান্তি বজায় রাখতে সামরিক ও কূটনৈতিক স্তরে আলোচনায় সায় দিয়েছেন ওয়াং। কিন্তু নিজেদের ‘সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও অখণ্ডতা বজায় রাখা’র কথা বলে বুঝিয়ে দিয়েছেন, আপাতত প্যাংগং হ্রদের উত্তরের ফিঙ্গার এরিয়াগুলি থেকে পিপলস লিবারেশন আর্মির পিছু হটার সম্ভাবনা কার্যত নেই।

এর আগে গত শুক্রবার এসসিও সম্মেলনের ফাঁকে চিনা প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওয়েই ফংহির সঙ্গে পার্শ্ববৈঠক করেছিলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। কিন্তু গত ১৫ জুন গালওয়ানে ভারত ও চিনা ফৌজের রক্তাক্ত সংঘর্ষের পর রাজনৈতিক স্তরের সেই প্রথম বৈঠকে এলএসি নিয়ে কোনও রফাসূত্র মেলেনি। প্যাংগং হ্রদের উত্তর ও দক্ষিণে ‘মুখোমুখি অবস্থান থেকে সেনা পিছনো’ (ডিসএনগেজমেন্ট) এবং ‘সেনা সংখ্যা কমানো’ (ডিএসক্যালেশন) নিয়েও ঐকমত্য হয়নি।

আরও পড়ুন: প্যাংগংয়ের পাড়ে পরিস্থিতি উদ্বেগজনক, বলছে উপগ্রহ ছবি

বৃহস্পতিবার দুই বিদেশমন্ত্রীর বৈঠকে এলএসি-তে উত্তেজনা প্রশমন এবং সীমান্ত সমস্যার দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের জন্য পাঁচ দফা সূত্রে ঐকমত্য হয়েছে বলে সাউথ ব্লক সূত্রের দাবি। এর মধ্যে সীমান্ত ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত আগেকার চুক্তি ও প্রটোকল মেনে চলা, সঙ্ঘাতের সম্ভাবনা রয়েছে এমন পদক্ষেপ এড়ানোর মতো বিষয়গুলি রয়েছে। এলএসি নিয়ে মতবিরোধকে সঙ্ঘাতে গড়াতে না দেওয়া, ধারাবাহিক ভাবে আলোচনা চালিয়ে যাওয়া এবং উত্তেজনা প্রশমনে আস্থাবর্ধক কর্মসূচি নেওয়ার মতো বিষয়গুলিও পাঁচ দফা সূত্রে রয়েছে বলে বিদেশমন্ত্রকের বিবৃতি জানিয়েছে। যদিও চিনা বিদেশমন্ত্রকের তরফে এ বিষয়ে কোনও বিবৃতি দেওয়া হয়নি। যা থেকে মনে হচ্ছে,বরফ আদৌ গলেনি। সে ভাবে কোনও দিশাও মেলেনি।

২৯ অগস্ট রাতে প্যাংগং হ্রদের দক্ষিণে চিনা বাহিনীর অনুপ্রবেশের চেষ্টা রুখে দেয় ভারতীয় সেনা। থাকুং সেনাঘাঁটির অদূরের কালা টপ থেকে রেচিন লা পর্যন্ত কয়েক কিলোমিটার দীর্ঘ এলাকার উঁচু পাহাড়গুলিতে এখন ভারতীয় ফৌজের ঘাঁটি। এই পরিস্থিতিতে চিনা ফৌজ ৭ সেপ্টেম্বর রাতে ব্যাংহং হুনান এলাকায় এলএসি পেরিয়ে শেনপাও হিল ও মুখপারি টপে ভারতীয় সেনার ‘ফরওয়ার্ড পোস্ট’ দখলের চেষ্টা করে। তখন তারা শূন্যে গুলি ছোড়ে বলেও অভিযোগ। যদিও ১৯৯৬ সালের দ্বিপাক্ষিক সীমান্ত চুক্তি অনুযায়ী এলএসি-তে আগ্নেয়াস্ত্র ও বিস্ফোরক ব্যবহার না করার বিষয়ে দু’পক্ষই প্রতিশ্রতিবদ্ধ। বিদেশমন্ত্রকের এক সূত্র জানাচ্ছে, ওয়াংয়ের সঙ্গে বৈঠকে বিষয়টি তুলে চিনা ফৌজের বিরুদ্ধে চুক্তিভঙ্গের অভিযোগ করেন জয়শঙ্কর। কিন্তু চিনা বিদেশমন্ত্রী সেই অভিযোগ মানতে চাননি।

আরও পড়ুন: মস্কোয় দ্বিপাক্ষিক বৈঠক ।। আগে সেনা সরাক চিন: জয়শঙ্কর

প্রসঙ্গত, এলএসি-তে বিপুল পরিমাণ সেনা সমাবেশও ১৯৯৩ এবং ১৯৯৬ সালের সীমান্ত চুক্তির পরিপন্থী। কিন্তু প্যাংগং লেকের দক্ষিণে টাইপ-১৫ হাল্কা ট্যাঙ্ক, সাঁজোয়া গাড়ি এমনকি, গোলন্দাজ বাহিনীও মোতায়েন করেছে চিন। এই পদক্ষেপ সংক্রান্ত কোনও সরকারি ব্যাখ্যাও নয়াদিল্লিকে দেওয়া হয়নি। পাল্টা ওই এলাকা জুড়ে টি-৯০ ট্যাঙ্ক-সহ ভারতীয় বাহিনীর উপস্থিতিও বাড়ানো হয়েছে।

গত ১৫ জুন গালওয়ানের পেট্রোলিং পয়েন্ট-১৪-য় সংঘর্ষের পর কোর কমান্ডার স্তরের বৈঠকের পাশাপাশি জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল ভিডিয়ো কনফারেন্স করেছিলেন ওয়াংয়ের সঙ্গে। এর পরে গালওয়ানের পাশাপাশি পেট্রোলিং পয়েন্ট-১৫ (হট স্প্রিং) এবং পেট্রোলিং পয়েন্ট-১৭ (গোগরা) থেকে কিছুটা পিছনে সরেছিল চিনা ফৌজ। উত্তেজনা কমাতে তৈরি হয়েছিল ‘বাফার জোন’। কিন্তু আপাতত প্যাংগং এলাকায় পরিস্থিতির উন্নতির সম্ভাবনা নেই বলেই অনুমান নয়াদিল্লির।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE